ঢাকা রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টিকটক তৈরিকে নিষিদ্ধ করা হোক

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
টিকটক তৈরিকে নিষিদ্ধ করা হোক

আজ বিশ্বব্যাপী মোবাইলের মাধ্যমে এক ধরনের টিকটক ভিডিও করা হয়ে থাকে যা বড়ই বিপজ্জনক। বাংলাদেশের বেলায়ও এ ধরনের অল্প বয়সী ছেলে-মেয়ে যারা বয়সের দিক থেকে কিশোর-কিশোরী অথবা নব্য তরুণ-তরুণী তাদের মধ্যে ছোট্ট ভিডিও (রিলস) দেখা এবং রিলস তৈরি করে টিকটকের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোষ্ট করা মোটের ওপর স্বাভাবিক ব্যাপার। অথচ আমাদের দেশে অনেক বাবা-মা তাদের ছেলে-মেয়ের এ ধরনের টিকটকের ব্যাপারে আপত্তি করতে দেখা যায়। যে বয়সে মন দিয়ে লেখাপড়া করার কথা তখন এ ধরনের টিকটক শিক্ষা জীবনকে ব্যহত করে। এই সেদিন পাকিস্তানে এক পিতা তার ১৩-১৪ বছরের এক মেয়েকে টিকটকে ভিডিও পোষ্ট করার অভিযোগে গুলি করে হত্যা করে। অভিযুক্ত পিতা অবশ্য এত্ত স্বীকার করেন যে, তার মেয়ে টিকটক করে যা যা পোষ্ট করেছিল এগুলো তার কাছে আপত্তিকর মনে হয়েছে।

শুধু ভারত পাকিস্তান কেন, টিকটক সোশ্যাল মিডিয়াতে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পাওয়া এখন ট্রেডিং। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজারও অ্যাপ। এই অ্যাপের ফাঁদেই সেদিন প্রাণ গেল নোয়াখালী জেলার চাটখিল অঞ্চলের ১১ বছরের এক স্কুলছাত্রীর। সে আলমারির মাথায় উঠে সিলিং থেকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিনয় করে একটি টিকটক ভিডিও বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু আচমকাই আলমারি থেকে পা ফসকে যায় তার। পা ঝুলতে থাকায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস আটকে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পথে তার করুণ মৃত্যু হয়। এতো কম বয়সে মেয়েটির মৃত্যুতে গোটা পরিবারে শোকে পাথর হয়ে গেছে। তবে নোয়াখালী সানজিদা শুধু নয়, এর আগেও সোশ্যাল মিডিয়ার হাতছানির ফাঁদে পড়ে প্রাণ হারান বহু কিশোর-কিশোরী।

কখনও চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে কেরামতি, আবার কখনও বা খরস্রোতা নদীতে ঝাপ-পরিণতি মৃত্যু। এমন ঘটনা প্রায়শই আসছে পত্রিকার শিরোনামে। তা নিয়ে বারংবার সাবধানতা ছড়ানোর চেষ্টাও চলছে। কিন্তু সত্যিই কি বেড়েছে সাবধানতার হার? রাতের পর রাত চোখে ঘুম নেই। ক্ষতি হচ্ছে শরীরের। সব কিছুর জন্য দায় ফেসবুক, ইনষ্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া। সামাজিক মাধ্যমের কারণেই বেশি সময় ধরে মোবাইল ঘাটছে তরুণ-তরুণী এমন কি বয়বৃদ্ধারা পর্যন্ত। কোনোভাবেই এই স্বভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না কেউই। আর শিশু বাচ্চাারা মোবাইলে ভীষণভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে ১১ বছর বয়সি ৫২ শতাংশ শিশুরা মোবাইল ব্যবহার করে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এতে ক্ষতি হচ্ছে জীবনের, আসছে না ঘুম, নেশা ধরানোর অভিযোগ রয়েছে, সামাজিকমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, টিকটক এমনভাবে তৈরি করা হয় যা ব্যবহারের ফলে মানবদেহে ডোপামাইন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এর ফলে দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ইন্টারনেট ঘাটতে থাকে নেট ব্যবহারকারিরা। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি ঝুঁকি বাড়ালেই অনেক উন্নতি হওয়া সম্ভব টিকটক বর্তমানে ভারতে শুধু নয়, অনগণ্য দেশেও নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই অ্যাপ্লিকেশন নিষেধাজ্ঞা সর্বশেষতমা একাধিক দেশ ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশনটিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বিবেচনা করার জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং ডেটা গোপনীয়তা লঙ্ঘনের উল্লেখ করছে। তবে আদালতের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র আপাতত টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞাটি স্থগিত করেছে। অষ্ট্রেলিয়ায় নাবালকদের সামাজমাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ, ভারতও সম্ভবত একই পথে?

যাই হোকে, বাংলাদেশে যে হারে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত পরিবারে টিকটক তৈরির ধারা অব্যাহত রয়েছে তা দেশ ও জাতীর জন্য ক্ষতিকর। সরকারের নিকট আকুল আবদেন দেশ ও জাতির স্বার্থে বাংলাদেশ হতে টিকটক তৈরিকে নিষিদ্ধ করা হোক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত