ঢাকা সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভারত-সংশ্লিষ্ট প্রকল্প খতিয়ে দেখা হোক

জাতীয় স্বার্থ সবার আগে
ভারত-সংশ্লিষ্ট প্রকল্প খতিয়ে দেখা হোক

গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সাথে যেসব প্রকল্প নিয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখা জরুরি। যদিও বলা হয়েছে প্রকল্পগুলো উভয় দেশের কল্যাণে নেয়া হয়েছে। কিন্তু জনমনে এমন ধারণা আছে যে, বাংলাদেশের নয় প্রকল্পগুলো ভারতের স্বার্থে নেয়া। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে এসব বিষয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস কারো ছিল না। তার পতনের পর এখন বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আদানির সাথে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি, সীমান্ত হাট বা স্থলবন্দর, সড়ক ও নৌ-ট্রানজিট ইত্যাদি চুক্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কথা বলছেন। গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকের খবরে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ভারতের ঋণে নির্মাণাধীন দুটি সড়ক প্রকল্প নিয়ে। বলা হয়েছে, আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের মহাসড়ক এবং কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ধরখার পর্যন্ত সড়কও চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ দু’টি সড়ক তৈরিতে বাংলাদেশের কী লাভ? ভারতের ঋণে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প দু’টি মূলত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনে সে দেশের ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেবে। কলকাতার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে অতি সামান্য ব্যয়ে তাদের পণ্য উত্তরের দুর্গম রাজ্যগুলোতে পাঠাতে পারবে। আবার চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করা ভারতীয় পণ্যও নতুন বাংলাদেশি সড়ক হয়ে সেভেন সিস্টার্সে যাবে। এ প্রকল্পে দেয়া ঋণের শর্ত অনুযায়ী কাজও করছে ভারতীয় ঠিকাদাররা। অর্থাৎ প্রকল্পে লাভের গুড় পুরোটা ভারতের। বাংলাদেশের লাভ শুধু কিছু দিনমজুরের সাময়িক কর্মসংস্থান।

বহু বছর ধরে আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুগামী অর্থনীতিবিদরা যুক্তি দেখিয়েছেন, ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে এবং দেশটিকে ট্রানজিট দেয়া হলে রাজস্ব বাবদ বাংলাদেশের বিপুল রাজস্ব আয় হবে। বাংলাদেশী পণ্যের জন্য সেভেন সিস্টার্সের দরজা খুলে যাবে। কিন্তু দলটি ক্ষমতায় আসার পর দেখা গেল, সব ভুয়া। বাংলাদেশের নয়, ভারতের স্বার্থে সব দুয়ার খুলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখন ভারতীয় পণ্য সরাসরি সেভেন সিস্টার্সে যাচ্ছে। ফলে সেখানে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের সম্ভাবনা স্থায়ীভাবে বন্ধ। শুধু তাই নয়, ভারত এসব সড়ক ও বন্দর ব্যবহারের সুযোগের অপব্যবহার করবে না অথবা করলেও বাংলাদেশ তা কতটা রোধ করতে পারবে এমন প্রশ্নও তোলেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। এটি পরীক্ষিত সত্য ভারত বাংলাদশের নয়, দেশটি শুধু একটি দলের মিত্র। তার প্রমাণ এখনো দিল্লি রাখছে পতিত ফ্যাসিস্টকে আশ্রয় ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দিয়ে। এই অবস্থান না পাল্টানো পর্যন্ত দেশটিকে আস্থায় নেয়া আমাদের জন্য বিপজ্জনক। এ অবস্থায় ভারতের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পাদিত সব চুক্তি, সমঝোতা ও প্রকল্প খতিয়ে দেখা এবং যেগুলোতে দেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি সেগুলো অবিলম্বে পুনর্বিবেচনা করা হোক। সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সংশ্লিষ্ট পত্রিকাকে বলেছেন, প্রকল্প দুটি খতিয়ে দেখা হবে। বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে না হলে তা বাস্তবায়ন করা হবে না। আমরা সরকারের এ ঘোষণার বাস্তব রূপায়ণ দেখার অপেক্ষায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত