চিকিৎসাসেবা মানুষের মৌলিক অধিকারের একটি। অসুস্থ হলে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার চিকিৎসা পাওয়ার কথা। কিন্তু অবস্থা এমন যে, অর্থের ওপর চিকিৎসা পাওয়া অনেকটা নির্ভর করে। যার অর্থ নেই তার জন্য ভালো চিকিৎসাসেবা পাওয়া যেন অসাধ্য। বাস্তবতা হলো সমাজের গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষ চিকিৎসা প্রাপ্তিতে তাদের অসন্তুষ্টি নীরবে সহ্য করেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তিতে মানুষের অন্তোষের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের অনুরোধে এই জরিপ করা হয়। বিবিএসের জরিপে বলা হয়েছে, গত বছর ৩৯ শতাংশ মানুষ সরকারি হাসপাতাল থেকে কোনো চিকিৎসাসেবা নেননি। সেবাগ্রহীতার তিনজনের একজন মনে করেন, এসব হাসপাতালে চিকিৎসার মান খারাপ।
চিকিৎসাসেবায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালে খরচ অত্যধিক বেশি, যা সাধারণ মানুষের বহন করা কষ্টসাধ্য। কখনও কখনও দুঃসাধ্য। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে কিছুটা অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও চিকিৎসার সেবার মান যে বাড়েনি তা বলাই বাহুল্য। এর নজির বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ। আশার কথা, আকণ্ঠ সমস্যায় নিমজ্জিত দেশের চিকিৎসা খাত সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার যে কমিশন গঠন করেছে তা আশাব্যঞ্জক।
স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় পার হলেও দেশের চিকিৎসা খাত কেন অবহেলিত তা শনাক্ত করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। খুঁজে বের করার সময় এসেছে, কেন একই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখায় ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের অভিযোগ ওঠে। স্বাধীনতা-উত্তর আমরা আমাদের চিকিৎসাসেবার দুর্বলতা শনাক্ত করে এখনও সেই সংকট দূর করতে পারিনি। কিংবা মানোন্নয়নে মনোযোগ দেইনি। সঙ্গত কারণে আমাদের চিকিৎসাসেবার সংকটের সুযোগ নিয়ে পাশের দেশগুলোতে বাংলাদেশি রোগীদের নিয়ে রমরমা চিকিৎসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। আমরা খুব বিস্মিত হই; যখন দেখি রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছর চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বিকল পড়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে জেলা সদরের হাসপাতালগুলোর অবস্থা আরো নাজুক। যেন দেখার কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সরকারি হাসপাতালে সেবা বন্ধ রেখে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে বাধ্য করতেই যেন বসে থাকেন। ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর গঠিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের হাতে সুবর্ণ সুযোগ এসেছে দেশের জনস্বাস্থ্যের সমস্যা এবং সংকট চিহ্নিত করে তা নিরাময়ের উপায় বাতলে দেয়ার। দেশে একটি আত্মনির্ভরশীল চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে উঠুক, সেটি সবার প্রত্যাশা।