ঢাকা শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজধানীতে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে

রাজধানীতে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে

ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীতে নেই যানজট। যানজটের অন্যতম বড় যে কারণ, ফুটপাতের দোকান এখনও পুরোপুরি খোলেনি। যানবাহনের সংখ্যা এবং চাপও কম। এতে রাজধানীতে স্বচ্ছন্দে চলাচল করা যাচ্ছে। এ চিত্র অনেকটা আধুনিক শহরের স্বাভাবিক চিত্রের মতো। সারা বছর যদি এ চিত্র থাকত, তাহলে স্বস্তির শেষ থাকত না। স্বাভাবিক ও মসৃণ চলাচল যেমন থাকত, তেমনি বায়ুমান ও পরিবেশ স্বাস্থ্যকর থাকত। ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর রাজধানীর এ চিত্র যে অচিরেই মিলিয়ে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই। আবার সেই অসহনীয় যানজট ও জনদুর্ভোগ নিশ্চিতভাবে ফিরে আসবে, যখন অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোদমে শুরু হবে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এখনো ফাঁকা সড়ক-মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট এবং সেতুতে উঠার মুখে যাত্রীবাহী বাসে যাত্রী তোলার জন্য থামিয়ে রাখা হচ্ছে। বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে দেখা যাচ্ছে এবং এলোমেলোভাবে থামিয়ে পুরো সড়কই অবরুদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। এক বাসকে আটকে রেখে আরেক বাসযাত্রী উঠানামা করতে গিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে এই চিত্র দেখা গেছে। এটা শুধু ঈদের ছুটির সময়ই নয়, ব্যস্ত সময়েও দেখা যায়।

রাজধানীর যানজট কমানো নিয়ে যুগের পর যুগ ধরে নগর বিশেষজ্ঞরা নানা পরামর্শ দিয়েছেন। পত্র-পত্রিকায় যানজটের চিত্র এবং বিশেষজ্ঞদের সমাধানের পরামর্শ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। তাতে কোনো লাভ হয়নি। ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে রাজধানীর সেবাদানকারী কোনো কর্তৃপক্ষই তা কানে তোলেনি। সমাধানের ন্যূনতম উদ্যোগও নেয়নি। তারা সমাধানের কথা এক কান দিয়ে শুনেছে, আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছে। একটি রাজধানীতে যানবাহন চলাচলের জন্য যে পরিমাণ সড়ক (আয়তনের প্রায় ২৫ শতাংশ) প্রয়োজন, তা ঢাকায় নেই। মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ রয়েছে। এই স্বল্প সড়ক ব্যবহারেরও পরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ নেই। ফুটপাত দখল, অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে তা আরও সংকুচিত হয়ে থাকে। ফলে যানজট একটি স্থায়ী সংকটে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বেপরোয়া চলাচল যানজটকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা যে এখন রাজধানীর জন্য বিষফোড়া হয়ে উঠেছে, তা সকলেই দেখছেন। এসব রিকশাচালক রাস্তার রাজা হয়ে ভিআইপি সড়কসহ মূল সড়কে অবাধে চলাচল করছে।

অন্তর্বর্তী সরকার শুরুর দিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা রাজধানীতে নিষিদ্ধ করলেও আদালত অনুমতি দিয়ে দেয়। আদালত কেন এমন সিদ্ধান্ত দিল, তা বোধগম্য নয়। এতে এসব রিকশা চালক আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা পাল্লা দিয়ে বাস ও অন্যান্য যানবাহনের সাথে চলছে। শুধু তাই নয়, যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটাচ্ছে। এগুলোর নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ ও অন্য কর্তৃপক্ষও উদাসীন হয়ে আছে। যানজটের আরেকটি কারণ হচ্ছে, রাজধানীতে গাবতলী, মহাখালি, সায়দাবাদের মতো আন্তঃবাস টার্মিনাল থাকা। সারাদেশ থেকে রাজধানীর ভেতর দিয়ে বাস প্রবেশ করায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এসব বাস টার্মিনাল মূল শহরের বাইরে সরিয়ে নেয়ার কথা বেশ কয়েক বছর ধরে শোনা যাচ্ছে। তবে তার বাস্তবায়ন আজ পর্যন্ত হয়নি। দেখা যায়, দূরগামী বাসগুলো সন্ধ্যার পর থেকে টার্মিনালের বাইরে মূল সড়কে দুই-তিন সারি করে পার্ক করে রাখা হয়। এতে মূল সড়ক সরু গলিতে পরিণত হয়। দেখা দেয় প্রচণ্ড যানজট। সন্ধ্যার পর বাস টার্মিনালগুলোতে গেলে এ দৃশ্য দেখা যায়। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো বিকার নেই। বছরের পর বছর ধরে যদি এ পরিস্থিতি চলতে থাকে, তাহলে যানজট নিরসন হবে কীভাবে?

প্রতি ঈদের ছুটিতেই এমন একটি প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়, যানজট নিরসনে ছুটির পর ফুটপাতে নতুন করে দোকান বসতে দেয়া হয় না।

কয়েক দিন তা চলার পর দেখা যায়, ধীরে ধীরে তা পুনরায় দখল হয়ে যায়। ফুটপাতে দোকান বসা নিয়ে এক ধরনের ইঁদুর-বেড়াল খেলা চলে। ফুটপাতে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজদের কাছে পুলিশ ও আইন পরাস্ত হয়। কেন হয়, তা বোধকরি নতুন করে বলার কিছু নেই। সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচলের ক্ষেত্রে অনেক সুন্দর সুন্দর নিয়মণ্ডকানুন ও আইন আছে। তবে তা কাগজে-কলমে রয়েছে, বাস্তবে প্রয়োগ নেই। সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে ইঞ্জিনচালিত প্রত্যেক যানবাহনকে বাধ্যতামূলকভাবে ট্যাক্স দিতে হয়। দেখা যাচ্ছে, ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রে এ নিয়মের কোনো বালাই নেই। রাজধানীসহ দেশজুড়ে লাখ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা চললেও তাতে ট্যাক্স বসানো হয়নি।

ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যদি সিটি কর্পোরেশন রেজিস্ট্রেশনসহ ট্যাক্স বসানোর কাজ এবং সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে, তাহলে হয়ত এসব বেপরোয়া রিকশার দৌরাত্ম্য কিছুটা কমত এবং শৃঙ্খলার মধ্যেও আসত। এ কাজটি করা অত্যন্ত জরুরি। এখন রাস্তা- ঘাট ফাঁকা থাকায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে যানজট কমানোর কাজটি সরকারকে অগ্রাধিকার দিয়ে করা দরকার। এভাবে আর চলতে পারে না। উপদেষ্টারা অনেকে অনেক বড় বড় কথা বলেন, লেকচার দেন। আমরা এখন আর এসব লেকচার শুনতে চাই না। কথার চেয়ে কাজ করে সড়ক-মহাসড়কের যানজট নিরসনে সরকারকে কঠোর হতে হবে। অসহনীয় যানজট থেকে মানুষকে নিষ্কৃতি দিতে হবে। সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত