ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশের নেতৃত্বে নতুন মাত্রা পাবে আঞ্চলিক সহযোগিতা

একেএম আতিকুর রহমান
বাংলাদেশের নেতৃত্বে নতুন মাত্রা পাবে আঞ্চলিক সহযোগিতা

গত ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত হলো ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন। শীর্ষ সম্মেলনের আগে ২ এপ্রিল বিমসটেকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এবং ৩ এপ্রিল বিমসটেকের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সদস্য সাত দেশের সরকার প্রধানরা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য ৩ এপ্রিল সকালেই ব্যাঙ্ককে পৌঁছেন এবং সম্মেলন শেষে ৪ এপ্রিল রাতে দেশে ফিরে আসেন।

শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নেতাদের সঙ্গেও বেশ কয়েকটি বৈঠকে তিনি মিলিত হন। সম্মেলনে আগামী দুই বছরের জন্য বাংলাদেশকে বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং প্রধান উপদেষ্টা তা গ্রহণ করেন। তিনি বিমসটেক সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। আশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের নেতৃত্বে আঞ্চলিক সহযোগিতা নতুন মাত্রা পাবে।

দুই. ‘সমৃদ্ধ, সহিষ্ণু এবং উন্মুক্ত বিমসটেক’ ছিল এবারের শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয়। সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল নিরাপত্তা ও উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ একত্রে মোকাবিলা করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা। উপস্থিত নেতারা তাদের বিবৃতিতে বিমসটেকের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতার অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ও উদ্যোগ উপস্থাপন করেন। তারা আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সংযোগ, পর্যটন, সংস্কৃতি বিনিময়, জলবায়ু কর্মকাণ্ড, সবুজ ও নবায়নযোগ্য শক্তি, টেকসই কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা বাড়াতে অগ্রগতি অর্জনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। সম্মেলনে গৃহীত ব্যাঙ্কক ঘোষণাপত্রে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার জন্য তাদের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনার রূপরেখার উল্লেখ রয়েছে। একই সঙ্গে বিমসটেকের দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভবিষ্যতে সহযোগিতার জন্য একটি বিস্তৃত ও বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ ব্যাঙ্কক ভিশন ২০৩০ গৃহীত হয়। শীর্ষ সম্মেলনে এই অঞ্চলে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং মানব নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যাঙ্কক ভিশনসহ যে ছয়টি দলিলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো- ১. ব্যাঙ্কক ভিশনটি ২০৩০ সালের মধ্যে বিমসটেককে আরও সমৃদ্ধ, শক্তিশালী এবং উন্মুক্ত করে তোলার জন্য প্রথম একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জনগণের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি এবং নতুন সম্ভাবনা অনুসন্ধানকে লালন করার কথা বলা হয়েছে। ২. ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন ঘোষণাপত্রে বিমসটেক এবং ব্যাঙ্কক ভিশন ২০৩০-এর প্রতি নেতাদের দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে। ৩. বিমসটেকের কার্যপ্রণালীর নিয়মাবলিতে বিমসটেককে আরও সুষ্ঠু ও দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশের নেতৃত্বে নতুন মাত্রা পাবে আঞ্চলিক সহযোগিতাকাজ করতে সহায়তা করার জন্য নিয়মাবলি নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪. বিমসটেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রুপের প্রতিবেদনে বিমসটেককে সংস্কার ও পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বেশ কয়েকটি সুপারিশ রয়েছে। ভিশন ২০৩০-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিমসটেকের কীভাবে এগিয়ে যাওয়া উচিত সে সম্পর্কে এই প্রতিবেদনটি সহায়ক পরামর্শ দেবে। ৫. সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি- দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সমুদ্র পরিবহন উন্নত করার জন্য একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটি জাহাজীকরণ খরচ কমাতে, বাণিজ্য দ্রুততর করতে এবং পণ্য ও মানুষের জন্য অঞ্চলজুড়ে চলাচল সহজতর করতে সহায়তা করবে। এছাড়া বিমসটেক ও ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মধ্যে এবং বিমসটেক ও জাতিসংঘের মাদক অপরাধ নিয়ন্ত্রক অফিসের (ইউএনওডিসি) মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ৬. মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের ভূমিকম্পের বিষয়ে যৌথ বিবৃতি- এই বিবৃতিতে নেতারা সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন প্রকাশ করেন। তারা দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া এবং প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আরও ঘনিষ্ঠভাবে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিন. বাংলাদেশের জন্য বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন আরেকটি কারণেও গুরুত্ব বহন করে। সেটি হলো নানা জল্পনা-কল্পনার অবসানে অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটি। বৈঠকে তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেয়ার বিষয়টি উত্থাপন করা ছাড়াও সীমান্তে হত্যা বন্ধ, গঙ্গা চুক্তির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ইত্যাদি বিষয়ের উল্লেখ করেন। তিনি শেখ হাসিনার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেয়া উসকানিমূলক মন্তব্যের উল্লেখ করে ভারতে থাকাকালে তাকে এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত রাখতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। প্রধান উপদেষ্টা জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়েও কথা বলেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি শেখ হাসিনার মন্তব্য ঘিরে উত্তেজনার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দায়ী করে বলেন, ভারতের সম্পর্ক দেশের সঙ্গে, কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয়। তিনি বাংলাদেশে দ্রুত অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় ভারতের প্রত্যাশার কথা বলেন। তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেন এবং হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক পর্যালোচনা এবং এগিয়ে নেয়ার জন্য দুই দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠকের বিষয়ও উল্লেখ করেন।

চার. শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা থাইল্যান্ড ভ্রমণকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের, বিশেষ করে চিকিৎসা নিতে আসা বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে থাই প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। থাই প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে থাইল্যান্ডের সমর্থন কামনা করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, জাহাজ চলাচল, সমুদ্র সম্পর্ক এবং বিমান যোগাযোগ সম্প্রসারণেরও আহ্বান জানান। থাই প্রধানমন্ত্রী বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের নেতা আঞ্চলিক গোষ্ঠীতে নতুন গতিশীলতা সঞ্চার করবেন।

প্রধান উপদেষ্টা থাইল্যান্ডের প্রয়াত রাজা ভূমিবলের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশকে থাইল্যান্ডের প্রাথমিক স্বীকৃতি প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বাংলাদেশে থাই বিনিয়োগ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস এ মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য থাই কম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি থাইল্যান্ড, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক প্রকল্পে অংশগ্রহণে বাংলাদেশের আগ্রহের কথাও তুলে ধরেন। প্রধান উপদেষ্টা দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করার লক্ষ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য একটি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করার প্রস্তাব রাখেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং থাইল্যান্ডের জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (এনএসিসি) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। স্মারক অনুযায়ী উভয় দেশ দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রাসঙ্গিকতার প্রাথমিক তথ্য দেবে, তথ্য সংগ্রহের সর্বোত্তম কর্মপদ্ধতি বিনিময়, তথ্য বিনিময়, যৌথ প্রকল্প গ্রহণ, অংশীদারি সমীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনের ক্ষেত্রে অন্যান্য সহযোগিতামূলক কার্যক্রম সম্পাদন করবে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ওই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

পাঁচ. সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টা শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিণী আমারাসুরিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং দুই বন্ধু দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে তার দেশের প্রচেষ্টা বর্ণনা করে বলেন, পুনরুদ্ধারপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য শ্রীলঙ্কার সংসদ একটি নতুন আইন অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া কোটি কোটি ডলার ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টায় শ্রীলঙ্কার সমর্থন কামনা করেন। তারা দুই দেশের মধ্যে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। ড. ইউনূস তার সরকারের সংস্কার এজেন্ডা উল্লেখ করে আগামী বছরের ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানান।

প্রধান উপদেষ্টার আরেকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং টোবগের সঙ্গে। দুই নেতা উভয় দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী টোবগে বাংলাদেশের কাছ থেকে একটি সম্পূর্ণ নিবেদিত ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের অনুরোধ জানালে প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়ে তার সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তারা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বাণিজ্য ও সংযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। প্রধান উপদেষ্টা ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে ভুটানের বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেরিংকে অনুরোধ করেন। তারা বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য নির্ধারিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে ভুটানের শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের সুযোগ আরো বাড়ানোর কথা জানান। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক আঞ্চলিক গোষ্ঠী বাংলাদেশের নেতৃত্বে একটি নতুন গতিশীলতা দেখতে পাবে।

এছাড়া সম্মেলনকালে বিমসটেকের নতুন চেয়ারম্যান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিমসটেকের মহাসচিব ইন্দ্র মণি পাণ্ডে। তারা বিমসটেকের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও অগ্রাধিকারের রূপরেখা নিয়ে কথা বলেন। সম্মেলনকালে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান সোয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমানকে জানান, মায়ানমার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া আট লাখের (মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের মতে) তালিকার মধ্যে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য ‘যোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা শিগগিরই আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে।

ছয়. ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে স্বাভাবিক নিয়মেই বাংলাদেশকে আগামী দুই বছরের জন্য চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এ উপলক্ষে দেয়া বিবৃতিতে তিনি বিমসটেক সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আন্তরিক সহযোগিতার ওপরই নির্ভর করে বিমসটেকের কর্মকাণ্ডের সফলতা। এই দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। আর সেসব উত্তরণে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারলে বিমসটেককে একটি প্রশংসনীয় অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। অন্যদিকে এ সময় বিমসটেককেন্দ্রিক সব কর্মকাণ্ডে সদস্য সাত দেশের নেতা ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে যোগসূত্র স্থাপিত হবে, তা ওইসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে দৃঢ়তর করার সুযোগও সৃষ্টি করবে। এছাড়া নেতৃত্ব পর্যায়ের ব্যক্তিগত সংযোগ এবং বোঝাপড়া বাংলাদেশের অবস্থানকে আঞ্চলিক পর্যায়ে আরও শক্তিশালী ও আস্থাভাজন করার সুযোগ এনে দেবে।

এই শীর্ষ সম্মেলনেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূস প্রথমবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ আলোচনা দুই দেশের সম্পর্কে যে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রশমনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের অবস্থান নিয়ে সন্দেহ এড়ানো কঠিন। কারণ মিয়ানমার এর আগে কয়েকবার এ ধরনের ছলনার আশ্রয় নিয়েছে। তার পরও মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থা, বিশেষ করে বিরাজমান সশস্ত্র সংঘাত, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ভিটামাটিতে শান্তিপূর্ণ, সম্মানজনক এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসনে কতটুকু সহায়ক হবে, সে প্রশ্নটি থেকেই যায়। এছাড়া এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থার অসম্মতিও উত্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সর্বোপরি কবে থেকে এবং কীভাবে কতজন করে কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাবাসন শুরু হবে, সেসবের একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনার প্রয়োজনও রয়েছে। আর এসব নিয়ে আলোচনার জন্য দুই পক্ষের (প্রয়োজনে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে) আলোচনায় বসা আবশ্যক।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত