ঢাকা ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সততার দীপশিখা ন্যায়ের পথে অপরাজেয়!

রাজু আহমেদ
সততার দীপশিখা ন্যায়ের পথে অপরাজেয়!

সাদাকে সরাসরি সাদা এবং কালোকে ঘৃণাভরে কালো বলা মানুষ কিংবা ন্যায়বোধে বলীয়ান যারা তারা কাউকে ভয় পেয়ে দায়িত্ব পালন থেকে কখনোই বিরত থাকে না। সত্য কথা বলার জন্য আঘাত আসবে জেনেশুনেই নীতিবাগীশ অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়। সমাজে সৎ মানুষের শত্রুর অভাব থাকবে না জেনেও তারা মিথ্যা-ভণ্ডামির সাথে আঁতাত করে না। যে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ে তাকে চেপে ধরা হবে, ভয় দেখানো হবে কিংবা লোভ দেখানো হবে। কিন্তু যিনি চিন্তা ও কর্মে সৎ তিনি সবকিছু উপেক্ষা করে, আদর্শ প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করবেন। যারা বীর তারা ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না। সমাজে এমন কিছু শুদ্ধ মানুষ আছে বলেই সমাজ এখনো মানুষের বাসযোগ্য। এখনো মানুষ আশায় বাঁচতে পারে। যারা সৎ তাদের সুঘ্রাণে ফেরেশতারা মজলুমের পক্ষে রবের কাছে বিজয় কামনা করে।

ন্যায়ের পক্ষে থাকা মানুষের দুঃখ অনেক। যারা মানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বলে, যারা গোষ্ঠীর ন্যায্য হিস্যা চায় কিংবা যাদের উদ্দেশ্য মানবতার কল্যাণ সাধন- তাদের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ। তবে তাতে ভয় পেয়ে বিবেকবানের ন্যায়দণ্ড কম্পিত হয় না। যারা স্বার্থে উর্ধ্বে অবস্থান করতে পারে, যাদের জীবনে ধর্মচর্চার উপস্থিতি আছে এবং যারা মূল্যবোধ লালন করে তারা যেকোনো পরিবেশে সত্যের পক্ষে লড়বে। দুনিয়ায় মজলুমদের পক্ষে নীরব জনমত থাকে। দোয়ার যে শাশ্বত শক্তি তা ন্যায়পরায়ণের স্বল্পতার সংখ্যাকে অসামান্য শক্তিমান করে তোলে। দুনিয়ার সর্বত্র দুষ্টরা জমাটবদ্ধ। অন্যায়ের প্রতিবাদে যে অল্পসংখ্যক কণ্ঠস্বর লড়ে যায়, যারা বলে যায় ন্যায্যতার কথা এবং যারা জীবন বিলিয়ে দেয় অধিকার প্রতিষ্ঠায়- ইতিহাস তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখে। সম্মান কারো পদণ্ডপদবি কিংবা ক্ষমতায় থাকে না। সম্মান থেকে মনুষ্যত্বে।

অনেক বড় বড় মানুষ ক্ষুদ্র স্বার্থের কাছে বিক্রি হয়ে যায়। কেউ বলি হয়ে যায় ভয়ের পায়ের কাছে। অথচ ক্ষুদিরামের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মানুষ সত্যের পক্ষে লড়ে দুনিয়া কাঁপানো ইতিহাসের অংশ হয়ে যায়। যাদের আদর্শ বিক্রি হয় না, যারা অবৈধ সুবিধার কাছে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেয় না কিংবা শত প্রতিকূলতার মাঝে থেকেও যারা সত্য বলতে পিছপা হয় না- তারা পদের বাইরে থেকেও মানুষের হৃদয়ের মধ্যে থাকে। মরার পরেও মানুষের স্মৃতিতে বাঁচে। জুলুমকারীদের জন্য ঘৃণা বরাদ্দ হয় কিন্তু যারা থাকে মজলুমের পক্ষে, নিঃস্বার্থ চিত্তে সমর্থন করে সত্যকে তারা মানুষের মনে দেবতার আসন পায়। শাসন দিয়ে মন পাওয়া যায় না কিন্তু ভালোবেসে রাজ্যও জয় করা যায়। সত্যকে দমানোর জন্য, ন্যায়কে থামানোর জন্য যুগে যুগে দানব-অশুরের উত্থান ঘটেছে। আবার অসুরের অশুভ কোথায় হারিয়ে গেছে। অথচ যারা মানুষ তারা মানুষের মনে শতসহস্র বছর পরেও শ্রদ্ধা-সম্মানে থেকে গেছে।

সৎ মানুষ অবশ্যম্ভাবীভাবে সাহসী হয়। যাদের কাছে জীবনের সামান্য পরওয়া নাই, অন্যায়ভাবে কিছু প্রাপ্তির জন্য মোহ নাই কিংবা যারা অধিকারহারাদের স্বার্থের পক্ষে লড়ে যায় তাদের কোনো বাঁধাতেই আটকানো যায় না। সৎ মানুষদের বিপদ সবসময় সাময়িক। পূর্ব গগনের ঘন-কালোমেঘ সরিয়ে আবার নতুন সূর্যোদয়ের যে অপেক্ষা তা জানবাজ বীরকে আরো পরিশুদ্ধ করে। যে ব্যক্তি তার দায়িত্ব পালনে সৎ, যার কাছে কোনো জীবের অধিকার অন্যায়ভাবে আটকে থাকে না কিংবা যারা কখনোই অন্যের বিশ্বাসের অমর্যাদা করে না- তারা স্বভাবে দেশপ্রেমিক। মানুষের আস্থা অর্জনে সমাজে সৎ মানুষের জুরি মেলা ভার। যারা সত্যের পক্ষে থাকার জন্য দুনিয়ায় অধিকার বঞ্চিত হয়, হেনস্তার শিকার হয় কিংবা অপমান-অপদস্থের মুখোমুখি করা হয়- তাদের পরকাল কতখানি রঙিন হবে তা কেবল মাওলা জানেন। অন্যায়ভাবে দুনিয়ায় লাঞ্ছনা-গঞ্জনার ভুক্তভোগীদের জন্য ভবিষ্যত সুন্দর। কোনকালেই কোনো ভালোকাজ বিনিময়হীন যায়নি। সততার জন্য যারা উপেক্ষা করেছে সুযোগ, ফিরিয়ে দিয়েছে আর্থিক প্রলোভন কিংবা ভোগ করেছে কষ্ট-ব্যথা তারা পুরস্কৃত হবেই। দুনিয়াতেই প্রতিষ্ঠিত হবে তাদের শ্রেষ্ঠত্বে ছায়া।

হয়তো দুনিয়ার প্রচলিত শুদ্ধাচার পুরস্কার তাদের নামে বরাদ্দ হবে না। কিন্তু মানুষের ভালোবাসার পুরস্কার, প্রভুর সন্তুষ্টির পুরস্কার সৎ ও আলোকিত মানুষরা অর্জন করবেই। দুনিয়াতেই সে বাস্তবতার আভা দেখা যাবে। সৎ মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি তার সবরে। অনেককিছু হারাতে হবে জেনেও যারা মানুষের পক্ষে লড়াইয়ে নামে, সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে তারা জাতির জন্য আশীর্বাদ। এ জাতির সূর্যসন্তানদের ত্যাগের ইতিহাস যাদের জীবনের প্রেরণা, ধর্মীয় মূল্যবোধ যাদের পথচলার আদর্শ তাদের পরাজয় নেই। আর পরাজয়ে ডরে না বীর। ভালো মানুষ দুর্দিনের পরে ঘুরে দাঁড়াবেই। যারা মানুষের মন জিতে নেয় তাদের দুনিয়া কঠিন হলেও আখেরাত সহজ হয়ে যায়। মানুষের জীবনের সম্পূর্ণটাই পরীক্ষাকাল। যাদের প্রস্তুতির সময় যত কঠোর পরিশ্রম, যত প্রতিকূলতা তাদের জীবনের পরিণতির ফলাফল তত মসৃণ। প্রকৃতি সৎ মানুষকে শেষমেষ আশাহত করে না বরং জিতিয়ে দেয়। ভালো মানুষ মরার পরেও বেঁচে যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত