ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আমার ঈদ ভাবনা

ডা. সাকিরা নোভা
আমার ঈদ ভাবনা

টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে ‘ও মন রমজানের এই রোজার শেষে’ গানটি চলতে শুরু করেছে। চাঁদ রাত। তার মানে কাল ঈদ।

এটা মনে হতেই তো ছোট-বড়, ধনী-গরিব সবার মধ্যেই আলাদা একটা অনুভূতি তৈরি হয়। কারও জন্য দিনটি ভীষণ অন্যরকম হলেও অনেকের কাছেই অনুভূতি এক হওয়া সত্ত্বেও গতানুগতিক অতি সাধারণ দিনই বটে। আর তাই গানটির চরণে চরণে যে শব্দমালা রয়েছে মনে করিয়ে দেয় আনন্দকে শুধু নিজের জন্য আলিঙ্গন করা নয় অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া।

প্রতিটি মানুষই নিজ জীবনের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তিকে মিলিয়ে দেখতে চায়। সেই অনুযায়ী আমার জীবনে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি নিয়ে যখনই ভেবেছি দেখেছি প্রাপ্তির পাল্লাটাই ভারী।

এটি নিশ্চয়ই সুখকর। তবে প্রকৃত সুখ তখনই অনুভব করি যখন সুবিধাবঞ্চিত বা পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করতে পারি। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ইবাদত গোপনেই শ্রেয়। আর তাই দান সদকা যখন যাই করি না কেন নীরবেই করি। এটিও ইবাদতেরই একটা অংশ। তবে আজ একটি ঘটনা বলব সুখের সঠিক সংজ্ঞা বোঝানোর জন্য। দিন দুয়েক আগে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য উপহার সামগ্রী কিনতে যাওয়ার আগে মনে হল ওদের সাথে কথা বলে ওদের মনের চাওয়া কি তা একটু জেনে নিলে ভালো হয়। আমার ধারণা ছিল জামা কাপড় পেলে ওরা অনেক খুশি হবে। কিন্তু না। আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে ওরা বলল রং তুলি, ড্রয়িং বই এগুলো পেলে বেশি খুশি হবে। কারণ জামাকাপড় কোন না কোনোভাবে তারা পায়; কিন্তু রং তুলি দিয়ে মন ভরে ছবি আঁকার স্বপ্নটা কখনো পূরণ হয়নি।

নিজেরা গোল হয়ে বসে এরকম কিছু উপকরণের একটা ফর্দ তারা তৈরি করল আর সেই সাথে যুক্ত করল কাচ্চি বিরিয়ানি, আইসক্রিম আর চকলেট। তাদের ফর্দ মোতাবেক সবকিছু যখন তাদের হাতে তুলে দেই তখন কি যে আনন্দ তাদের চোখে মুখে! আর তখনই অনুভব করলাম জীবনে এত কিছু পেয়েও এতটা আনন্দ তো কখনো পাইনি। প্রকৃত সুখের সংজ্ঞা বোধ করি এটাই। সময়টা ছিল কিছুক্ষণ, করেছিও কিঞ্চিত পরিমাণ। কিন্তু জীবনভর কঠোর অধ্যাবসায় আর তপস্যা করে যা কিছু অর্জন করেছি, সেই সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে বহুগুণ।

লেখক : চিকিৎসক, গবেষক, উপস্থাপক, লেখক এবং সংগীতশিল্পী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত