ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি

বাংলাদেশকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি

দ্বিতীয়বারের নির্বাচনি ক্যাম্পেইনের সময় বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর অন্তত ১০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে ২ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্কবৃদ্ধির বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। দিনটিকে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘লিবারেশন ডে’ বা স্বাধীনতা দিবস বলে ঘোষণা করা হলেও ট্রাম্পের এই নয়া শুল্ক নীতি বিশ্ববাণিজ্য ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। লিবারেশন ডে-তে ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুসারে বাংলাদেশি সব পণ্যের উপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে, যা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দেশগুলোর পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশের সে সুযোগ কম। তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ও আন্তঃযোগাযোগ এক নতুন উচ্চতা লাভ করেছে। নতুন শুল্ক ব্যবস্থার অধীনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানের পথ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতের প্রধান বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেশের শিল্প বিনিয়োগের উপর অনেক বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে চলেছে। তবে প্রতিটি প্রতিকূল পরিস্থিতির একটা বিপরীত ইতিবাচক সম্ভাবনাও থাকে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্ট রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কার উপর যথাক্রমে ৪৬ ও ৪৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন শুল্ক নীতির ভারসাম্য কিছুটা বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে। তবে ভারত ও পাকিস্তানের শুল্ক বাংলাদেশের চেয়ে কম হওয়ায় তারা বাড়তি সুবিধা পেতে পারে। অবশ্য পরিবর্তিত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ড. ইউনূসের অর্ন্তবর্তী সরকারের গতিশীল কূটনৈতিক যোগাযোগের যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাতে উচ্চতর পর্যায়ে আলোচনা ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উপর আরোপিত শুল্কসহ রপ্তানি পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করা অসম্ভব নয়।

সেইসঙ্গে বাংলাদেশের গার্মেন্ট রপ্তানি বাণিজ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের উদ্যোগের উপর নতুন করে উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব এবং বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের প্রশ্নে সরকার, বিজিএমইএ এবং মার্কিন আমদানিকারকদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ও বৈষম্য দূরিকরণে ট্রাম্প প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে লবিং জোরদার করার উদ্যোগ নিতে হবে। মার্কিন শুল্ক আরোপের হার প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে মার্কিন নতুন শুল্কব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক পর্যালোচনা ও পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সরকারের কর্মক্ষেত্র ও সমঝোতার প্রশ্নে তিনি যথেষ্ট আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি মার্কিন অর্থনীতির জন্য কতটা সহায়ক হবে তা সময়ই বলে দেবে। নতুন বাস্তবতায় বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে। বিশেষত বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর উপর আরোপিত শুল্কের হার বেশি হওয়ায় এমনিতেই এর সুফল বাংলাদেশ পেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং তার সহকর্মীদের দক্ষতা ও আন্তরিক উদ্যোগে বাংলাদেশের সামনে নতুন বিনিয়োগ ও বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোই এ সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ। পতিত স্বৈরাচারের লুটপাট ও আর্থিক খাত ধ্বংসের বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত