বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো রেমিট্যান্স। প্রতি বছর লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিক কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দেশে পাঠিয়ে অর্থনীতিকে সচল রাখছেন। তবে, এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, যা তাদের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে। প্রশাসনিক জটিলতা, দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য, হুন্ডির প্রভাব এবং সরকারি সুবিধার অভাবে তাদের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এটি বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য রক্ষা, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ভোগান্তি : অপ্রতুল সেবা ও দালাল চক্র : প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশ যাওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের জটিলতা পোহাতে হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে হয়রানি, দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান, ভুল তথ্য প্রদানসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হন তারা।
অবৈধ হুন্ডি চ্যানেলের দৌরাত্ম্য : ব্যাংকিং চ্যানেলের তুলনায় হুন্ডি বা অবৈধ উপায়ে অর্থ পাঠানোতে বেশি লাভবান হলেও এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তবে, ব্যাংকিং চ্যানেলের ধীরগতি ও অতিরিক্ত চার্জের কারণে অনেকেই হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে বাধ্য হন। বিমানবন্দরে হয়রানি ও প্রতারণা : দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দর ও ইমিগ্রেশনে প্রবাসীদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। লাগেজ চুরি, অতিরিক্ত শুল্ক আদায়, প্রশাসনের দুর্ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় তাদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব : অনেক প্রবাসী শ্রমিক বিদেশে কাজ করার সময় ন্যায্য মজুরি পান না, নির্যাতনের শিকার হন, এমনকি অনেকে নিখোঁজও হয়ে যান। দেশে ফিরে তারা সরকারি কোনো সহায়তা পান না, যার ফলে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়।
সমাধানের উপায় : রেমিট্যান্স প্রেরণের সহজ ও আকর্ষণীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা তৈরি করা। মধ্যস্বত্বভোগী ও দালাল চক্র দমনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিতে সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি করা। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সহজ ঋণ সুবিধা প্রদান। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে, এই অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করা প্রবাসী শ্রমিকরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, যা তাদের জন্য যেমন কষ্টকর, তেমনি দেশের অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। তাই, সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত প্রবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া, যাতে তারা নিরাপদে এবং স্বস্তিতে কাজ করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন।