চীন আমাদের পরীক্ষিত বন্ধুই নয়, গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগীও। তার অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তার বহু বড় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গৃহীত হয়েছে এবং সে সবের বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে চীনের প্রস্তাব ও অর্থের প্রতিশ্রুতি আছে। এ প্রস্তাব ও প্রতিশ্রুতি কার্যকর হলে দেশের উন্নয়নের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের পরিধির আরো প্রসারণ ঘটতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৮ মার্চ চীন সফরে যাচ্ছেন। তার এ সফরকে দু’দেশের সম্পর্কোন্নয়ন ও সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, সব ধরনের সহযোগিতা চীনের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ রাখা দরকার, চীন অতীতে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; কিন্তু পতিত স্বৈরাচার ভারতের প্ররোচনায় সেসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে অনেক ক্ষেত্রে অনীহা প্রদর্শন করেছে। শেষ দিকে চীন সহায়তায় টান দেয়ার নীতিও নিয়েছিল। গত বছর শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় চীনের কাছ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তার আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও চীন দিয়েছিল মাত্র ১৪ কোটি ডলারের আশ্বাস। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে চীনের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি হয়নি। এ সহায়াতাও দূরঅস্ত। বাস্তবতার এই প্রেক্ষাপটেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরকে গুরুত্ববহ হিসাবেই দেখা হচ্ছে। চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার পরিচালিত প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে চীন আরো সহায়তার তাকিদ অনুভব করবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিভঙ্গ অর্থনীতি সংগঠন ও স্থবির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল করার ক্ষেত্রে চীন সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা ও অবদান রাখতে পারে। রাখবে বলেই আমাদেরও দৃঢ় বিশ্বাস। প্রসঙ্গত বলা আবশ্যক, আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটা বিশেষ শংকাও অনুভব করছি। ২০২৬ সালে আমাদের এলডিসি থেকে উত্তরণ। এই উত্তরণের বিবিধ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, এলডিসি উত্তরণের পর দেশের রফতানি খাতে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে। এটা অর্থনীতির ওপর বিরাট আঘাত। এই ক্ষতি মোকাবিলায় আমাদের উন্নয়নযাত্রা যেমন জোরদার করতে হবে, তেমনি চীনের মতো বন্ধু দেশের উদার ও অকৃত্রিম সহযোগিতাও আবশ্যক হবে।