অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরকালে গত শুক্রবার সকালে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তিনি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। বৈঠকের সময় শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনকে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ড. ইউনূস। বৈঠকে উভয় নেতা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এসময় বাংলাদেশে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, এই অভ্যুত্থান ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের পথ সুগম করেছে। জবাবে চীনের প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থনের পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ বৈঠক সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে। শি জিনপিংকে চীনের সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি সেখানে গ্রামীণ ব্যাংক ও সামাজিক ব্যবসার প্রচলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাস্তবিকই, ড. ইউনূস চীনে শুধু সম্মানিত ব্যক্তিই নন, সমাদৃতও বটে। প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার আগে চীনের অনেক স্থানে তার ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়েছে।
প্রেস সচিব ফেসবুকে দেয়া তার পোস্টে আরও লিখেছেন, দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নানা বিষয়ে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা হয়েছে। হয়েছে ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক আলোচনা। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি চীনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে শি জিনপিং বলেছেন, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশের উত্থাপিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চীন ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে। এর মধ্যে চীনা ঋণের সুদের হার হ্রাস ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার বিষয় রয়েছে। বিস্তারিত জানা না গেলেও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার আলোচনায় তিস্তা ইস্যুটিও স্থান পেয়েছে, আশা করা যায়।
এদিন দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি ও আটটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে। আরও জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে শি জিনপিংকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা বলাই বাহুল্য। জনবহুল এই দেশে পার্শ্ববর্তী দেশের একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়া সহজ ব্যাপার নয়। পরিতাপের বিষয়, বছরের পর বছর সেটিই করে আসছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে বিগত সরকারকে আমরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে দেখিনি। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান স্বল্পসময়ের মধ্যেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানানোসহ যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন, তা ব্যতিক্রমই শুধু নয়, অভাবনীয়ও বটে। প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীনের প্রেসিডেন্ট ইতিবাচক ও গঠনমূলক ভূমিকা রাখবেন বলে আমরা আশা করি।
ভূরাজনৈতিক ও কৌশলগত নানা কারণে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের এ বৈঠকটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশের জনগণ তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মতো দেশগুলোরও এ বৈঠকের দিকে দৃষ্টি ছিল। ভুলে গেলে চলবে না, চীন আমাদের বড় অর্থনৈতিক সহযোগী দেশ। দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে। এ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।