ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈদযাত্রায় সতর্কতা

নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক ভ্রমণের জন্য জরুরি নির্দেশিকা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক ভ্রমণের জন্য জরুরি নির্দেশিকা

ঈদ উৎসব মানেই আনন্দ, উৎসাহ এবং পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার এক দুর্দান্ত সুযোগ। তবে, ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষ নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ি বা অন্য কোথাও যাত্রা করেন, যার ফলে সড়ক, নৌপথ, রেলপথ এবং আকাশপথে ব্যাপক ভিড় তৈরি হয়। যাত্রাপথের এই ভিড় ও বিশৃঙ্খলা অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করতে কিছু জরুরি সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সড়কপথে ঈদযাত্রার সতর্কতা : সড়কপথে ঈদযাত্রা সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম। কিন্তু অতিরিক্ত যানবাহন, তাড়াহুড়া এবং ট্রাফিক আইন না মানার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ঈদের সময় বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই সড়কপথে যাত্রার আগে ও চলার সময় কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত।

যাত্রার আগে প্রস্তুতি পরিকল্পিত যাত্রা : যাত্রার তারিখ ও সময় আগেভাগে ঠিক করে নিন এবং সম্ভাব্য যানজট এড়ানোর জন্য বিকল্প পথ নির্ধারণ করুন।

গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা : ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরসাইকেলে ভ্রমণ করলে অবশ্যই ব্রেক, টায়ার, হেডলাইট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অংশগুলো ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করুন।

বাস বা মাইক্রোবাস নির্বাচন : ভালো মানের, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও অনুমোদিত পরিবহন সংস্থা থেকে টিকিট সংগ্রহ করুন।

সঠিক কাগজপত্র : গাড়ির লাইসেন্স, ইনস্যুরেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন।

যাত্রার সময় করণীয় : নিরাপদ গতি বজায় রাখুন, অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং থেকে বিরত থাকুন, কারণ ঈদের সময় রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকে।

সাবধানতার সঙ্গে রাস্তা পার হোন : হাইওয়েতে চলার সময় সড়কের নিয়ম মেনে চলুন এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করুন।

বিরতি নিন : দীর্ঘ ভ্রমণের সময় চালক যেন প্রতি দুই-তিন ঘণ্টা অন্তর বিশ্রাম নেন, এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে।

ফোন ব্যবহার এড়ান : চালকদের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করা অত্যন্ত বিপজ্জনক, তাই গাড়ি চালানোর সময় এটি এড়িয়ে চলুন।

অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করবেন না : যানবাহনে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী ও মালামাল বহন করা ঝুঁকিপূর্ণ।

ট্রেন যাত্রায় সতর্কতা : ট্রেন ভ্রমণ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হলেও ঈদের সময় অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই ট্রেনে ভ্রমণের সময় কিছু সতর্কতা মেনে চলা দরকার।

ট্রেনের টিকিট ও যাত্রার প্রস্তুতি : অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করুন: ঈদের সময় ট্রেনের টিকিট খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়, তাই আগেভাগেই টিকিট বুকিং দেওয়া জরুরি।

টিকিট জালিয়াতি থেকে সতর্ক থাকুন : টিকিট কালোবাজারি থেকে না কিনে সরকারি বা অনুমোদিত ওয়েবসাইট ও কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করুন। পর্যাপ্ত সময় হাতে রাখুন : যাত্রার দিনে স্টেশনে সময়ের অনেক আগেই পৌঁছান, যাতে অপ্রত্যাশিত দেরি এড়ানো যায়।

অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহন করবেন না : কম মালামাল নিয়ে ভ্রমণ করুন, যাতে চলাফেরা সহজ হয়।

ট্রেনে যাত্রার সময় করণীয়. ভিড় এড়িয়ে চলুন: ট্রেনের ছাদে বা দরজার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে ভ্রমণ করবেন না।

সতর্ক থাকুন : ট্রেন চলার সময় দরজার পাশে দাঁড়াবেন না এবং চলন্ত ট্রেনে উঠতে বা নামতে যাবেন না।

নিজের ব্যাগ ও মূল্যবান জিনিসপত্রের প্রতি নজর রাখুন : পকেটমার ও চোরদের হাত থেকে বাঁচতে ব্যাগ ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিরাপদে রাখুন।

জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করুন : যেকোনো সমস্যায় রেল পুলিশ বা হেল্পলাইন নম্বরে দ্রুত যোগাযোগ করুন।

নৌপথে ঈদযাত্রার সতর্কতা : নৌপথে ভ্রমণ আরামদায়ক হলেও অতিরিক্ত যাত্রী, অনিয়ন্ত্রিত জাহাজ ও ট্রলার চলাচলের কারণে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তাই নৌপথে ভ্রমণের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

লঞ্চ বা নৌযান নির্বাচনের সতর্কতা ভালো মানের ও অনুমোদিত লঞ্চ ব্যবহার করুন : নিরাপত্তাহীন ও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করা নৌযান ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

লাইফ জ্যাকেট পরিধান করুন : যাত্রাপথে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন, বিশেষ করে যদি নদী উত্তাল থাকে।

আবহাওয়া সম্পর্কে খোঁজ রাখুন : বৈরী আবহাওয়া থাকলে নৌযাত্রা এড়িয়ে চলুন। নৌযানে ভ্রমণের সময় করণীয়। অতিরিক্ত যাত্রী বহনকারী লঞ্চে উঠবেন না। নৌযানের নির্দিষ্ট আসনে বসুন এবং চলাচলে সতর্ক থাকুন। জরুরি নম্বর সংগ্রহ করুন : যেকোনো বিপদের সময় কোস্টগার্ড বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন।

আকাশপথে ঈদযাত্রার সতর্কতা : যারা বিমান ভ্রমণ করেন, তাদের জন্যও কিছু বিশেষ সতর্কতা মেনে চলা উচিত।

বিমানবন্দরে পৌঁছানোর প্রস্তুতি : সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছান, ফ্লাইট ছাড়ার অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানো জরুরি। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সঙ্গে রাখুন : পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, টিকিট, বোর্ডিং পাস ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখুন। বিমানে ভ্রমণের সময় সতর্কতা : সিটবেল্ট বাঁধুন: উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় অবশ্যই সিটবেল্ট বাঁধা রাখুন। কেবিন ক্রুদের নির্দেশনা মেনে চলুন: বিমান চলাচলের সময় কেবিন ক্রুদের নির্দেশনা মেনে চলা নিরাপদ ভ্রমণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুর্যোগকালীন নির্দেশিকা জানুন: জরুরি অবস্থায় কিভাবে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়, তা জেনে নিন। যেকোনো পরিবহনে ভ্রমণের সাধারণ সতর্কতা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন: করোনা বা অন্য সংক্রামক রোগ এড়াতে মাস্ক পরুন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখুন। অপরিচিত ব্যক্তির খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন: মাদক মিশ্রিত খাবার বা পানীয় খেয়ে অজ্ঞান পার্টির শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

পরিবারকে জানিয়ে চলুন : কোথায় যাচ্ছেন, কখন পৌঁছাবেন তথ্য পরিবারের সদস্যদের জানান। পরিশেষ বলতে চাই, ঈদযাত্রা আনন্দময় করার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা অত্যন্ত জরুরি। যেকোনো অসতর্কতা বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই যাত্রার আগে, চলার সময় ও শেষে সব ধরনের সতর্কতা মেনে চললে ঈদযাত্রা হবে নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও আনন্দঘন।

লেখক : সংগঠক, কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত