দেশে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতি প্রয়োজনীয় সংস্থা হলো পুলিশ বাহিনী। কিন্তু পতিত শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের দলীয় স্বার্থে যথেচ্ছ ব্যবহার করায় জনদুশমনে পরিণত করে।
শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী জমানায় দেশের আইনশৃঙ্খলা সুশৃঙ্খল করার পরিবর্তে ভিন্নমত ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে শায়েস্তা করতে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে প্রতিনিয়ত এই বাহিনী দিয়ে গুম-খুনের মতো জঘন্য অপকর্ম করানো হয়। ফলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনার পতনের পর পুরো পুলিশ বাহিনী উধাও হয়ে যায়। স্বৈরাচার পতনের সাড়ে সাত মাস চললেও দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ করতে পুলিশের অত্যন্ত বেগ পেতে হচ্ছে। এখনও এ বাহিনী কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি।
পুলিশ সদস্যদের পুরোদমে কাজে লাগাতে হলে এই বাহিনীতে ফিরিয়ে আনতে হবে পেশাদারিত্ব এবং নীতি-নৈতিকতা। এ জন্য চাই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাষ্ট্রীয় বাহিনী হিসেবে পুলিশের কাজের নিশ্চয়তা। অবশ্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশকে প্রভাবমুক্ত এবং আইন-কানুন মেনে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে আন্তরিক। পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘বিদ্যমান আইন মেনে পুলিশকে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে।’ রাজধানীর তেজগাঁওয়ে গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরো বলেন, ভবিষ্যতে যে সরকার নির্বাচিত হবে, সেটি হবে আইনের শাসনের সরকার, তাই পুলিশকে সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি পুলিশ সুপারদের কাজের মূল্যায়নের ওপর জোর দেন, যাতে মাঠপর্যায়ে প্রতিযোগিতা আরো গতিশীল হয়।
দেশে আইনশৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক না কেন, যত টাকা থাকুক না কেন, কোনো কাজে আসবে না। তাই চব্বিশে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অভূতপূর্ব যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকার উপযোগী করে তাদের দায়িত্ব পালনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সবার এ কথা মনে রাখতে হবে, পুলিশ সদস্যরা সম্মুখসারির। তাদের অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না।