বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আগাম দুঃসংবাদ দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির হার ফের বেড়ে ডবল ডিজিটে পৌঁছে যাবে। বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে পারে। শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে অস্থিরতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তার ভোগ কমলে স্বাভাবিকভাবেই প্রবৃদ্ধির হার কমবে।
গত বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির বাংলাদেশের আবাসিক মিশনে ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) এপ্রিল ২০২৫’ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কমবে; তবে আগামী অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেতে পারে। এ প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির হার কমার কারণগুলোও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে নানা সংকটের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। কাজেই সংকট উত্তরণে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। রপ্তানি খাতে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি এ খাতে বৈচিত্র্য আনতে হবে।
এদিকে মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির হার এখন নিম্নমুখী ধারায় থাকলেও আগামী দিনে এ হার বেড়ে যাবে।
বস্তুত পাইকারি বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব, বাজারসংক্রান্ত তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে পারে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ-এর বৈঠকে নানা বিষয় আলোচনায় এসেছে। এসব আলোচনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া পদক্ষেপে কতটা প্রভাব ফেলবে, এটাই এখন দেখার বিষয়। আমরা মনে করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দেশের সার্বিক বিনিয়োগ পরিস্থিতিও বিবেচনায় রাখবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারকে এমনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে নতুন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হন। বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব না হলে দেশে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় দেশে সব শ্রেণির মানুষের উদ্বেগ বাড়ে। এ প্রবণতা রোধে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে।