দেশের ভেতরে-বাইরে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এগোতে হচ্ছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে। দেশকে ঠিক পথে তুলে আনতে প্রয়োজনীয় সংস্কার চালানো মস্তবড় এক চ্যালেঞ্জ। এটি সফল করতে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের মধ্যে ঐক্যের ভিত্তি স্থাপন জরুরি। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য না হলে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা পক্ষগুলোর মধ্যে আস্থা বাড়াতে পারে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সফরে বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে এই বিশ্বসংস্থার সহযোগিতা ও সমর্থনের বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। বহুপক্ষীয় প্রতিশ্রুতি ও সম্পৃক্ততায় সংস্কার অগ্রসর হলে আশা করা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের চালানো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সফল হবে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ ও সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে গত শনিবার জাতিসংঘ এক গোলটেবিলের আয়োজন করে। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সংস্কার কমিশনের প্রধানরা ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এ গোলটেবিলে অংশ নেন। অ্যান্তোনিও গুতেরেস এ সময়ে অংশীজনদের কাছে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে অবহিত হন। কমিশনের প্রধানরা সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়ার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। অংশ নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতারা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উল্লেøখ করেন। জাতিসংঘের মহাসচিব এ প্রক্রিয়ার প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই সন্ধিক্ষণে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানটির সমর্থন বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার উৎপাটনের বিষয়টি আমাদের প্রতিবেশী ভারত ভালোভাবে নেয়নি। একে উগ্রবাদের উত্থান হিসেবে নেতিবাচক পরিচিতি দিতে দিল্লি সচেষ্ট। ৫ আগস্টের পর থেকে ক্রমাগত বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার গুজব ছড়াচ্ছে দেশটি। এ অবস্থায় জাতিসংঘ মহাসচিবের সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন-সহযোগিতার আগ্রহ অপ-প্রচারকারী আধিপত্যবাদী শক্তিকে প্রতিরোধে দারুণ কাজে দেবে।
গোলটেবিলে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ফ্যাসিবাদের আরো দুই দোসরের নিয়োগের বিষয়ে পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। নাগরিক সমাজের সাথে আলোচনায়ও একই দাবি উত্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে শত্রুদের নেতিবাচক প্রভাবকে এর ফলে কমিয়ে আনা যাবে বলে আশা করা যায়। সংস্কার কতটুকু হবে, কীভাবে হবে এবং নির্বাচনের আগে না পরে হবে- এ নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা আছে। বড় দল বিএনপি চায় দ্রুত নির্বাচন। জামায়াত চায় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন। অন্যদিকে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা চায় সংস্কার ও বিচারের নিশ্চয়তা। দলগুলোর মধ্যে স্বার্থের অগ্রাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। ভিন্নমতকে এক জায়গায় আনতে না পারলে সামনে আমাদের জন্য কঠিন বিপদ অপেক্ষা করছে। গণতান্ত্রিক উত্তরণে যা প্রতিবন্ধকতা ঘটাতে পারে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সম্পৃক্ততা মতভিন্নতা দূর করতে সহায়ক হতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বহুপক্ষীয় প্রতিশ্রুতি দিলে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব। আমাদের মনে রাখতে হবে, চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া ভণ্ডুল হলে জাতি হিসেবে আমরা গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবো। আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা ফের হুমকিতে পড়তে পারে। তাই সবার চাওয়া, দলগুলো ছাড় দিয়ে হলেও সংস্কার প্রক্রিয়ায় ঐকমত্যে পৌঁছাবে।