ঢাকা ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ক্ষমাই শক্তির প্রকৃত প্রকাশ!

রাজু আহমেদ
ক্ষমাই শক্তির প্রকৃত প্রকাশ!

ক্ষমার অযোগ্য কাউকে ক্ষমা করে দিয়ে চুপ করে থাকলে সেটা সর্বোত্তম প্রতিশোধ।

যে অন্যায় করেছে তাকে ক্ষমা করতে কেবল মহোত্তমগণ পারে। ভুলের প্রতিশোধ ভুল দিয়ে নিলে, দীর্ঘশ্বাসে অভিশাপ দিলে অপরাধীর শাস্তি হবে বটে কিন্তু ভুক্তভোগীর ফায়দা হবে না মোটে। অথচ মাফ করে দিলে যে মানসিক শান্তি হবে, পাপ কাটা যাবে এবং আমলনামায় পুণ্য যোগ হবে- তা অসামান্য। কষ্টের বদলে কষ্ট ফেরত দিলে তাতে হিংস্রতা প্রকাশ পায়। মন খারাপের বদলে মন খারাপ ফিরিয়ে দিলে তাতে জেদ প্রকাশ পায়। কিন্তু কারো ভুলের বিনিময়ে ফুল উপহার দিলে তাতে আত্মার মাহাত্ম্যর বিকাশ ঘটে।

ভুলের শাস্তি হোক এবং সেটা নিঃসন্দেহে ক্ষমার মতো কঠিন কিছু দিয়ে।

যাদের অন্যায়-অপরাধে আপনার ক্ষতি হয়েছে, যারা কাঁদিয়েছে কিংবা যাদের কথা ঘুম কেড়ে নিয়েছে- তাদের ক্ষমা করে গন্তব্য পাল্টে নিন। যেখানে ব্যথার উৎস, যারা বিশ্বাস ভেঙে উপহার দেয় কষ্ট কিংবা যারা মন খারাপের কারণ হয়- তাদের বারণ না করেও এড়িয়ে চলা যায়। হাসতে হাসতে বলা যায় ভুল মানুষের কীর্তিকলাপের কথা। কেউ যদি জীবদ্দশায় মরণ যন্ত্রণাও দেয় তাকেও ক্ষমা করে দেয়াই শ্রেয়। শুধু মনের ঘরে আর নতুন করে বিশ্বাসঘাতককে জায়গা না দিলে কষ্ট বাড়বে না। জীবনে দুঃখ আসবে, ভুল হবে। এন্ট্রি নেবে মুখোশধারী মন্দ মানুষ! একই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি দ্বিতীয়বার না ঘটলে তাদের জীবন কোথাও ঠেকে থাকে না। সুখ সর্বদাই আপেক্ষিক। মানুষের কর্ম ও আচরণ, কথা ও বিচরণ এবং শ্রম ও জাগরণ ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। কারো দেয়া ব্যথা, আর কারো খোঁচা মনের মধ্যে পুষে রাখলে ব্যথার স্রোত দ্বিগুণ হবে।

প্রতিশোধের স্পৃহা ভালো মানুষকেও মন্দের প্রতিযোগিতায় নামায়। যত পারা যায় এড়িয়ে চলা, যত পারা যায় ভুলে থাকা এবং সার্বক্ষণিক ক্ষমা করার মানসিকতা রাখা- ভালো থাকাতে ফুয়েল জোগাবে।

অভিযোগের পরিমাণ যত কমবে, ভুল ধরার প্রবণতা যত নিচে নামবে জীবনকে উপভোগ করা তত সহজ হবে। কবির মতো বলতে হবে, ‘যে মোরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ, আমি দেই তারে বুকভরা গান; কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর, আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।’ জীবনে নিজেকে ভালো রাখার শিক্ষা অর্জন করা খুব জরুরি। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও সর্বোচ্চ সুখে থাকার জন্য অল্পে সন্তুষ্টির অভ্যাস গড়তে হবে। নিজের সাথে গল্প বলতে হবে।

আমাকে কে কেমন মূল্যায়ন করেছে, কে করেছে উপেক্ষা- সারাক্ষণ যদি এসব মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায় তবে ভালো সময়কে হত্যা করা হবে। ধরে নিতে হবে, মানুষ প্রয়োজনে কাছে আসবে এবং প্রয়োজন শেষে ভুলে যাবে। জীবনে কারো ওপরেই যুক্তিহীন কিংবা বাস্তবতা বিবর্জিত আশা পোষণ করা যাবে না। যখন যে বাস্তবতা সেটাকে মোকাবিলা করেই দূরদৃষ্টি রাখতে হবে। এখানেই থেমে যাওয়া নয়; যেতে হবে আরো বহুদূর।

চলার পথে কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা হবে। কেউ আঘাত দেবে, কেউ দাগা দেবে কিংবা কেউ বাড়াবে ভরসার হাত। ছায়া হয়ে থেকে যাবে সঙ্গে। জীবনের কোনো এক পরতে যারা সামান্য উপকার করবে তাদেরকেও যাতে কখনোই ভুলে না যাই। কৃতজ্ঞতাবোধের চাদর শরীর থেকে যাতে না নামে। পাঁচজনের থেকে পাওয়া আঘাত পঁচিশজনের ভালোবাসাকে যাতে ম্লান না করে। ক্ষমায় জীবনের রঙ গন্ধ মধুর হয়ে ওঠে। জীবন যখন যা শেখাবে তা হবে আগামীর প্রেরণা। প্রেষণাতে যাতে বড় হওয়ার, মানুষ হওয়ার বাসনা থাকে। আমাদের আশপাশে যারা বড় তারা কারো ছোট কোনো ভুল মনে রাখেনি, তবে নিজেদের ছোট ছোট ভুল থেকেও শিখেছে।

‘সরি’ বলেছে অকাতরে। বিনীত থেকে মাথা ভরে। মানুষকে ভালোবেসেছে উদার হয়। জীবনটা সুন্দর সকালের মতো, পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজের মতো এবং শান্ত নদীর সুরেলা মিহি মিহি ঢেউয়ের মতো। যেখানে অতীতের ক্ষত, ভুলের আবর্জনা কিংবা প্রতিশোধের কামনাকে জায়গা দেয়া ঠিক না।

আঘাত পেয়েও যারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে তারা জীবনের পাঠশালা থেকে শিখে শিখে পণ্ডিত হয়। সাজানো বিকালের সোনা রোদ সবসময় নাও পাওয়া যেতে পারে। কখনো কখনো মেঘ, ঝঞ্ঝায় জীবন এলোমেলো হতে পারে। তবে দক্ষ নাবিক শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়ে না। যারা লড়ে যায় তারা জিতে যায়। জেদ ছাড়াও জয় হয় যদি উদ্দেশ্য সৎ হয়। ক্ষমতার মধ্যে নয় বরং ক্ষমার মাঝেই খুঁজে পাই যেন জীবনের সরল-সফেদ রূপ। এমন চিঠির বার্তা বয়ে মানুষকে মহৎ করুক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত