ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

একজন নোবেল বিজয়ীর পররাষ্ট্রনীতি ও বাংলাদেশ

রায়হান আহমেদ তপাদার
একজন নোবেল বিজয়ীর পররাষ্ট্রনীতি ও বাংলাদেশ

এ কথা স্বীকার করতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা যা-ই থাকুক, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। দেশের স্বার্থে যার সঙ্গে যেমন আচরণ করা দরকার তার সঙ্গে তেমন আচরণ করছে। এ নীতি অত্যন্ত কার্যকর এবং ফলপ্রসূ হচ্ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাস চার দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। জাতিসংঘের কোনো মহাসচিবের এত দীর্ঘ সফর বাংলাদেশে প্রথম। এই সফর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্যারিশমায় হয়েছে।

তিনি গুতেরাসকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের অনুকূলে একটা খেলা খেলে দিয়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেমন চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, তেমনি ভারতের কিছু সম্পর্ক রয়েছে। এই দুই দেশের প্রতি তো বটেই মিয়ানমারের দিকেও ড. ইউনূস রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অত্যন্ত কৌশলী চাল চেলেছেন। এর প্রভাব অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে উপমহাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে এতদঞ্চলে দারুণ কূটনীতি অবলম্বন করেছেন। এর মধ্যে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের অসাধারণ সমন্বয় রয়েছে। তিনি বেশ কয়েকবার একটি কথা বলেছেন। এ কথার মধ্যেই উপমহাদেশে বাংলাদেশকে নিয়ে তার কৌশলগত ও প্রভাবগত কূটনীতি জড়িয়ে আছে। তিনি বলেছেন, নেপাল, ভুটান ল্যান্ডলকড কান্ট্রি, তাদের সমুদ্রবন্দর নেই। ভারতের সেভেন সিস্টার্সও ল্যান্ডলকড, তাদের সমুদ্রবন্দর নেই। কাজেই, এসব দেশ ও অঞ্চল বাংলাদেশের একাধিক সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারে। বাংলাদেশও এসব দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। তার এ কথা ভারতের পক্ষে মেলা কষ্টকর। আবার কিছু বলারও নেই। কারণ, ড. মুহাম্মদ ইউনূস উভয়পক্ষের পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতার কথা বলেছেন। আবার এর মধ্যে ভূরাজনীতির বিষয়টিও লুকিয়ে আছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস একমাত্র বৈশ্বিক ব্যক্তি যার সঙ্গ পেতে তামাম দুনিয়ার বুদ্ধিভিত্তিক মানুষরা উন্মুখ হয়ে থাকেন। সেখানে তাকে উপেক্ষা করাটা অনেকের মতো ভালোভাবে নেয়নি মার্কিন ধনকুবের সম্রাট ইলন মাস্ক। এর কয়েকদিন পর মাস্কের সঙ্গে বৈঠক ছিল মোদির। অথচ বৈঠকের ঠিক এক ঘণ্টা আগেই তিনি প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে তার আগ্রহের কথা জানান। সুযোগ পেলে ব্যবসায় বিনিয়োগের কথাও বলেন। এরপরই ইলন মাস্ক এক্সে প্রফেসর ইউনূসকে ফলো করে রাখেন। ইলন মাস্ক প্রফেসর ইউনূসের আহ্বানে এবার তিনি স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক আগামী ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে নিয়ে আসার কথা বলেছেন। এজন্য প্রতিনিধি দলও বাংলাদেশে এসেছে।

শোনা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য ব্যবসায়ীরাও ইউনূসের দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। মনে রাখা প্রয়োজন, এই ইলন মাস্ক এখন শুধু একজন ব্যবসায়ী নন, তিনি আমেরিকার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরামর্শক এবং আমেরিকার নীতি নির্ধারণীদের অন্যতম। আর তিনি চাচ্ছেন প্রফেসর ড. ইউনূসের থ্রি জিরো দুনিয়ার সবার কাছে পৌঁছে দিতে। ইউনূস শুধু যে সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন তা নয়, অন্যের জন্য কিছু কৃত্রিম সংকটও সামনে তৈরি করছেন।

এটাই বৈশ্বিক ক্রিটিক নেতার চরিত্র। মার্চের শুরুতে চোখ বড়ো করার মতো খবর আসে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দরবার থেকে। কী সেই খবর? আসলে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বাংলাদেশের ভূমিকা তেমন চোখে পড়ে না। পড়ার কথাও না। কারণ, আন্তঃকলহ সমাধানে যেখানে ত্রাহি অবস্থা, সেখানে রাজনৈতিক মঞ্চে নিজেকে হাজির করবে কীভাবে? এবার বাংলাদেশ নিজেকে হাজির করতে না চাইলেও বিশ্বমঞ্চই লাল কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে। শি জিনপিং ড. ইউনূসকে চার দিনের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ইউনূস আলোকিত করবেন বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলন। তার জন্য বেইজিং পাঠাবে বিশেষ এক বিমান। বলাবাহুল্য চীনারা এই বিমান সবার জন্য সবসময় পাঠায় না, কেবল মাত্র কৌশলগত কারণেই পাঠায়। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম এবং একমাত্র ঘটনা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিশেষ দিন বরাদ্দ করা হয়েছে ২৮ মার্চ।

অর্থাৎ উপদেষ্টার পৌঁছানোর দু’দিন পর। এই সফর চীনের অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। সফরটি কৌশলগত কারণেও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চীন ভারত প্রধানের জন্য কখনওই বিশেষ বিমান পাঠানোর অফার করেনি। বিশ্লেষকরা শি জিনপিংয়ের মগজ ধরতে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। ড. ইউনূস এখানেই থামছেন না, মে মাসে তিনি যাবেন জাপান। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষীক বৈঠক করার পাশাপাশি বাংলাদেশের উন্নতি, বিনিয়োগ ও জাইকা প্রসঙ্গে হতে পারে দীর্ঘ আলাপ। জুন মাসে যাবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজারের দেশ সৌদি আরবে। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম ভারত।

শ্রমবাজারে বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তাসহ নানা বিষয়ে বৈঠক করবেন দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদের সঙ্গে। ফলে সবদিক দিয়ে নরেন্দ্র মোদির মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছেন মি. ইউনূস। একথা সন্দেহাতীতভাবে সত্য দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বদলে যাচ্ছে। আর এই বদলের নেতৃত্বে হয়তো প্রথম সারির ভূমিকা রাখবেন প্রফেসর ইউনূস। ইউনূস শুধু যে প্রতিবেশী পরাশক্তিকে সামাল দিচ্ছেন তা নয়, তাকে সমাল দিতে হচ্ছে শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ মেরামতেও।

এই অন্তর্বর্তী সরকার সর্বশেষ ৬ মাসে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি গত বছরের এই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে চার বিলিয়ন ডলার, রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে ২ হাজার ১৪০ কোটি ডলার, দেশের পণ্যের ভর্তুকি বেড়েছে ১২ শতাংশ, বাফুফে থেকে ফিফার দেয়া নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেয়া হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের অনুরোধে। সামাল দিতে হয়েছে কমপক্ষে দেড় শতাধিক প্রতিবিপ্লব! মিয়ানমার যখন বাংলাদেশের চোখে আঙুল রেখে কথা বলছে, তখন বুঝতে অসুবিধা ছিল না এর পেছনে কে বা কারা কলকাঠি নাড়ছে। হিতে কখনও কখনও বিপরীত হয়, এখন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আগে ছিল ইয়াঙ্গুনের শাসন, এখন সেখানে আরাকান শক্তির রাজত্ব। এই পরিবর্তন শুধু মিয়ানমারকে ভাবনায় ফেলেছে তা নয়, ভাবনার সমীকরণে বসতে হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশকেও। ভাবছে বেইজিংয়ের শাসক জিনপিংও। কীভাবে জান্তা এবং বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অন্যদিকে দিল্লি ভাবছে সামরিক জান্তাদের মাধ্যমে মিয়ানমার নিয়ন্ত্রণে রাখবে। তবে কৌশলগতভাবে এগিয়ে বাংলাদেশ। সরাসরি যোগাযোগ করছে রাখাইনের আরাকান আর্মিদের সঙ্গে। ভারতের প্রভাবশালী ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ইউনূসের এই কৌশল শুধু বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে তা নয়, বরং ভারতের জন্য এক বিশাল কূটনৈতিক ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ যে পরিকল্পনায় সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে, ভারত এবং চীনের মাথাব্যথার কারণ ইউনূস। আরাকানের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ। আরাকান যদি রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে নিশ্চয়তা দেয় তাহলে বাংলাদেশও ভাববে তাদের স্বীকৃতি, রাষ্ট্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য, অর্থ ও অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়ে। আরাকান রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অর্থ হলো জান্তার পরাজয়, দিল্লির পরাজয়, বেইজিংয়েরও পরাজয়। এর ভেতর দিয়ে ভারত ও চীনের বঙ্গোপসাগর নিয়ে করা পরিকল্পনা ও শত শত কোটি ডলারের অপচয় নিশ্চিত। ড. ইউনূস ভারতের পররাষ্ট্রনীতির কারণে চীন যাচ্ছেন, চীনের কারণে যাচ্ছেন জাপান। জাপানকে কাছে রাখতে আমেরিকার টেবিলে বসছেন। এমন দূরদর্শী নেতা পেয়ে বিশ্ব মঞ্চ সত্যিই আলোকিত। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যখন ভারত ও চীনকে পাশে পাচ্ছে না বাংলাদেশ, তখনই জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সফরে ১ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেছেন কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। গুতেরেস ভারতের মিডিয়াকে চপেটাঘাত দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইফতার মাহফিলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একমাত্র সমাধান তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন’। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সুর মিলিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের কীভাবে দ্রুত তাদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান সরকার। এমন ইস্যু যখন তাজা তখনই চীন, জাপান, সৌদি আরবের আমন্ত্রণ। বিশ্বরাজনীতির ধারা ঠিক করতেই যেন ইউনূস ছুটছেন! ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের পরে যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, কেবল তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা এরইমধ্যে দিয়েছে ভারত। এমন একটা সময় সামনে হয়তো দেখতে পাব, বৈশ্বিক মঞ্চটা যখন ইউনূসের হবে, ভারত তখন সেখানে আশ্রয় নেয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হয়তো বাংলাদেশে পাঠাবে, নয়তো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে অন্য কোনো দেশকে ভাবতে বাধ্য হবে। সর্বশেষে বলা যেতে পারে, দেশের ভেতরেও প্রফেসর তার ক্লাস ঠিক রাখতে হবে, নয়তো ছাত্র-জনতা উত্তপ্ত হবে, ৩৬ জুলাই তৈরি করবে। রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে তার পরিকল্পনা অবশ্যই আছে, সেসব জাতির সামনে হাজির করা, মব দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা, ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। নয়তো রাষ্ট্রের কাঠামো ধসে পড়বে, বিচারব্যবস্থা যদিও তলানিতে। এসব ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য ভূমিকা থাকবে, একটি নির্বাচনব্যবস্থা দাঁড় করিয়ে বিজয়ী দলের কাছে রাষ্ট্রের হেফাজতের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া। এতদিন তিনি দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন না বলেই নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন করতে পারেননি, এখন তিনি তা করবেন। কারণ তিনি ভালো জানেন, দেশ আগে। দেশের মানুষ আগে। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারণে দেশের পররাষ্ট্রনীতি অনন্য উচ্চতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী তার অসামন্য গ্রহণযোগ্যতা বাংলাদেশের জন্য কাজটি সহজ করে দিয়েছে। একজন ব্যক্তি যে অনেক ব্যবধান করে দিতে পারেন, তা তিনি বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছেন। অন্তত তার দিকে তাকিয়ে বিশ্বের পরাশক্তি ও ধনী দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে আরও দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। তারা তাকে আস্থায় নিচ্ছে এবং সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত