ঢাকা ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিশুর সুন্দর শৈশব নিশ্চিত করতেই হবে

শিশুর সুন্দর শৈশব নিশ্চিত করতেই হবে

জলবায়ু ঝুঁকি ও পরিবেশগত সংকটের কারণে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা। ফলে এদেশের শিশুদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে। যথাসময়ে দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া না গেলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্ক বার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ জরুরি শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং খরার মতো জলবায়ুজনিত বৈরী আবহাওয়ার কারণে ৭৭টি দেশের অন্তত ২৪ কোটি ৭০ লাখ শিশুর শিক্ষাকার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ যার অন্যতম। এদেশে ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশুর শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে বলে তারা বলছে। ২৪ জানুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। ‘লার্নিং ইন্টারাপটেড : গ্লোবাল স্ন্যাপশট অব ক্লাইমেট-রিলেটেড স্কুল ডিসরাপশন ইন ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংবাদটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিক্ষা স্তরের সব পক্ষের সমন্বয় একান্ত প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল-মে মাসে তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশের শিশুরা পানিশূন্যতা ও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে পড়েছিল। ঝুঁকি এড়াতে দেশব্যাপী দুই সপ্তাহ স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এবং জুনের বন্যা শিশুদের শিক্ষাকার্যক্রম আরো বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। বন্যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে সিলেট জেলায়। তীব্র বন্যায় সেখানে ব্যাপকভাবে অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ছয় লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী শিক্ষাক্রম থেকে ঝরে পড়ে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের হিসাবে, গত বছর জলবায়ুজনিত কারণে সিলেট অঞ্চলে আট সপ্তাহ, খুলনা, চট্টগ্রাম ও রংপুর জেলায় শিশুরা ছয় সপ্তাহ স্কুলের শিক্ষাকার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে শিখন দারিদ্র্য বাড়ছে। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অর্ধেকই ক্লাস অনুযায়ী তাদের কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। ইউনিসেফের মতে, শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার পাশাপাশি কন্যাশিশুদের বাল্যবিবাহের ঝুঁকিও বাড়ছে। উল্লেখ্য, বাল্যবিবাহে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এসব পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শিশুদের সুরক্ষায় শিক্ষা খাতে জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো তৈরি এবং শিশুকেন্দ্রিক নীতি গ্রহণ জরুরি। ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্সও স্বীকার করেছেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশের শিশুরা। এতে ক্ষতিকর প্রভাব বাড়ছে শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে জরুরি পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন তিনি। আমরাও মনে করি, শিশুদের সুরক্ষার জন্য স্কুল ও শিক্ষাব্যবস্থায় দ্রুত শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে।

প্রতিবছরই প্রাকৃতিক এই সংকট শিশুদের শিক্ষায় সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলে। তাই চলতি শিক্ষাবর্ষে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এমনিতেই নতুন শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রমে ফিরছে প্রাথমিক শিক্ষা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার পাঠ্যবইয়েও অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। কিন্তু বহু শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যপুস্তক এখনো পৌঁছেনি। এই বাস্তবতা সামনে রেখে শিক্ষার্থীরা কতটা এগিয়ে যেতে পারবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন পাঁচ লাখের বেশি। আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। তাই বিদ্যালয়ে শিশুদের উপস্থিতি ও শিক্ষাক্রমের মানের উন্নতি ঘটাতে হবে। এ কথা সত্য যে, বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী সব শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক হিসেবে গণ্য। পাশাপাশি ইউনিসেফসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী শিশুশিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। উদ্দেশ্য, কোনো শিশুই যেন শিক্ষাক্রমের বাইরে না থাকে। তাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে চিহ্নিত সমস্যা এবং তাদের পরামর্শকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানীসহ শিশু শিক্ষায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক পরামর্শ বোর্ড গঠন করা যেতে পারে। শিখন পদ্ধতির অনিবার্য অংশ দক্ষ শিক্ষক, তাদের ক্লাসে উপস্থিতি এবং শ্রেণিকক্ষ সংকটের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। শিশু শিক্ষা খাতের সব প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়িত না হলে, শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। শিশুবান্ধব শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি। সুন্দর শৈশব শিশুর অধিকার। শিশুর সুন্দর শৈশব গড়তে দরকার সংকটমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা যাতে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হয়, সেজন্য সুনিদিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের গত্যন্তর নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত