ঢাকা রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রমজান-ত্যাগ ও আত্মসংযমের মাস

আফতাব চৌধুরী
রমজান-ত্যাগ ও আত্মসংযমের মাস

পবিত্র মাহে রমজানের রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ফরজ। আল্লাহতায়ালা কালামে হাকিমে ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যেন তোমরা খোদাভীরুতা অর্জন করতে পার। এই মাহে রমজানের রয়েছে অনেক মাহাত্ম্য, ফজিলত ও রোজার রয়েছে অনেক মরতবা। হাদিস শরিফে বর্ণিত- যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা এক আল্লাহর বিশ্বাস ও সওয়াবের নিয়তে রাখে তার পূর্বেকার সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়। অতএব, প্রত্যেক রোজাদারের উচিত রোজার হক আদায় করে রোজা রাখা, যেন সে এই ফজলিত ও মরতবা অর্জন করতে পারে। কিন্তু অনেক রোজাদার ব্যক্তিই রোজার হক এবং গুরুত্বপূর্ণ অতীব প্রয়োজনীয় মাসাইল সম্পর্কে না জানার কারণে শুধু অভুক্ত থাকে, সে রোজার ফজিলত থেকে বঞ্চিত হয়। যেমন হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায় রসুলে মকবুল (সা.) ইরশাদ করেন, এমন অনেক রোজাদার আছে যাদের রোজার তৃষ্ণা ছাড়া অন্য কোনো ফারদা হয় না। এমন অনেক নৈশ নামাজি আছে যাদের নামাজ সারা রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কোনো লাভ হয় না। (দারিমি শরিফ) তাই প্রত্যেক রোজাদারের উচিত রোজার অধিক গুরুত্বপূর্ণ মাসাইল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। এদিকে লক্ষ্য রেখেই নিম্নে কতিপয় অতীব প্রয়োজনীয় মাসাইল উল্লেখ করা হলো।

রোজার ফরজিয়াত : রমজান শরিফের রোজা পাগল ও নাবালক ছাড়া স্ত্রী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, অন্ধ-বধির সকলের উপর ফরজ। শরিয়তে বর্ণিত ওজর ব্যতীত রমজান শরিফের রোজা না- রাখা কারো জন্য জায়েজ নয়। সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলে। রোজার জন্য নিয়ত করা ফরজ। মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা ফরজ নয়, শুধু যদি মনে মনে চিন্তা করে সংকল্প করে যে, আমি আজ আল্লাহর নামে রোজা রাখব। এতেই তার রোজা সহীহ হবে। রাত্রেই রমজানের রোজার নিয়ত করতে হয়। যদি কেউ রাত্রে নিয়ত না- করে এমনকি সকাল হয়ে যায় তখন সকাল থেকে সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিয়ত করলেও নিয়ত হয়ে যাবে। রমজান শরিফের রোজা বা ফরজ রোজা বলে নিয়ত না- করে শুধু এটুকু নিয়ত করে যে, আজ আমি রোজা রাখব অথবা, রাত্রে মনে মনে বলে যে, আগামীকাল আমি রোজা রাখব, তবে তাতেই রমজানের রোজা সহীহ হয়ে যাবে।

চাঁদ দেখা- রসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখেই রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখেই রোজা ভঙ্গ কর। যদি তোমরা মেঘাচ্ছন্ন আকাশে চাঁদ দেখতে না- পাও তাহলে শাবান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ কর। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়, তাহলে একজন সত্যবাদী পুরুষ বা স্ত্রী দ্বীনদার লোকের সাক্ষাতেই রমজানের চাঁদ প্রমাণিত ও সাব্যস্ত হবে। আকাশ যদি সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকে এবং তা সত্ত্বেও চাঁদ দেখা না- যায়, তাহলে অধিক সংখ্যক লোকের সাক্ষাৎ ছাড়া চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে না। রমজানের চাঁদ হোক কিংবা ঈদের চাঁদ হোক। কিন্তু এত বেশি সংখ্যক লোক যদি চাঁদ দেখেছে সাক্ষ্য দেয় যাতে মনে দৃঢ় ধারণা হয় যে, এত লোক কিছুতেই মিথ্যা বানিয়ে বলতে পারে না, তবে চাঁদ দেখে প্রমাণিত হবে।

তারাবির নামাজ- হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মহান আল্লাহতায়ালা তোমাদের প্রতি রমজান শরিফের রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি সুন্নত হিসাবে তারাবির নামাজকে বিধিবদ্ধ করলাম। সুতরাং যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও সওয়াবের নিয়তে পবিত্র রমজান মাসের রোজা রাখে এবং রাত্রিবেলা তারাবির নামাজ পড়ে সে ব্যক্তি সকল পাপ থেকে এমনভাবে নিষ্কলুষ ও পবিত্র হয়ে যায় যে সদ্যপ্রসূত শিশু যেমন নিষ্কলুষ ও পবিত্র হয়ে জন্মগ্রহণ হয়ে থাকে। তারাবি নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করা সুন্নাতে কেফায়া। (মুনিরা, ছগিরা)।

