শক্তিশালী ও স্বাধীন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বাস্তবায়নে লোকবল নিয়োগ, জলাশয় ভরাট বন্ধে দেশের সব জলাশয় চিহ্নিতকরণ, সীমানা নির্ধারণ ও খননের উদ্যোগ নেয়া উচিত। সেই সাথে আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের সব নদীর উপর থেকে বাঁধ অপসারণ করা প্রয়োজন। এর বাইরে নদীর নাব্যতা সংকট দূর করতে নতুন বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে অবিলম্বে সারা দেশের নদী খনন, সব নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ দখলদারত্ব উচ্ছেদে পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় জলাধারগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা একটি অতি জরুরি কাজ। কিন্তু দেশে এসব জলাধার বিশেষ করে নদ-নদী দখল-দূষণে এখন মরণদশায় রয়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, অনেক নদ-নদী এরইমধ্যে আমাদের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, নদীবিনাশী প্রকল্পে এরই মধ্যে দখলে-দূষণে প্রাণ হারিয়েছে দেশের শতাধিক নদী। জীবিত যে নদীগুলো রয়েছে- তার মধ্যে নাব্যতা সংকটে ৯০ শতাংশ। বর্তমানে দেশে এক হাজার আটটি নদী থাকলেও শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শতভাগ নদী এখন দখল-দূষণের শিকার। বর্তমানে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন অভিভাবকহীন থাকায় নদীগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকা বিভাগে ১৬৮টি, বরিশাল ৯০টি, খুলনা ১২৪টি, রাজশাহী ১১০টি, রংপুর ২৬৮টি, ময়মনসিংহ ১৩৫টি ও সিলেট বিভাগে ৩৭টি নদী রয়েছে। এর মধ্যে সারা দেশে ২৪ হাজার ১৪০ কিলোমিটার নদীপথে জলরাশি প্রবাহিত রয়েছে।
স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আমলে অনেক মন্ত্রী, এমপি, উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তি নদী দখলের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। এ জন্য তখন নদীরক্ষায় সফল হওয়া যায়নি। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো- নতুন বাংলাদেশে এখনো আমরা এ দখলদারত্ব বন্ধ করতে পারিনি। উদ্ধার বা নিয়ন্ত্রণ দূরে থাক দখলমুক্ত নদীগুলো ফের দখলের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় নদীরক্ষা কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করা হয়। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর আট মাসের বেশি সময় ধরে কমিশনে নেই চেয়ারম্যান। ফলে আরো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে দেশের সব নদ-নদী। এ আট মাসেও দখলদারদের পূর্ণ তালিকা তৈরি করা হয়নি। আসলে নদী রক্ষায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখন দৃশ্যমান নয়।
দখলদারদের তালিকা করতে না পারার ব্যর্থতায় বর্তমানে দেশজুড়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে নদী দখল শুরু হয়েছে। একই সাথে নদীরক্ষা কমিশনে চেয়ারম্যানের পদশূন্য থাকায় আপাতত নদীরক্ষায় সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগে নদ-নদী দখলকারী প্রভাবশালীরা আবারো তৎপর হয়ে উঠেছেন।
আমরা মনে করি, শক্তিশালী ও স্বাধীন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বাস্তবায়নে লোকবল নিয়োগ, জলাশয় ভরাট বন্ধে দেশের সব জলাশয় চিহ্নিতকরণ, সীমানা নির্ধারণ ও খননের উদ্যোগ নেয়া উচিত। সেই সাথে আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের সব নদীর উপর থেকে বাঁধ অপসারণ করা প্রয়োজন। এর বাইরে নদীর নাব্যতা সংকট দূর করতে নতুন বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে অবিলম্বে সারা দেশের নদী খনন, সব নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ দখলদারত্ব উচ্ছেদে পদক্ষেপ নিতে হবে।