ঢাকা ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রবীণ হিসেবে আপনি কতটা বিরক্তিকর!

হাসান আলী
প্রবীণ হিসেবে আপনি কতটা বিরক্তিকর!

প্রবীণ বয়সে অনেকের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসে এবং গুরুত্ব কমতে থাকে। দীর্ঘ জীবন লাভের মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠেন। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে ভালো লাগে। অপেক্ষাকৃত কমবয়সীদের চোখের সামনে দেখলে জীবনের নানা চড়াই-উৎরাইয়ের কথা মনে পড়ে। জীবনের পাওয়া না-পাওয়ার বেদনা সামনে এসে হাজির হয়। অনেকেই আফসোস করেন দেশের রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার দুরাবস্থার কথা ভেবে।

আমরা অন্যের সমালোচনায় যতটা আগ্রহ, উৎসাহ বোধ করি ততটাই অনাগ্রহ, অনুৎসাহী হই নিজের বেলায়। অনেক সময় ইচ্ছায় অনিচ্ছায় নিজের দুর্বল দিকগুলো আলোর সামনে আনতে চাই না।

প্রবীণরা কেন অন্যদের বিরক্তির কারণ সে বিষয়ে নিয়ে কিছু কথা থাকল। যে সব প্রবীণ সঙ্গীকে সন্দেহের চোখে দেখেন, সঙ্গীর প্রতিটি কাজ কর্ম, কথা কে নেতিবাচকভাবে নেন তারা বিরক্তিকর। প্রবীণদের কেউ কেউ আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকতে চান, কোন কিছুর দায় দায়িত্ব নিতে চান না, নিজের দায় ভার অন্যের কাঁধে চাপাতে পছন্দ করেন, প্রশংসা শুনতে আকুল হয়ে উঠেন, স্বীকৃতি পেতে মরিয়া হয়ে যান, টাকা-পয়সা খরচ করে পুরস্কার নেন, অন্যের সমালোচনা-চরিত্র হননে- বিশ্লেষণে আনন্দ পান, কথা চালাচালি করে ঝগড়াঝাটি তৈরি করেন, ক্রমাগত নেতিবাচক চর্চা চালু রাখার কারণে বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারেন।

কিছু কিছু প্রবীণ রয়েছেন যারা কোন অর্জন বা কৃতিত্বকে নিজের বলে চালিয়ে দেন, কথা ও কাজ দিয়ে অন্যকে ছোট বা অসম্মান করেন। অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল না হলে, পরশ্রী কাতরতা বেড়ে গেলে, ভাগ্যকে দোষারোপ করতে থাকলে, হতাশা ছড়িয়ে দিলে অবশ্যই আপনি একজন বিরক্তিকর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন। কোন কোন প্রবীণ আছেন, যারা ফোন রিসিভ করেন বা কথা শেষ না হতে লাইন কেটে দেন। ধার কর্জ করেন; কিন্তু সময় মতো পরিশোধ করতে গড়িমসি করেন, কেউ দাওয়াত দিলে অবজ্ঞা করেন, আবার দাওয়াত না পেলে বকাবকি করেন, কাউকে ছাড় দিতে চান না, প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠেন, কাউকে সাহায্য সহযোগিতা করলে খোঁটা দেন। অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলে জানতে চান কে কে আসবেন, অতিথি পছন্দ না হলে চুপচাপ থাকেন অথবা যেতে অস্বীকার করেন, দাওয়াত গ্রহণ করেন অথচ আসেন না, অনুষ্ঠানে বিলম্ব করে আসেন এরা বিরক্তিকর মানুষ।

উচ্চ শিক্ষিত কিছু প্রবীণ রয়েছেন- যারা মাইক হাতে পেলে কথা বলতেই থাকেন, কথা বলতে না দিলে কিংবা সংক্ষিপ্ত করতে বললে রেগে যান, কেউ কেউ অতিমাত্রায় নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে থাকেন হোক সেটা প্রয়োজনীয় কিংবা অপ্রয়োজনীয়। শ্রোতারা বক্তব্য শুনছে নাকি নিজেদের মধ্যে কথা বলা বলিতে ব্যস্ত সেটুকু বিবেচনা করতে অক্ষম প্রবীণও রয়েছেন। বক্তৃতা করার সময় বারবার হাততালি বক্তৃতা শেষ করার তাগিদ কি না- তা বিবেচনা না করলে, শ্রোতারা বক্তব্য শুনতে রাজি কি না তা বিবেচনায় না নিলে আপনি একজন বিরক্তিকর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার সময় অপর পক্ষ ঘন ঘন হাল্কা জবাব দিলে বুঝতে হবে তিনি বিরক্ত এবং কথা শেষ করার তাগিদ দিচ্ছেন। কথা বলার সময় কেউ ব্যাঘাত সৃষ্টি করার অর্থ এই নয় যে, তিনি আপনার কথা শুনতে চান না। যদি তিনি আপনাকে বিষয় বস্তুর বাইরে নিয়ে যেতে চান তবে বুঝতে হবে কথা থামানোর সময় হয়ে এসেছে।