ষ যে ব্যক্তি কোনো কারণবশত রোজা রাখেনি তার জন্যও তারাবির নামাজ পড়া সুন্নাত। যদি না-পড়ে তাহলে এর জন্য সে গোনাহগার হবে। (শামী) মহিলাদের জন্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ন্যায় তারাবির নামাজ পড়া একাকী পড়তে হবে। হ্যাঁ, মহিলাদের ইমাম যদি মাহরাম পুরুষ হয় এবং মহিলারা তার পেছনের সারিতে দাঁড়ায় অথবা মহিলার গাইরে মাহরাম হয় কিন্তু পর্দার আড়াল থেকে পুরুষ ইমামদের ইক্তেদা করে তাহলে তাদের জন্যে জামাতের সাথে তারাবির নামাজ পড়া জায়েজ। কিন্তু তা ঘরে পড়ার হুকুম, মসজিদের ব্যাপার নয়। (শামী) তারাবির নামাজের জন্য পারিশ্রমিক লেনদেন উভয়ই নাজায়েজ।

বিতর নামাজ- রমজান মাসে বিতরের নামাজ জামাতের সাথে পড়া উত্তম, রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে জামাতের সাথে বিতর পড়া মাকরুহে তাহরিমি। (আলমগিরি, কবীরি) বিতরের নামাজ তারাবির নামাজের পরে পড়াটা উত্তম। মুসাফিরের রোজা-শরিয়তসম্মত সফরে রমজানের রোজা না রাখার অনুমতি আছে, তবে না রাখার চেয়ে রাখাই উত্তম। যদি কোনো রোজাদার ভুলে কিছু পানাহার করে অথবা স্ত্রী-সহবাস করে ও রোজার কথা মনেই না থাকে তাহলে তাতে ওই ব্যক্তির রোজা ভঙ্গ হয় না। (হিদায়া) কোনো রোজাদারকে ভুলবশত খেতে দেখলে যদি রোজাদার সবল হয় এবং রোজা রাখতে তার কষ্ট না-হয়, তবে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া ওয়াজিব। কিন্তু রোজা রাখবার মতো শক্তি যদি তার না-থাকে, যদি সে বৃদ্ধ ও দুর্বল হয় তাহলে তাকে স্মরণ না-করালেও কোনো দোষ নেই। দাঁতের ফাঁকে যদি কোনো খাদ্যদ্রব্য আটকে থাকে এবং জিহ্বা দ্বারা তা বের না-করে যদি গিয়ে ফেলে এবং ওই খাদ্যদ্রব্য একটি বুটের পরিমাণ অথবা তদপেক্ষা অধিক হয় তবে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে যদি একটি বুট অপেক্ষা কম হয় তবে রোজা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু যদি মুখ থেকে বাইরে আনে এবং তারপর গিলে নেয় তবে তা একটি বুট থেকে কম হলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। রোজা ভঙ্গ না হওয়া মুখের থুথু যত বেশিই হোক না কেন, তা গিলে ফেললে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। রোজা রেখে দিনে ঘুমালে ও স্বপ্নদোষ হলে বা স্বপ্নে কিছু খেতে দেখলে রোজা ভঙ্গ হয় না। রোজা রেখে যদি রোজাদার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে স্ত্রী সাথে থাকা, তাকে চুমু খাওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই। (হেয়াদা) রোজা ভঙ্গ বা ক্বাজা করা- যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার ও স্ত্রী-সহবাস করে তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং ক্বাজা কাফফারা উভয়েই ওয়াজিব হবে। কুলকুচি করার সময় যদি (অসর্তকতাবশত রোজার কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও) কণ্ঠনালির মধ্যে পানি চলে যায় অথবা ডুব দিয়ে গোসল কার সময় হঠাৎ নাক বা মুখ দিয়ে পানি মুখের ভিতর অনিচ্ছাকৃতভাবে চলে যায় তবে রোজা ভঙ্গ হবে না এবং এ রোজার ক্বাজা করা ওয়াজিব নয়। নিদ্রাবস্থায় কেউ খাইয়ে দিলে, পেটে বা মাথার ক্ষতস্থানে লাগানো ওষুধ পেটে বা মস্তিষ্কে ঢুকলে, কানের মধ্য দিয়ে কোনো কিছু শরীরে প্রবেশ করলে, রাত বাকি আছে মনে করে সুবেহ সাদিকের পর কিছু খেলে, এমনিভাবে ইফতারের সময় হয়েছে মনে করে সূর্যাস্তের আগে কিছু খেলে রোজা ভঙ্গ হবে ক্বাজা ওয়াজিব হবে। ধূমপান দ্বারা রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে যদি কেউ থুথুর সঙ্গে সে রক্ত গিলে ফেলে তবে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে; কিন্তু যদি থুথুর চেয়ে কম হয় যাতে রক্তের স্বাদ পাওয়া না-যায় তবে রোজা ভঙ্গ হবে না। কেউ যদি এমন কিছু পানাহার করে যা দ্বারা খাদ্যদ্রব্য লাভ হয় তার উপর ক্বাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব।

কাফফারা : রমজানের রোজা ভঙ্গ করলে এর কাফফারাস্বরূপ একাধারে ২ মাস বা ৬০টি রোজা রাখতে হবে। যদি মাঝখানে দুই-একদিনও বাদ পড়ে তাহলে তারপর থেকে আবার ৬০টি গণনা করে পূর্ণ করতে হবে। আগেরগুলো হিসাবে ধরা যাবে না। যদি কারো কাফফারা রোজা রাখার শক্তি না থাকে, তবে রমজান শরিফের একটি রোজা ভাঙলে তার পরিবর্তে ৬০ জন মিসকিনকে দুই ওয়াক্ত তৃপ্তি সহকারে খাওয়াতে হবে। যদি এই রমজানে দুই বা তিনটি রোজা ভেঙে থাকে তবে একটি কাফ্ফারাই ওয়াজিব হবে। কিন্তু যে ক’টি রোজা ভঙ্গ করেছে সেই ক’টির ক্বাজা করতে হবে।

মেসওয়াক, টুথ পাউডার ও পেস্ট এর ব্যবহার- হানাফি ফিকাহ, শাস্ত্রবিশারদগণ রোজা মাসে রাত্রিবেলায় মেসওয়াক ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। চাই তা শুঙ্ক ডাল দ্বারা হোক কিংবা সবুজ সতেজ ডাল দ্বারা যার নস্য থেকে এক প্রকার স্বাদ অনুভূত হয়, দিনের প্রথমাংশে হোক কিংবা সন্ধ্যা বেলায়। (খোলাসা আলমগির) মেসওয়াক না-থাকা অবস্থায় কেউ যদি আঙুল অথবা টুথব্রাশ দ্বারা মেসওয়াক করে তাতেও মেসওয়াক করার সুন্নাত আদায় হবে। যেসব টুথব্রাশ অন্য কোনো শূকরের লোম বা কোন নাপাক অথবা বস্থু দ্বারা তৈরি করা হয়, সেসব ব্রাশ ব্যবহার জায়েজ নয়। অনুরূপভাবে, যেসব মাজন বা টুথপেষ্ট এর মধ্যে কোনো নাপাক অথবা হারাম দ্রব্য থাকে সেসব মাজন ও টুথপেস্ট ব্যবহার করাও জায়েজ নয়। (ফাতাওয়া ও মাসাইল) তবে রোজা রাখা অবস্থায় দিনের বেলা টুথ পাউডার, পেস্ট, কয়লা বা মাজন দ্বারা পরিস্কার করা মাকরূহ। গরম ও পিপাসা হালকা করার নিমিত্তে ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি বেশি পানি ব্যবহার করা মাকরূহ। অশ্লীল কথাবার্তা- পরনিন্দা বা গিবত করা, মিথ্যা বলা, অশ্লীল কথা ও ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদিতে লিপ্ত হলে রোজা মাকরূহ হয়। ঔষধ সেবন- নাকে নস্য টানলে বা কানে তেল টানলে অথবা পায়খানার জন্য ডুস লাগালে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় কিন্তু এরূপ করলে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না শুধু ক্বাজা করতে হবে।

ইনজেকশন ও অস্ত্রোপাচার-ইনজেকশনের দ্বারা রক্ত পৌঁছানো হোক, ওষুধ ইত্যাদি পৌঁছানো হোক যদি উদরস্থ বা মস্তিস্কগত না হয়, তাহলে তা রোজা ভঙ্গের কারণ হবে না। আর গ্লুকোজ ইত্যাদির অবস্থাও তাই। তা রগের মাধ্যমে রক্ত ইত্যাদি পৌঁছানো হয়ে থাকে যা পাকস্থলী কিংবা মস্তিস্কের কোনো প্রবহমান ছিদ্রপথে পৌঁছানো হয় না এবং এজন্য রোজা ভঙ্গের কারণ হয় না। অস্ত্রোপচার যা হাত পা ইত্যাদিতে হয়ে থাকে তা রোজার উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তদ্রূপ কান, লজ্জাস্থান, কোমরদ্বয় ও নাক ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যাতে মস্তিষ্ক অথবা পেটের ছিদ্রপথ থাকে সেগুলোরও শুধু অস্ত্রোপচার দ্বারা রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে হ্যাঁ, অস্ত্রোপচারের সাথে যদি কোনো ওষুধ ঢেলে দেয়া হয় এবং তা পেট কিংবা মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

সুগন্ধি ও তৈল ব্যবহার- রোজা রেখে সুরমা বা তৈল লাগানো অথবা খুশবুর ঘ্রাণ নেয়া জায়েজ বরং মুস্তাহাব। এমনকি চোখে সুরমা লাগালে যদি থুথু কিংবা শ্লেষ্মায় সুরমার রং দেখা যায় তবুও রোজা ভঙ্গ হয় না বা মাকরূহ হয় না। আগরবাতি জ্বালিয়ে তার ধোঁয়া গ্রহণ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। এ ছাড়া, কেউ যদি বিড়ি, সিগারেট অথবা হুক্কার ধোঁয়া পান করে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে; কিন্তু গোলাপ, কেওড়া ফুল, আতর ইত্যাদি যেসব খুশবুতে ধোঁয়া নেই তার ঘ্রাণ নেয়া জায়েজ। বমি- আপনাআপনি যদি বমি হয়ে যায়, তবে বেশি হোক কিংবা কম হোক তাতে রোজা নষ্ট হবে না। অবশ্য বমি ইচ্ছাপূর্বক গিলে নেয়, তবে কম হলেও রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।

সাহরি ও ইফতার : রোজা রাখার উদ্দেশ্যে শেষ রাত্রে যা কিছু খাওয়া হয় তাকে সাহরি বলে। সাহরি খাওয়া সুন্নাত। রসুল (সা.) বলেছেন, আমাদের এবং আহলে কিতাবের (ইহুদি-নাসারা) রোজার মধ্যে পার্থক্য হল আমরা সাহরি খাই, ওরা খায় না। শেষ রাত্রিতে সাহরি খাওয়া উত্তম। সূর্যাস্তের পর পরই ইফতার করা উত্তম। খুরমা, খেজুর দ্বারা ইফতার করা সবচেয়ে উত্তম। খুরমার অভাবে অন্য কোনো মিষ্টি জিনিষ দ্বারা অথবা পানি দ্বারা ইফতার করা ভালো। এতেকাফ-পবিত্র মাহে রমজানের শেষ দশদিন এতেকাফ করা সন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। হযরত উমর (রাঃ)-এর হাদিস থেকে জানা যায়- রসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দাশদিন এতেকাফ করতেন। এতেকাফের সময় প্রস্রাব-পায়খানা বা ফরজ গোসল ব্যতীত অন্য কোনো কারণে মসজিদের সীমানার বাইরে গেলে এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

সদকাতুল ফিতর : ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় হাওয়ায়েজে আসালিয়া বা জীবিকানির্বাহের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ (যথা- পরিধানের বস্ত্র, আহারের খাদ্য ইত্যাদি) ব্যতীত ৭.৫ তোলা সোনা অথবা ৫২.৫ তোলা রূপা বা অনুরূপ পরিমাণ মূল্যের অন্য কোনো দ্রব্যের মালিক হলে সাদকাতুল ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার জন্য তেজারতের মাল পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত হওয়া শর্ত নয়। ঈদের নামাজের আগেই সদাকাতুল ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব, যদি কোনো কারণে কেউ আগে না দিতে পারে, তবে পরে দিলেও আদায় হবে। একজনের ফিতরা একজনকে দেয়া বা একজনের ফিতরা কয়েকজনকে ভাগ করে দেয়া উভয়ই জায়েজ। ফিতরা যদি গম বা গমের আটা বা গমের ছাতু দ্বারা কেউ আদায় করতে চায় তাহলে এক সের সাড়ে বারো ছটাক দিতে হবে আর যব বা যবের ছাতু দ্বারা ফিতরা আদায় করতে চাইলে পূর্ণ তিন সের ৯ ছটাক দিতে হবে। যদি গম ও যবজাতীয় অন্য কোনো শস্য যেমন- ধান, চাল, বুট, কলাই ইত্যাদি দ্বারা ফিতরা আদায় করতে চায় তবে বাজারদরে উপরোক্ত পরিমাপ গম বা যবের যে মূল্য হয়, সে মূল্যের চাল, ধান, বুট ইত্যাদি দিলে আদায় হয়ে যাবে। যদি খাদ্যদ্রব্য জাতীয় জিনিষ যথা- যব, গম ইত্যাদি না দিয়ে উপরোক্ত পরিমাণ গম বা যবের মূল্য নগদ পয়সায় দিয়ে দেয় তবে তা সবচেয়ে উত্তম। যার জন্য জাকাত গ্রহণ করা হালাল তার জন্য ফিতরা গ্রহণ হালাল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত