ফিলিস্তিন শুধু একটা নাম বা কোনো একটা দেশ নয়; এই নামটি উচ্চারণের সাথে সাথে আমাদের মনে ভেসে ওঠে একটি রক্তাক্ত ইতিহাস, অমানবিক নির্যাতন আর শোষণের বেদনাদায়ক ভয়াবহ চিত্রগুলো। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম ফিলিস্তিনের মাটি রক্তে রঞ্জিত হয়ে আসছে এবং এখনো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। কতশত মায়ের বুক খালি হয়েছে, কতশত সন্তানের মাথার ওপর থেকে বাবা-মায়ের ছায়া সরে গেছে তা কল্পনার বাহিরে। এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়- এভাবে আর কত? আর কত লাশ ঝরবে এই পবিত্র ভূমিতে? কেন সমাধানের পথে আমরা এগোতে পারছি না? আবার কেন-ই বা শান্তির পথে আমরা পা বাড়াতে পারছি না? সেই ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই সংকটের মূলে রয়েছে ফিলিস্তিনের মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার এক দীর্ঘ ইতিহাস। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই ভূখণ্ডের উপর শুরু হয় একের পর এক ভয়াবহ নির্যাতন। প্রতিদিন সেখানে নতুন নতুন মানবিক বিপর্যয়ের জন্ম হচ্ছে। ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর ইসরাইলের বোমা হামলা, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, শিশু ও নারীদের ওপর নির্যাতনের যে ধারা প্রতিনিয়ত চলছে তা মানবতার চরম অপমান এবং আন্তর্জাতিক নীতির সঙ্গে পুরোপুরি অসঙ্গতিপূর্ণ। ফিলিস্তিনের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়- এখানে প্রতিনিয়ত ঘটছে দখলদারিত্ব, আগ্রাসন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো একেকটি ঘটনা। একদিকে রয়েছে ইসরাইলি দখলদার শক্তি, যারা বিশ্বের অন্যতম আধুনিক ও শক্তিশালী সামরিক শক্তি দ্বারা সজ্জিত; অন্যদিকে রয়েছে নিরস্ত্র এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি জনগণ। তাদের অস্ত্র রয়েছে শুধু তাদের আশা, ভালোবাসা এবং নিজেদের জন্মভূমিতে বেঁচে থাকার মতো কঠিন একের পর এক সংগ্রাম।
কিন্তু এই সংগ্রাম প্রতিনিয়ত দমন করা হচ্ছে ইসরায়েল থেকে আসা গোলাবারুদ আর বুলেটের মাধ্যমে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিন ইস্যুতে অনেক প্রস্তাব পাস করেছে, তবে তা বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। ইসরাইলের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের একাংশের সমর্থন; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এই সংঘাতকে আরও প্রকট করে তুলছে। অন্যদিকে আরব বিশ্বের একতা এবং কার্যকর পদক্ষেপের অভাবও ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার পথে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করছে। এ যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফিলিস্তিনের শিশুরা। একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে তার সন্তানদের উপর কিন্তু ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ যেন ধ্বংসের মুখে। এই শিশুদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি অপূরণীয়। যেই বয়সে শিশুদের স্কুলে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করার কথা, সেই বয়সে তারা শিখছে বাঁচার মতো একটা কঠিন সংগ্রাম। এখন ফিলিস্তিনের জনগণের দীর্ঘদিনের যন্ত্রণার অবসান ঘটাতে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সুনির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং ইসরাইলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এছাড়াও বিশ্বের সব রাষ্ট্রগুলোকে এগিয়ে আসা উচিত। যতক্ষণ বিশ্বব্যাপী সচেতনতা এবং কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে নিরীহ মানুষের রক্তপাত বন্ধ হবে না। লেখক : রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ (২০২৩-২৪), শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।