আপনি পরিষ্কার করে কথা বলছেন অপর পক্ষ পরিষ্কার করে বোঝার অর্থ সব ঠিক আছে। অপর পক্ষ চুপচাপ শুনে যাচ্ছে তার মানে আগ্রহ নাই অথবা বিরক্ত। আপনার কথা অপর পক্ষ শুনছে নাকি বিরক্ত হচ্ছে তা দেহের অবস্থান থেকে বোঝা যাবে। যদি কাছাকাছি এসে শুনতে চায়, তবে ঠিক আছে আর দূরে সরে যাবার চেষ্টা করলে বুঝতে হবে পরিস্থিতি প্রতিকূল। গায়ে পড়ে জ্ঞান বিতরণ বা উপকার করার চেষ্টা অন্যের বিরক্তির কারণ হতে পারে। মহিলাদের সাথে হাসি ঠাট্টা, মশকারি করার নামে অশ্লীল যৌন ইঙ্গিত পূর্ণ কথা বলা অথবা আদর করার নাম করে স্পর্শ কাতর স্থানে হাতে রাখা চরম বিরক্তিকর বিষয়।

যে সব প্রবীণ কথায় কথায় বলে, কিছু ভালো লাগে না, ভালো দিন শেষ হয়েছে, খারাপ দিন গুলো সামনে, ভালো লোক মুখে মুখে, এদেশের উন্নতি অসম্ভব, আমরা চোরের খনি পেয়েছি, রাজনীতি এখন অনেক কঠিন, কোন আশা দেখি না, ভরসা পাই না, আছে জালিয়াতি-প্রতারণা আর ঠগবাজি, আমি একদম হতাশ, আমার সব দেখা শেষ, এরকম বলা মানুষ বিরক্তিকর হতে পারেন।

যে সমস্ত প্রবীণ অভিযোগ, নালিশ, ক্ষোভ প্রকাশে একদম সময় নেন না, নিজের ভাগ্য মন্দ বলে বিলাপ করেন, ভালো কিছু করতে না পারার জন্য অন্যকে দায়ী করেন, পুরোনো প্রমোশন-পোস্টিং নিয়ে অভিশাপ দেন, ব্যবসায় লাভণ্ডলোকসান দায়ভার সরকারের উপর চাপিয়ে দেন, এসব মানুষকে অনেকেই বিরক্তিকর মানুষ হিসেবে মনে করেন। একজন প্রবীণের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা না থাকলে, ভালো গল্প করার ক্ষমতা না থাকলে, নিজস্ব মতামত দেবার যোগ্যতা না থাকলে, অন্যের ইশারা ইঙ্গিত বুঝতে না পারলে, কথা বার্তায় সংযত না হলে, একই কাজ বারবার করলে বিরক্তির কারণ হবার সম্ভাবনা থাকে।

আপনার আচার আচরণ এবং উপস্থিতি যদি অন্যদের আনন্দ না দেয়, শুধু ব্যর্থ অসুখী মানুষের উদাহরণ সামনে তুলে ধরলে, আত্মবিশ্বাস কমে গেলে, দুঃশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন হলে, সামাজিক জীবনকে তাচ্ছিল্য করলে নিঃসন্দেহে আপনি বিরক্তিকর একজন মানুষ। যা কিছু ভালো লাগে তা নিয়ে মনের আনন্দ প্রকাশ করুন, মানুষকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন, মস্তিষ্ককে সৃষ্টিশীলতার কাজে লাগান, দুঃখ-দুর্দশা বিলাপ করে কিংবা ইনিয়ে বিনিয়ে বললে কমে না বরং সম্মান হানি হয়। মনে রাখতে হবে বিরক্তিকর মানুষের উন্নয়ন দক্ষতা কম। বিরক্তি প্রকাশ করে অন্যের শান্তি বিঘ্নিত করবেন না প্লিজ!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত