ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অর্থনীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে হবে

অর্থনীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে হবে

দেশের অর্থনীতি উদ্বেগজনক স্থবিরতায় আক্রান্ত। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেই। উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি নেই। প্রকল্প বাস্তবায়ন থমকে আছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা বিরাজমান। কর্মসংস্থানে সুখবর নেই। বেকারের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক অভিপ্রায় ও প্রতিশ্রুতি জ্ঞাপন করেছিল, বাস্তবে তার কিছুমাত্র প্রতিফলন দেখা যায়নি। প্রতিশ্রুত সহায়তা আসেনি। বিনিয়োগও আসেনি। আসবে এমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের ওপর সঙ্গত কারণেই আস্থা বেশি। সহায়তা হোক, আর বিনিয়োগই হোক, তারা ওই সরকারের সময়ই করতে অধিকতর আগ্রহী হয়। অন্তর্বর্তী অনির্বাচিত ও অরাজনৈতিক সরকারের প্রতি তাদের আস্থা ততটা দৃঢ় হয় না সরকারের আয়ুষ্কাল স্বল্প হওয়ার কারণে। অন্তর্বর্তী সরকার তুলনামূলকভাবে দুর্বল সরকারও বটে।

এমতাবস্থায়, একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠাকেই অগ্রধিকার দিতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সেই সরকার আসতে পারে। সুতরাং, নির্বাচানকে মুখ্য করতে হবে। পর্যবেক্ষকদের অজানা নেই, পতিত ও বিতাড়িত স্বৈরাচার দেশের বিভিন্ন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গেচুরে শেষ করে দিয়ে গেছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব করে তুলতে হলে এসব ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার। সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহ এই সংস্কারে রাজি ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কার ছোট, না বড় আকারে হবে, এ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। তবে অধিকাংশের অভিমত, নির্বাচনের ক্ষেত্রে যতটা প্রয়োজন, ততটুকু সংস্কার করেই যত দ্রুত সম্ভব নির্বচান দেয়া আবশ্যক। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলে বিনিয়োগ, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন গতি আসবে তেমনি আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হবে, শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা: পতিত স্বৈরাচার ও তার প্রভু ভারতের মোদি সরকার দেশে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য যে লাগাতার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, তার অবসান ঘটবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়রেখা জানানো এবং কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন শেষে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আমরা যতদূর জানি, ড. ইউনূস সরকারের কোনো রাজনৈতিক অভিলাস নেই। নেই যখন, তখন নির্বচানে অহেতুক দেরি কেন?

ওয়াকিবহাল মহলের অবিদিত নেই, পতিত স্বৈরাচার দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে। দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন ও অর্থপাচারকে অবাধ করে দিয়েছে। এসব করে অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের ফানুস উড়িয়ে প্রচার করেছে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নতির রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। স্বৈরাচারের পতনের পর দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতি ও উন্নয়নের অবস্থা শোচনীয় ও ভয়াবহ। এ দুই ক্ষেত্রে যেসব পরিসংখ্যান ও বিবরণ দেয়া হয়েছে, তা ভুয়া ও অতিরঞ্জন দোষে দুষ্ট। মাঝখান থেকে দেশের মানুষের ঘাড়ে ঋণের বিশাল বোঝা চেপেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এর জন্য কম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। মাসে মাসে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। স্বৈরাচার ক্ষমতায় থাকার সময়ই অর্থনীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চরম অবস্থায় পৌঁছায়। ঋণ নিয়ে, টাকা ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়। উন্নয়ন প্রকল্প টাকার অভাবে স্থবির হয়ে পড়ে। প্রতিশ্রুত বিদেশি বিনিয়োগ থেমে যায়। চলমান প্রকল্পসমূহে অর্থছাড়ও কমে যায়। অন্তর্বর্তী সরকারের সাত-আট মাসেও এ অবস্থার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি।

পতিত সরকারের অন্যতম অগ্রধিকার ছিল ৮৮২২ কোটি টাকার মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ প্রকল্পে ৫৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দের এক টাকাও ব্যয় করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। শুধু তাই নয়, ওই অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৮৯টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ২৬২৩ কোটি টাকাও ব্যয় হয়নি। এছাড়া গত অর্থবছরের ১২১টি প্রকল্পেরও বাস্তবায়নেও কোনো অগ্রগতি নেই। রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, পতিত সরকারের সময় ৮টি মেগা প্রকল্পকে ফার্স্টট্রাক প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রকল্পগুলো সম গুরুত্ব পায়নি। ফলে প্রকল্পগুলোর বাকি কাজ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ৮টি প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৭টির কয়েকটির কাজ সমাপ্তির পথে। অবশিষ্টগুলোর কাজও শেষ পর্যায়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যেগ নেয়া উচিত। এতে প্রকল্পগুলো শেষ হবে এবং তাদের সুফল ভোগ সম্ভবপর হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেয়া প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। প্রকল্প ঝুলে থাকা, অসমাপ্ত থাকা কিংবা পরিত্যক্ত হওয়া দেশের জন্য ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে তাই সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। এখানে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, উন্নয়ন প্রকল্প দেশের উন্নয়নকেই তরান্বিত করে না, একইসঙ্গে কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে। যখন বেকারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও বহু শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ বেকারের খাতায় নাম লিখিয়েছে, তখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসৃজন ও রক্ষণ অপরিহার্য। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব কমাতে না পারলে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ও শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দুরূহ হতে বাধ্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত