মেধা পাচার একটি দেশের উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের জন্য বিপদজনক হতে পারে। মেধা পাচার বন্ধে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। শিক্ষার মান উন্নয়ন: দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে মেধাবী ছাত্রদের বিদেশে চলে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমানো যেতে পারে। উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গবেষণার সুযোগ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি: যদি দেশের অভ্যন্তরে ভালো চাকরির সুযোগ এবং অর্থনৈতিক লাভজনক পরিকল্পনা থাকে, তবে মেধাবী তরুণরা দেশের মধ্যে থাকতে আগ্রহী হবে। বিদেশে কর্মসংস্থান সীমিত করা: দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতে যেমন চিকিৎসা, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গবেষণার ক্ষেত্রে বিদেশে কাজের সুযোগ সীমিত করা এবং এখানে ভালো কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা।
প্রশাসনিক সর্মথন এবং উৎসাহ: মেধাবী ছাত্রদের দেশে রাখার জন্য বিশেষ স্কলারশিপ, ফেলোশিপ এবং গবেষণার সুযোগ প্রদান করা যেতে পারে। আইনি ব্যবস্থা শক্তিশালী করা: মেধা পাচার ঠেকাতে আইনি ব্যবস্থা আরও কঠোর করা প্রয়োজন। বিশেষত, যেসব কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান মেধা পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। দেশীয় গবেষণা ও উন্নয়ন বৃদ্ধি: আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও উদ্ভাবন কেন্দ্র গড়ে তোলা। দেশে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির উন্নয়ন হলে, মেধাবীরা দেশেই নতুন সুযোগ পাবে এবং বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন কমবে। বিনিয়োগ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য প্রণোদনা: মেধাবী তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে দেশেই ব্যবসা শুরু করার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। কর্মসংস্থান বাজারে বৈচিত্র্য বৃদ্ধি: মেধাবীদের বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত বা প্রযুক্তি প্রশিক্ষিত মানুষদের জন্য আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় চাকরির সুযোগ তৈরি করতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারি খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করলে মেধা পাচার কমানো যেতে পারে। দেশের সুনাম ও আকর্ষণ বৃদ্ধি: দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এবং আকর্ষণীয়তা বাড়ানো জরুরি। দেশকে একটি উন্নত, নিরাপদ এবং প্রগতিশীল পরিবেশ হিসেবে উপস্থাপন করলে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা কমে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি: দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা বাড়ানো। এতে বৈদেশিক শিক্ষার্থীদের আসা বাড়বে এবং দেশীয় ছাত্ররা বিদেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে দেশেই নতুন সুযোগ পাবে। মাইগ্রেশন নীতি পুনর্বিবেচনা: সরকারের মাইগ্রেশন নীতির মধ্যে পরিবর্তন এনে, যারা দেশ থেকে শিক্ষা বা কর্মের জন্য বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত ও নিয়ম তৈরি করা যেতে পারে, যাতে তাদের দেশে ফিরে আসার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকে। আন্তর্জাতিক স্কলারশিপের জন্য সুযোগ সৃষ্টি: সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ বা গবেষণা সুযোগ তৈরি করা, যা মেধাবীদের দেশেই রেখে পড়াশোনা বা গবেষণা করার জন্য আগ্রহী করবে। দেশের বাইরে যাওয়ার চেয়ে দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মান উন্নয়ন: দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করা। এ ক্ষেত্রে বিদেশি গবেষক এবং শিক্ষক নিয়োগ, আন্তর্জাতিক মানের পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টি, এবং বিদেশি ছাত্রদের জন্য সুযোগ তৈরি করা যাবে। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্তি: বর্তমান সময়ে নতুন প্রযুক্তি, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করা। এই ধরনের প্রযুক্তিতে দক্ষ মেধাবীদের জন্য দেশে উচ্চমানের কর্মসংস্থান তৈরি হলে, তারা দেশের মধ্যে থাকতে আগ্রহী হবে।
ইন্টার্নশিপ ও প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষা প্রদান: শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভের জন্য ইন্টার্নশিপ এবং প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থা আরও উন্নত করা উচিত। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পেশাগত দক্ষতা অর্জন করে দেশের চাকরি বাজারে সফল হতে পারে। নতুন শিল্প সৃষ্টি ও উদ্ভাবনের জন্য পরিকল্পনা: শিল্পের বিভিন্ন খাতে নতুন উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা। মেধাবীদের উৎসাহিত করতে উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং সেখান থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। বিদেশে কাজ করার জন্য সামাজিক প্রেরণা: বিদেশে কাজ করাকে কখনও কখনও মেধা পাচার বা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার হিসেবে নয়, বরং সামাজিক দায়িত্ব এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের দৃষ্টিতে দেখার প্রচেষ্টা চালানো। এটি দেশের অগ্রগতিতে সাহায্য করতে পারে এবং একই সঙ্গে তরুণদের দায়িত্বশীল ও জাতির প্রতি অবদান রাখতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
দেশীয় আইটি খাতের উন্নয়ন: আইটি সেক্টরে দেশীয় কোম্পানির উন্নতি এবং বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি করা। মেধাবীরা দেশের আইটি খাতে কাজ করার মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে না। পরিবার ও সামাজিক প্রচারণা: পরিবার এবং সমাজে বিদেশে যাওয়ার জন্য মেধাবীদের প্রতি চাপ কমিয়ে, দেশে থাকতে এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার গুরুত্ব তুলে ধরা। মেধাবী যুবকদের জাতীয় অগ্রগতির অংশ হিসেবে দেশেই থাকার প্রয়োজনীয়তা বোঝানো। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব: দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো, বিশেষ করে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে। এতে মেধাবী ছাত্ররা বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করে, দেশেই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণা করতে পারবে। গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র তৈরি: দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আধুনিক গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র তৈরি করা, যেখানে মেধাবী তরুণরা নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করতে পারবে। এতে তারা আন্তর্জাতিক মানের কাজ করতে পারবে এবং বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমবে। দেশীয় শিল্প ও স্টার্টআপ সেক্টরকে উৎসাহিত করা: মেধাবী তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় দেশীয় শিল্প এবং স্টার্টআপ সেক্টরকে উৎসাহিত করা। দেশে নতুন ব্যবসা এবং উদ্ভাবন সৃষ্টি হলে, মেধাবী তরুণরা এখানেই ভালো সুযোগ পাবে।
সামাজিক নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: দেশে সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। এতে মেধাবীরা বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে না এবং দেশের উন্নয়নেও তারা অংশ নিতে উৎসাহিত হবে। দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন: তরুণদের উচ্চমানের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন নিশ্চিত করার জন্য সরকার এবং বেসরকারি খাতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাড়ানো। এতে দেশের কর্মসংস্থান বাজারে তারা আরও দক্ষ এবং প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে, যা মেধা পাচার কমাতে সাহায্য করবে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিশেষ গবেষণা উদ্যোগ: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি জাতীয় গবেষণা উদ্যোগ শুরু করা, যা তরুণদের নতুন এবং উন্নত গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে। এটি তাদের দেশে থেকে গবেষণা এবং উদ্ভাবন করার জন্য প্রেরণা যোগাবে।
লেখক : শিক্ষার্থী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা