ঢাকা বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

২৬ মার্চ-রক্ত ঋণে আবদ্ধ বাংলাদেশ

এএইচ খান রতন
২৬ মার্চ-রক্ত ঋণে আবদ্ধ বাংলাদেশ

৫৪তম স্বাধীনতা দিবসে রাজনৈতিক মতপার্থক্যগত কারণে সমগ্র জাতি আজ দ্বিধাবিভক্ত সময় পার করছে। স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পর আজকের এই অপ্রত্যাশিত চিত্র নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক। জাতীয় ক্রান্তিকাল না হয়ে আজকের এ দিবসটি হতে পারত আনন্দঘন উৎসবমুখর সার্বজনীন সম্মিলিত উৎসব! কিন্তু, দিবসটি পার করছি নানা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক আর আশঙ্কার মধ্য দিয়ে।

দুঃখজনক হলেও একথা সত্যি যে, স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমাদের দেশাত্মবোধ প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে আছে! অপ্রত্যাশিতভাবে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি ও যুক্তিতে আমরা আজও লড়াকু মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এ অনাক্সিক্ষতের দায় কার তার উত্তর খুঁজতে গেলে বহু, কিন্তু ও কেন এসে সামনে দাঁড়ায়।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে স্বাধীনতা লাভ করা পৃথিবীতে কোনো জাতি হয়তোবা খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পরও জাতীয় ইতিহাস মুছে ফেলার যুক্তি খুঁজে বেড়ায়। ভাবতে অবাক লাগে যে, বিষয়টি নিয়ে অপরিনামদর্শী একটা গোষ্ঠী রীতিমতো মিটিং মিছিল বক্তব্য বিবৃতিতে রাজপথ কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। নতুন প্রজন্মের মগজধোলাইয়ে হাতে নিয়েছে নানামুখী অনাক্সিক্ষত কর্মপরিকল্পনা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন কি তাহলে ভুল ছিল?

ইতিহাস তা নয়, যা কেউ মনের মাধুরী মিশিয়ে রচনা করে; ইতিহাস তা,- সহস্রাব্দ পরেও যা নিজেই নিজেকে নির্ভুল বর্ণনা করে। ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত যে কোনো মহৎকর্ম অন্ধকারেও আলো ছড়ায়। প্রাগৈতিহাসিক কাল হতে সভ্যতার ধারাবাহিকতায়, আত্মত্যাগের মূল্যায়ন, ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষী হয়ে অমরত্ব লাভ করে। সুতরাং কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয়, জাতীয় ঐতিহ্যগত কারণে, জাতির ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহ, যে কোনো জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব কোনো মনোপলি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়;- বরং তা সময় বা কালের উপর বর্তায়।

এ কারণেই মানব সভ্যতার প্রারম্ভিক কাল হতে আজকের আধুনিক বিশ্বায়ন পর্যন্ত, সভ্যতার ধারাবাহিকতায় অসংখ্য ছন্দ পতনের পরও, মানব ইতিহাসের প্রতিটি ধাপ স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত। বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আজ তেমনি ঐতিহাসিক একদিন, যেদিন মহাকালের গর্ভে প্রসব বেদনার শুরু হয়ে, দীর্ঘ নয় মাস পর পৃথিবীর কোলে জন্ম নেয় শিশু রাষ্ট্র বাংলাদেশ। আজ ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। চুয়ান্ন বছর পূর্বে বহু প্রাণ আর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দিবসটি বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্য পূর্ণ। বাঙালির জাতীয় জীবনে দিবসটির গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের অপরিনামদর্শী ফর্মূলায়, ভারত- পাকিস্তান নামে দ্বিখণ্ডিত ভূখণ্ডে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তেইশ বছরে নানা চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে, ৭১-এ তৃখণ্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বমানচিত্রে ঘটে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান। ৪৭ এর ১৫ আগস্ট মধ্য রজনীতে, -ভাষা, সংস্কৃতি, পরিধেয়, খাদ্যাভ্যাস ও সামাজিকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করে, শুধু মাত্র ধর্মীয় মেলবন্ধনের ভিত্তিতে, হাজারো মাইলের অধিক ব্যবধানে অবস্থান করা, বিজাতীয় দুটি ভূখণ্ড এক সুতোয় না গেঁথে, দেশ ভাগের মহাযজ্ঞটি যদি বাস্তবতার নিরিখে করা হতো, তাহলে হয়তোবা আজকের ‘২৬ মার্চ’ স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত। একশত নব্বই বছরের ব্রিটিশ দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্ত জাতি, এক বছর যেতে না যেতেই পাকিস্তানি বৈষম্যের উপলব্ধি আচ করতে শুরু করে। ৪৭-এর দেশ ভাগের পর ৪৮ সালেই প্রথম, মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষায়, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে বাধ্য হয়ে প্রতিবাদী মেজাজে গা ঝারা দিয়ে জানান দিতে হয়, আমরা আছি, ইচ্ছে করলেই তোমরা একটা কিছু করতে পার না। সে দিনের ভাষা রক্ষা আন্দোলনই যে, পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেবে, পর্যায়ক্রমে তা স্পষ্ট হতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানের অসংখ্য দ্বিমুখী নীতি; অর্থনৈতিক বৈষম্য, চাকরিতে নিয়োগ, প্রশাসনিক বৈষম্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন বাজেট, বিনিয়োগ বৈষম্য, সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ, সিভিল এডমিনিস্ট্রেশনসহ সব ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণের উপনিবেশিক নীতি গ্রহণ করে পশ্চিম পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার। সব বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ছিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার একক ক্ষমতা। রাষ্ট্রীয় সব পরিকল্পনা প্রণীত হতো কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরে। সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব না থাকায়, পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থান্বেষী মহল, কৌশলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে শুরু করে। সম্পদ বিভাজন বৈষম্যের ক্ষেত্রে প্রতিবাদের সুযোগ না থাকায়, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্ভাবিত ফর্মূলা ছিল,- গোটা পাকিস্তানের যে কোনো অংশে উন্নয়ন বা বিনিয়োগ সামগ্রিকভাবে পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য উন্নয়ন বলে বিবেচিত হবে। এ অবাস্তব কল্প তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার প্রণীত প্রকল্পগুলোতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট বৈষম্য নীতি অনুসরণ করা হয়।

৪৭-এর দেশ বিভাগের পর হতে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত মোট তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গৃহীত হয়। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাটি ছিল ১৯৫৫/৫৬ সাল হতে ৫৯/৬০ সাল পর্যন্ত। এ পরিকল্পনায় পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নে সোয়া তিনশত কোটির কিছু বেশি রুপির বরাদ্দ দেয়া হয়; যার মাত্র সোয়াশ’ কোটি রুপি ব্যয় করা হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান উন্নয়নে। অপরদিকে পশ্চিম পাকিস্তান উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় পাঁচশ’ কোটি রুপি। অথচ জনসংখ্যা অনুপাত ও প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস পাট ছিল পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার। এভাবে প্রতি বছর কম করে হলেও চার-পাঁচশত গুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হতো পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও একই কৌশলে বৈষম্যনীতি পরিলক্ষিত হয়। পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের এহেন কর্মকাণ্ডে এরইমধ্যে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে। একই পদ্ধতিতে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার নকশা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলে, বজ্র কঠিন প্রতিবাদের মুখে, আইয়ুব খান।

তখন বাধ্য হয়ে উভয় অঞ্চলে বৈষম্যনীতি অবসানের ঘোষণা দিয়ে একটি অর্থ কমিটি গঠন করেন। উক্ত কমিটির রিপোর্টে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলে জনসংখ্যার ভিত্তিতে সম্পদ বিভাজনের কথা বলা হলেও, তা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। এভাবেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অর্জিত অর্থ, কৌশলে ব্যয় হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তান উন্নয়নে। এতকিছুর পরও দুই পাকিস্তান একীভূত থাকার সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছয়দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। কিন্তু, আইয়ুব খান তা মানতে গড়িমসি করে এবং এই ছয় দফাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুসহ পঁয়ত্রিশজনকে আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। মূলত এই ছয় দফাই দুই পাকিস্তানের চূড়ান্ত পরিণতির কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয় ২৫ মার্চ মধ্য রজনীর পর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে।

নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির উপর শুরু করে নির্মম গণহত্যা। যার চূড়ান্ত পরিণতি ৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।

শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধীকার আদায়ের আন্দোলন অবশেষে একদফা স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়, যার ধারাবাহিকতা ছিল, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর সাধারণ নির্বাচন। অবশেষে ৭১-এর ৭ মার্চ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু, তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে, লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে তেজদীপ্ত কণ্ঠে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগামের ঘোষণা দেন। কালজয়ী ভাষণের মাধ্যমে সুকৌশলে জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত প্রস্তুতির আহ্বান জানান তিনি। জনসভায় উপস্থিত দেশি-বিদেশি মিডিয়া ও পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার যা বুঝে নেয়ার, তা বুঝে নেয়।

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর দেশের মুক্তিপাগল জনতা ভেতরে-বাইরে যে যার মতো প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার প্রশাসনিক ছদ্মাবরণে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আধাসামরিক অস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সব ব্যক্তিবর্গকে নিরস্ত্র করার কৌশলী নীতি গ্রহণ করে। চট্টগ্রাম বন্দরে সামরিক সরঞ্জামের চালান খালাস করতে শুরু করে অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে। একদিকে সরকারি বৈধতার সুযোগে পাকিস্তান সামরিক শক্তির বাঙালি দমন অভিযানের প্রস্তুতি, অন্যদিকে নিরস্ত্র বাঙালির কোমরে গামছা হাতে বাঁশের লাঠির অপ্রচ্ছন্ন মহড়া। মাত্র বিশ দিনের ব্যবধানে, পঁচিশ মার্চ দিবাগত-রাত, অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির উপর শুরু হয়, ইতিহাসের সবচেয়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর চালানো রক্তের হোলিখেলার ধারা গিয়ে মিশে বুড়িগঙ্গার জলস্রোতে। বিচক্ষণ বঙ্গবন্ধু এরই মধ্যে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নানের কাছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠিয়ে চট্টগ্রাম বেতারে জাতির উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। কালবিলম্ব না করে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র ও মাতৃভূমি রক্ষার স্বাধীনতা যুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ।

অর্ধশতাব্দী পেরিয় আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের আজ ৫৪তম দিবস। আত্মমর্যাদার প্রশ্নে সঙ্গত কারণেই ব্রিটিশ দাসত্ব ও পাকিস্তানি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা রক্ত দিয়েছি জীবন দিয়েছি। দেশের জন্য মা তার সন্তান হারিয়েছে, নববধূ স্বামী হারিয়ে বিধবা হয়েছে, সন্তান পিতাকে হারিয়ে এতিম হয়েছে। অসংখ্য পরিবার সর্বস্ব হারানোর পরও শোককে শক্তিতে পরিণত করেছে। কেউ বা পরিবারের শহিদের চূড়ান্ত গন্তব্যের ঠিকানা আজও পর্যন্ত জানে না। অজানা কোনো বদ্ধভূমিই হয়তো তাদের শেষ ঠিকানা। তা হোক! দেশের জন্য মানচিত্রের জন্য জীবন দিয়ে গেছে, তাতে দুঃখ নেই। কিন্তু কেন? এ প্রশ্ন আছে বৈকি! যার উত্তর দেয়ার কেউ নেই! এটা কি সেই দেশ? যার জন্য রক্ত দিয়েছে এদেশের মানুষ? এটা কি সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা, যার জন্য সম্ভ্রম হারিয়েছে আমার মা-বোন? মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নে আঁকা ছবির মতো দেশ কি এটাই? নাহ!, মোটেই না! সর্বত্র কি দেখছি এসব? যে দাসত্ব ও বৈষম্য মুক্তির লোভ দেখিয়ে মা-বোনের সম্ভ্রম আর ত্রিশ লাখ প্রাণ বিসর্জিত হয়েছিল, কোথায় সেই দেশ? শিশু আসিয়ার উপর পৈচাশিক বিভৎসতায় তার অপ্রত্যাশিত চলে যাওয়া কি আমাদের বিবেকবোধকে আদৌ নাড়া দিতে পেরেছে? একটা ভূখণ্ড অর্জনই কি স্বাধীনতা? বলতে দ্বিধা নেই! চারিদিকে যা দেখছি যা ঘটছে তা কারোই কাম্য নয়! কিন্তু কেন ঘটছে? গত ৫৪ বছরে আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে, শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, গবেষণা, সব ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হতে আমাদের অবস্থান যোজন যোজন দূরত্বে।

দুর্নীতি ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য আমাদের জাতীয় উন্নয়নের সব সমীকরণ স্তব্ধ করে দিয়েছে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অন্তত নিরাপদ বাংলাদেশ গড়া আমাদের সবার দায়িত্ব। কেননা, আমরা রক্তঋণে আবদ্ধ এক জাতিরাষ্ট্র যার নাম ‘বাংলাদেশ’।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত