উপকূলীয় বেশিরভাগ নারী ও পুরুষ মৎস্য চাষ বা আহরণের সাথে জড়িত। আবার অনেক জেলে পরিবারে নারী-পুরুষ জাল কিংবা মৎস্য আহরণে ব্যবহৃত নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। মাছের প্রজনন থেকে শুরু করে মাছ চাষের বিভিন্ন ধাপ, মাছ আহরণ, বাজারজাত, রপ্তানিকরণ এরাই পরিচালনা করে দেশের ৫০টি আমিষের চাহিদা পূরণের সাথে সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তাই শাব্দিকভাবে এখন জেলে শব্দের ব্যবহার কমে ‘মৎস্য চাষি’ বা ‘মাছ চাষি’ শব্দটি’ই বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলস্বরুপ ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের মানুষ বছরে মাথাপিছু সাড়ে সাত কেজি মাছ খেত যা এখন মৎস্যজীবীদের কল্যাণে বেড়ে ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থার তথ্য অনুসারে, ২০১২ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ৩৯০ লাখ জেলে মিলে ২০০,০০০ টনেরও বেশি মাছ উৎপাদন করেছিল। প্রতি দুই বছর পরপর প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (FAO)-এর ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে ছিল (প্রথম আলো, ৯ জুন- ২০২৪)। একই প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড স্টেট অব ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২৪’ অনুযায়ী পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ে চাষ মিলিয়ে মাছের উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থান থেকে দুই ধাপ পিছিয়ে পঞ্চম অবস্থানে নেমে এসেছে। আমরা এখন অ্যাকোয়াকালচারে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগে অবদান রাখি। রপ্তানি বাজারে নির্দিষ্ট বিনিয়োগ পরিকল্পনা করলে একে ২ দশমিক ৫ বা ৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে মাছের উৎপাদন যেমন বাড়ছে, তেমনি মোট মাছের মজুতও কমে যাচ্ছে।
দুই বছর আগে এফএও উল্লেখ করেছিল, বিশ্বে প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় পর্যাপ্ত মাছ নেই। যেমন ১৯৯০ সালে মজুত ছিল ৯০ শতাংশ, ২০১৮ সালে সেটা কমে ৬৫ শতাংশে এসে ঠেকেছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।
নদীর নাব্যতা হ্রাস, দূষণ, হাওর-বাঁওড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোর সংকোচন, দখল, অপোন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মৎস্য সম্পদের হুমকি বাড়ছে। একই সঙ্গে মাছ ধরা এবং চাষের সঙ্গে জড়িত বিপুল পেশাজীবীদের অজ্ঞতা ও যথাযথ পেশাগত অভিজ্ঞতার অভাবে আর্থিক ও পেশাগত নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ। অধিকিন্তু, আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, মাছ চাষ প্রশিক্ষণে দুর্বলতা এবং বাজারমূল্য সম্পর্কে অবগত না থাকা ইত্যাদি ক্ষেত্রে মৎস্যচাষিরা এখনও যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারে অপারগ। যদিও উৎপাদিত মাছগুলোর খুব কম সংখ্যক বৈদেশিক বাজারে যায়, তথাপি মধ্যস্বত্বভোগীর কারনে নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় মৎসজীবীরা। এরসাথে গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণের ঝুঁকি তো জেলেদের নিত্যসঙ্গী। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিটাইম রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিমরাড) গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছ আছে, যার মধ্যে মাত্র ৩৩-৪০ প্রজাতির মাছ বাণ্যিজিকভাবে (কমার্শিয়ালী) ধরা হয়। অথচ সমুদ্র থেকে প্রায় ৮০ লাখ টন মাছ আহরণ সম্ভব। ২০১২ সালে মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার টেরিটরিয়াল সমুদ্র এলাকায় নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের। আর এরই মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সুনীল অর্থনীতির দ্বার উন্মোচিত হয় বাংলাদেশের। ওই রায় অনুযায়ী, ভূমি থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপরও সার্বভৌম অধিকার বাংলাদেশের।
আমাদের এই জায়গাগুলোকে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। রপ্তানির জন্য সনদ, গুণগত মান, খাদ্য ও মাছের মান নিশ্চিত ও মাছের আকার বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিদিন একজন মানুষের জন্য ৬৩ গ্রাম মাছের লক্ষ্য রাখা হয়েছিল, তা এখন ৬৫ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। এখন নতুন করে ৭০ গ্রামের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। মাথাপিছু ৭০ গ্রাম মাছের প্রয়োজন মেটাতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের মৎস আহরণ ও উৎপাদন হ্রাসে বেশ কিছু সমস্যাকে চিহ্নিত করা যায়। সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ক্ষুদ্রঋণ ও অর্থায়ন লাভের জটিলতা, সংশ্লিষ্ট পেশায় নারীশ্রমকে স্বীকৃতি না দেয়া, তথ্য প্রাপ্তিতে ও সঠিক প্রচারণা ঘাটতি, মহাজনি প্রথার উচ্চ সুদহার ও শোষণ, সরকারি ও বেসরকারি গাইডলাইনের অভাব, বাজারজাত ও প্রক্রিয়করণে সীমাবদ্ধতা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত যোগান, মৎস্য খাদ্যের নিম্নমান ও মূল্যবৃদ্ধি, নিয়ন্ত্রণহীন রাসায়নিক ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ, পুকুরের পানির গুণাগুণ রক্ষায় চাষিদের অসচেতনতা, অবরোধকালীন বেকারত্ব ইত্যাদি।
এছাড়া রয়েছে অধিকাংশ চাষাবাদের মতো উপকূলীয় মৎস্যচাষের পরিবেশগত প্রভাবের মাত্রা ও খামারের আকার, চাষকৃত প্রজাতি, স্টক ঘনত্ব, প্রকল্প অঞ্চলের হাইড্রোগ্রাফি এবং মৎস্য পদ্ধতি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মৎস্য খাতসংশ্লিষ্ট পণ্য রপ্তানিতে জোর দেয়া হলেও কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় মাঠপর্যায়ে সঠিক ও সময় উপযোগী তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। তথ্যের অপর্যাপ্ততার কারণে ক্ষুদ্র মাছচাষি ও গভীর সমুূদ্রের জেলেরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হন, পিছিয়ে যান। এবারের জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ৩.৫৭ শতাংশ হলেও বিনিয়োগ ছিলো ০.১ শতাংশ-এর নিচে। সহজে ঋণপ্রাপ্তি ও ঋণ নেয়ার পর কীভাবে তা ব্যবহার করতে হবে, এ বিষয়ে গাইডলাইন না থাকায় ঋণের কার্যকারিতা যেমন বৃদ্ধি পায় না, তেমনি সহজ প্রাপ্যতার কারণে মহাজনের নিকট থেকে চড়া সুদে দাদন (এক প্রকার ঋণ) নিতে বাধ্য হয় মৎস্যজীবীরা। অথচ সরকারি-বেসরকারি সুবিধা পেলে তারাও উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন নৌযান নির্মাণ করতে পারতেন। বাংলাদেশ এখনো সাদা মাছ রপ্তানির আওতায় না আসায় ৯৭ শতাংশ মাছ স্থানীয়ভাবে বাজারজাত হচ্ছে। রপ্তানি বাজারের চাহিদাগুলো পূর্ণ করার চেষ্টায় ইন-পন্ড রেসওয়ে সিস্টেম (আইপিআরএস) নামক একটি ব্যয়বহুল প্রযুক্তি রয়েছে যা রপ্তানিমুখী বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে; কিন্তু যথাযথ বিনিয়োগের ঘাটতি এই সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রধান বাধা।
সম্প্রতি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এক গবেষণায় মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা যায়, মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানের তুলনায় প্রকৃত মাছের উৎপাদন প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। মৎস্য চাষে স্থানীয় ও আমদানিকৃত নিম্নমানের খাদ্যের ব্যবহার, নিয়ন্ত্রণহীন রাসায়নিক ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ, পুকুরের পানির গুণাগুণ রক্ষায় চাষিদের অসচেতনতা ইত্যাদি কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল স্রোতে অনুপ্রবেশ সম্ভব হচ্ছে না। মাছ চাষের জন্য যে মানের খাবার কিংবা ওষুধের প্রয়োজন হয়, সে সম্পর্কিত পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় প্রায়ই লোকসানের মুখোমুখি হতে হয় মৎস্যচাষিকে। দেশের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ নারী হলেও তাদের কাজের স্বীকৃতি নেই। তথ্য ঘাটতির কারণে উপকূলে যেসব জেলের কার্ড রয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ নারী, বাকি ৯৬ শতাংশ কার্ডধারী জেলে পুরুষ। যদিও পুরুষরা মাছ ধরতে যান, বাকি সব কাজের বড় অংশ যেমন মাছ কাটা, বাছাই করা, শুঁটকি করা ইত্যাদি কাজগুলো হয় নারীর হাত দিয়ে যা প্রচার হয় খুবই কম। এক্ষেত্রে কাটা ও বাছাইকরণকে কতটুকু মৎস্যজীবী পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়, তা নিয়ে নারীরা বিভ্রান্তিতে ভোগেন। প্রয়োজনীয় জ্ঞান না থাকায় উপকূলীয় অঞ্চলের নারী মৎসজীবীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তারা যখন মৎস্য খাতে বিনিয়োগ করতে যান, তখন ঋণ প্রাপ্তির অপ্রতুলতা ও মানষিক সক্ষমতা একটি বড় সমস্যা। তাছাড়া যারা কার্ড পাননি, তথ্য না থাকায় বেশির ভাগ নারীই জানেই না কীভাবে জেলে কার্ডের জন্য আবেদন করতে হয়।
৯৩ শতাংশ নারী জেলে স্বাস্থ্যগতভাবে অসুস্থ থাকেন এবং যথাযথ চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার উপায় জানে না। উপকূল অঞ্চলে পানির লবণাক্ততার কারণে প্রায়ই তারা বিভিন্ন অসুস্থতায় ভোগেন। ৪০ শতাংশ বিধবা বা একক আয়কর্তা নারীদের প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয় মৎস্য আহরণ করতে। বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ আহরণকারীদের প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নিচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর আহরণকারীরা। গভীর সমুদ্রে গমণকারী জেলেদের থেকে জানা যায় পাশের দেশ ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা শক্তিশালী যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করায় মৎস শিকারে তারা কম ঝুঁকিতে থাকে। ঝুঁকিহ্রাসে তাদের দাপটে বাংলাদেশি জেলেদের টিকে থাকা কষ্টকর। ওই দেশগুলোর আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন নৌযানগুলো বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানায় ঢুকে মাছ আহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব বহিরাগতের কাছে বাংলাদেশের জেলেরা অসহায় হয়ে পড়েছে। মৎস্য খাতে অর্থায়ন তিনটি উৎস থেকে করা যেতে পারে।
সেগুলো হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, এনজিও ও অনানুষ্ঠানিক উৎস। মাছের খাদ্য বিক্রেতারাও এখন ঋণ দিচ্ছেন। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ও সংস্কৃতি মৎস্য-ব্যবসাবান্ধব নয়। সার্বিকভাবে তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিল্পকারখানায় ঋণ দিয়ে থাকে। আমি তাদের দোষারোপ করছি না। তারা কেবল মাছ চাষ নয়, কৃষি খাতেই ঋণ কম দেয়। তারা মৎস্য ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ খাত হিসেবে মনে করে। যেহেতু তারা সঞ্চয়কারীদের অর্থ ঋণ হিসেবে দেয়, তাই তারা জামানত চাইবে, এটা অস্বাভাবিক নয়। আমরা এখন খাদ্য নিরাপত্তার পরিবর্তে পুষ্টি নিরাপত্তার কথা বলি। মাছ এ ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়টি সরকারকে ভাবতে পারে। আমাদের দেশে অনেক ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে। এরাও শিল্পক্ষেত্রে কাজ করে। মাছ চাষের জন্য কিছু ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ দেয়া যেতে পারে। মৎস্য খাতে বিনিয়োগকারীরা মাছের সঠিক দাম পান না, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বাজারে প্রবেশাধিকার না থাকা ও মধ্যস্বত্বভোগী।
আমাদেরও থাইল্যান্ডের মতো কৃত্রিম খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। সমুদ্র বিজয়ের পর আমরা যেববড় একটি এলাকার মালিকানা পেয়েছি তার সামুদ্রিক সম্পদের জরিপ আমরা করতে পারি। এ ছাড়া এসব এলাকায় মাছ ধরার নৌকাগুলোতে বিনিয়োগ করা যায়। আমাদের উৎপাদিত মাছের সিংহভাগ খাওয়া হয়। ফলে রপ্তানির দিকে তেমন মনোযোগ দেয়া হয়নি। যারা মাছ প্রক্রিয়াজাত করে, তাদের বিনিয়োগ করা যায়। অন্য যারা এটি নিয়ে কাজ করেন, আমরা তাদের সঙ্গে পার্টনার হতে পারি। এ জন্য প্রয়োজন আর্থিক জ্ঞান ও ডিজিটাল শিক্ষা। যদিও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ শক্তিশালীকরণ করার জন্য উপকূলীয় অঞ্চল নীতির ধারা ৫.৫.২ এ সমন্বিত উপকূলীয় সম্পদ ডেটাবেস (আইসিআরডি) স্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ওয়ারপো ডিসেম্বর ২০০৫ সালে সমন্বিত উপকূলীয় সম্পদ ডেটাবেস (আইসিআরডি) উন্নয়ন-স্থাপন কাজসম্পন্ন করেছে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ ও সংগৃহীত ডেটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ ২০২১-২২ নীতিমালায় বলা আছে, আলাদাভাবে মৎস্য খাতে ঋণ দিতে হবে। কেবল সোনালী ব্যাংক নয়, সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের বিষয়ে ওয়াকিবহাল। আমরা মৎস ব্যবসায়ীদের ঋণের বিষয়ে উৎসাহিত করে উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের ট্রলার, নৌকা ও জাল কিনতে উৎসাহিত করতে পারি। বাড়ির পাশে হাজা-মজা পুকুরে মাছ চাষে ঋণ দিয়ে দেশের অনেক তরুণকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারি। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে তথাপি এসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভারত ও চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে মাছ চাষ ও উপকূলীয় মৎস্যচাষিদের উন্নতির জন্য সরকারি এবং বেসরকারিভাবে এক্ষনি আরো মনযোগী হওয়া প্রয়োজন। গবেষণার মাধ্যমে মৎসজীবীদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের মাধ্যমে সমুদ্র অর্থনীতির দিকে নজর দেয়াটা খুব জরুরি। একইসাথে উপকূলীয় জেলে সমাজকে আধুনিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত মৎসচাষ ও আহরণে উদ্ভুদ্ধ করে কীভাবে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করা যায়, এক্ষনি তার অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক : শিক্ষক ও গবেষক