ঢাকা ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কাগজের কৃত্রিম সংকট

শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
কাগজের কৃত্রিম সংকট

পতিত স্বৈরাচারের ১৫ বছরের শাসনকালে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের সর্বতোমুখী ষড়যন্ত্র চালানো হয়েছে। একের পর এক শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন, পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, উদ্ভট শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রবর্তন, পাঠ্যক্রমে জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিবিরোধী এমনকি ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থি বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্তিসহ নানাভাবে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে এলোমেলো ও বিপর্যস্ত করা হয়েছে। স্বৈরাচারের পতনের পরও সে ধারার অবসান ঘটেনি বলে মনে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পাঠদান কার্যক্রমে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কাগজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা তেমনই একটি চক্রান্ত হতে পারে।

নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছাতে পারেনি সরকার। এর পেছনে অনেক কারণ আছে। আগের সরকার ভারত থেকে বেশি দামে বই ছাপিয়ে আনত। এবার দেশের ছাপাখানায় বই ছাপা হচ্ছে। অনেক পাঠ্যবই সংস্কারেও কিছু সময় লেগেছে। এর মধ্যে তৈরি করা হয়েছে বই ছাপার কাগজের কৃত্রিম সংকট। একশ্রেণির ব্যবসায়ী কোনো কারণ ছাড়াই কাগজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আমদানি করা কাগজ অবৈধভাবে মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। যখন বই ছাপার কাজ পুরোদমে চলছে ঠিক তখনই এ সংকট তৈরি করা হলো। ফলে ছাপার কাজ গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে পাঠ্যবই ছাপানোর প্রতি টন কাগজের দাম ছিল এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। সেটি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে এক লাখ ৩৫ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এভাবে তারা অতিরিক্ত ৩৪৫ কোটি টাকা কেবল হাতিয়ে নিচ্ছে না, দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটিয়ে শুধু প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

বছরের প্রথম মাস চলে গেলেও স্কুলগুলোতে ক্লাস শুরু হয়নি। দিনে একটি বা দুটি দায়সারা ক্লাস হচ্ছে। বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় আগ্রহ পাচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। শহরের অনেক স্কুলে মাসিক ও ত্রৈমাসিক পরীক্ষার চাপ থাকে। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট টিউটর ও কোচিং সেন্টারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

এ সংকট অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র হতে পারে বলেও অনেকের ধারণা। এখন পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক বই ছাপানো বাকি। আগামী মার্চের মধ্যেও নতুন বই সরবরাহ করা যাবে কি না সংশয় আছে। যদিও সরকার আশা করছে, ফেব্রুয়ারির মধ্যে বই দেয়া যাবে। ছাপাখানার মালিকরা কাগজের মিল মালিকদের দুষ্টচক্র ভেঙে দেয়া এবং এখনই কাগজ আমদানির উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

নতুন বছরের বই যথাসময়ে দিতে হবে- এটি সবার জানা ছিল। কিন্তু সরকার দিতে পারেনি। এর অর্থ কোটি কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিঘ্নিত হওয়া, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত