ঢাকা ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভর্তি পরীক্ষা

১৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা

সৈয়দ ফারুক হোসেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
১৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা

দেশের ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষে সরাসরি গুচ্ছ পদ্ধতিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯টি সাধারণ এবং ১০টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার অধীনে মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান এ তিনটি বিষয়বস্তুর ওপর পরীক্ষা নেওয়া হবে। এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি গুচ্ছ পদ্ধতিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হবে। উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ওপর ভিত্তি করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র থাকবে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় গত মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) ইউজিসির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিনটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে বড় চার বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ সমন্বিত ভর্তিতে আসবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। তারা প্রত্যেকেই পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। এ জন্য ১ ডিসেম্বরের বৈঠকে এ চার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ডাকা হয়নি। তবে ইউজিসি আশা প্রকাশ করছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নেতৃত্বে এ বছর থেকেই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আগে থেকেই জিপিএ’র ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘করোনার কারণে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই।’ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কথা চিন্তা করে সরাসরি ও সহজ উপায়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে তিনি উপাচার্যদের আহ্বান জানান।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘এই গুচ্ছ পদ্ধতিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ফলে করোনাকালে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের দেশের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটোছুটির প্রয়োজন হবে না। এতে একদিকে যেমন করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যাবে, অন্যদিকে তেমনি অভিভাবকদের আর্থিক সাশ্রয়ও হবে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্যদের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নির্ধারণ করবে। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থী একটি স্কোর পাবে। কেউ পাস-ফেল করবে না। ২০১৯ এবং ২০২০-এ এইচএসসি পাসকৃত শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে, তবে ২০১৯ সালের এইচএসসি পাসকৃত শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক। যেমন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ সালে এইচএসসি পাসকৃত শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে না। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এ কমিটির আর কোনো কাজ থাকবে না। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ নিজ একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তির শর্তাদি নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে আবেদন করবে। বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে। যেমন বিজ্ঞানের কোনো ছাত্র যদি কলা বা বাণিজ্যে পড়তে চায়, সেক্ষেত্রে কলা ও বাণিজ্য বিভাগের বিষয়গুলোতে তাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে আবেদন করবে। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই সে আবেদন করতে পারবে।’

সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ শর্ত ও চাহিদা উল্লেখ করে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করবে। ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত স্কোরের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ শর্ত ও চাহিদা মোতাবেক শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। এজন্য আলাদা করে কোনো ধরনের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে না। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ব্যাংক থেকে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার বিধিবদ্ধ নিয়মানুসারে ভর্তি পরিচালনা করবে। সম্মিলিত ইউনিটগুলোতে বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে। প্রতিটি গুচ্ছে একটি করে পরীক্ষা নেওয়া হলেও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিনটি (সায়েন্স, আর্টস এবং কমার্স) ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটি লিখিত ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করার পর বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’

উল্লেখ্য, কৃষিবিষয়ক সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর স্নাতক শ্রেণিতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বহু দিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। গত কয়েক মাস ধরে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি বহুবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘এ পদ্ধতির সঙ্গে তার সম্মতি রয়েছে, এর আগেও তিনি এ কথাই জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, একটি বিষয়ে আমরা একমত যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজে ভর্তি নেওয়া হবে।’

যে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি মৌসুমে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ লাখো শিক্ষার্থীর হয়রানির প্রসঙ্গ প্রতি বছরের আলোচনার বিষয়। তবে এবার করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এটি আরও মারাত্মক চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এ সময়টা কাটে ছাত্রছাত্রীদের টেনশনে। কোথাও ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের মধ্যে এ দুঃশ্চিন্তা কাজ করে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া, সেখানে থাকার চিন্তা সব মিলিয়ে বেশ বড় ধরনের সংগ্রাম করতে হয় এ সময়। একজন শিক্ষার্থী যে কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একটি বিষয়ে ভর্তি হয়। অথচ তাকে অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে দেশময় ঘুরে বেড়াতে হয় এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতে অর্থ ও সময় তো নষ্ট হয়ই, অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে ছোটাছুটির কষ্ট করতে হয় তার চেয়েও বেশি। জীবনযুদ্ধ থেকে কোনো অংশে কম নয় এ ভর্তিযুদ্ধ। প্রতি বছর যে হারে পাসকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা তার চেয়ে অনেক কম। তারপর আবার রয়েছে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়, পছন্দের বিষয় নির্বাচন। সব মিলিয়ে বিশাল চাপ। উচ্চশিক্ষার জন্য তাই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। কিন্তু এই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। সবচেয়ে জনপ্রিয় যে সমাধানটি গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আলোচনায় এসেছে তাহলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা। বর্তমানে শুধু মেডিকেল কলেজগুলোতে ও কৃষিবিষয়ক সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর স্নাতক শ্রেণিতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। অনেক আগে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধীনে কুয়েট, চুয়েট ও রুয়েটে (সে সময় যথাক্রমে বিআইটি খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী নামে এগুলো পরিচিত ছিল) একযোগে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মত থাকলেও আমাদের বিরাট এ কর্মযজ্ঞ যে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে আয়োজন করা হয়, তাদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিতে হবে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান মহামারির করোনাভাইরাসের মধ্যে সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পদ্ধতি চালু করা দরকার। একদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে দীর্ঘ পথের ক্লান্তি পাশাপাশি যানজট সমস্যা থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। বৈশ্বিক মহামারির এ কঠিন সময়ে অপরিচিত স্থান, আবাসন অনিশ্চয়তা, যাত্রার যানবাহন সমস্যা ইত্যাদিসহ মানুষিক দুশ্চিন্তা থেকে শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মুক্তি দিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ কেউ বিবেচনা করছে না। তবে শুধু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের স্বস্তি দূর করা নয় বা তাদের টেনশন অথবা ঝামেলামুক্ত করার লক্ষ্যেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু, বৈজ্ঞানিক এবং স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করে একটি স্থায়ী গ্রহণযোগ্য ভর্তি ব্যবস্থার স্বার্থে সমন্বিত ভর্তি ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, কারণ এর কোনো বিকল্প নেই। এর ফলে শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবে। প্রচলিত ধারণা এটাই যে, কোচিং ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পায় না। তাই অনেক অভিভাবকের মধ্যে নামিদামি কোচিংয়ে সন্তানকে ভর্তি করাতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল নন, তাদের ক্ষেত্রে ভালো কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয় না। তাই ভর্তি পরীক্ষা হতে হবে সমন্বিতভাবে। মেধা অনুযায়ী যে কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। যদি সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাহলে কোচিং সেন্টারগুলোর শুধু প্রচারণা নয়, ভর্তি বা কোচিং বাণিজ্যের হাতিয়ারও ধ্বংস করতে পারব আমরা। ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার পর আবার শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম তোলার পালা। আলাদা আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে আলাদা আলাদা ফরম তুলতে হয়। ফরম কেনার সাধ্যও অনেক পরিবারের থাকে না। সেখানেও গরিব মেধাবীরা পিছিয়ে পড়ে। একজন সামর্থ্যবান শিক্ষার্থী প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফরম তুলে ফেলে। কিন্তু তাতে তার হাজার হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। দেখা যায়, এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে শুরু করে শুধু ফরম তোলা পর্যন্তই মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়। যার সাধ্য অনেকের থাকে না। দেশের একেক প্রান্তে এক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবস্থিত। দেখা যায়, আজ ঢাকায় তো আগামীকাল সিলেট, পরশু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা। ফলে ঢাকার পরীক্ষা শেষ করে ছুটতে হয় গাড়ি ধরতে। বিশ্রাম নেওয়ার সময়টুকুও থাকে না। তার পর দিন হয়তো পরীক্ষা থাকে দেশের অন্য কোনো প্রান্তে। এভাবে ছুটতে গিয়ে যাদের গাড়ি যানজটে আটকে যায় তারা আটকে থাকে। তাদের জন্য কারও করার কিছু থাকে না। অথচ তাদের বিন্দুমাত্র দোষ নেই। আর মহামারি করোনাভাইরাসের এ আতঙ্কের সময়ে এ বিষয়টি সবচেয়ে আতঙ্কের ও দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকের জন্যও মঙ্গলজনক সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ দেশের বড় বড় শিক্ষাবিদ এ পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। তারা প্রচুর লিখেছেন এবং দেখিয়েছেন কেন এ পদ্ধতিটির প্রয়োগ আমাদের সন্তানদের জন্য প্রয়োজন। অনেকেই চাইছেন এর বাস্তবায়ন হোক; কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যে কোনো পদ্ধতি প্রয়োগে সমস্যা আসতে পারে, তবে তা সমাধান করতে আলোচনা করতে হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করে যে আমরা শুধু ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ঝামেলা লাঘব করতে চাই শুধু তাই নয়, পাশাপাশি তাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে চাই। বর্তমানে শুধু মেডিকেল কলেজগুলোতে এ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা প্রচলিত আছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা যদি সমন্বিতভাবে নেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব হবে না কেন। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় মূলত একই প্রশ্নপত্রে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে। যদি এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হতো, তাহলে কোনো পরীর্ক্ষার্থী সিলেট বা যশোর যে কোনো এক স্থান থেকেই অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা দিতে পারত। সেক্ষেত্রে মেধা তালিকা ও আবেদনের বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী করা হবে। এ কল্যাণকর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে এত বিলম্ব হবে কেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম ৪ বছরে নিজের সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হতে থাকে। একই সঙ্গে তাদের ভালোলাগার বিষয় সম্পর্কেও একটা ধারণা তৈরি হওয়া প্রয়োজন। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা এ ধরনের ধারণা তৈরি হওয়ার মতো পরিবেশ মোটেও পায় না। তার ওপর রয়েছে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে মা-বাবা, আত্মীয়-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবের চাপ। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা এক দিশাহারা অবস্থায় পড়ে যায়। এরই বিষময় ফল হচ্ছে দেশময় ছোটাছুটি করে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া। পছন্দের বিষয়েই যে পড়ালেখা করা উচিত, সে সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে হবে। একই সঙ্গে পছন্দের বিষয়ে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা আছে, তা জানানোর ব্যবস্থা থাকা দরকার। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েরসাইট যথেষ্ট তথ্যসমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। বর্তমান মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে তাদের কথা এবং পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার কথা ভেবে হলেও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা উচিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত