ঢাকা সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সংসারের চালচিত্র

রহিম ইবনে বাহাজ
সংসারের চালচিত্র

লেখাটি উইলিয়াম শেক্সপিয়রের বাণী দিয়ে শুরু করছি; অভাব যখন দুয়ারে এসে দাঁড়ায়, ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়। বর্তমানে সারা বাংলাদেশের বাজার অবস্থা শাক-সবজি, নিত্যপণ্য মোটামুটি ভালো রয়েছে। কিন্তু মানুষ কি শুধু শাক-সবজি খেয়ে বাঁচতে পারে? ভাত মাছ চাল প্রভৃতিও প্রয়োজন, চাল বর্তমানে ৮৫ টাকা কেজি মোটা চাল ৬৫ টাকা কেজি।

মাছের বাজারে আগুন জ্বলছেই। রাজধানীতে বসবাসরত নিম্ন আয়ের মানুষগুলো বড়ই অসহায়। টানাপোড়েনের সংসার, ঈদের ছুটিতে গ্রামে এসে রাসেদের দেখা- সেও ঢাকায় থাকে পোশাক শিল্পে ছোট কারখানায় চাকরি করে। তার বউ একটা কমপ্লেক্স পোশাক শিল্পে অপারেটর। তুলনামূলক তার চেয়ে বউয়ের বেতন বেশি। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি ঝগড়া বিবাদ হাতাহাতিও হচ্ছে। কিন্তু রাসেদকে সব কিছু হজম করে সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য বউয়ের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে। রাসেদ চাইলেও চাকরিটা ইস্তফা দিয়ে অন্য আরেকটি চাকরি করতে পারছে না, চাকরির বাজার অবস্থা করুণ। রাসেদ ১০ বছর একই কারখানায় গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। রীতিমতো গাধার খাটুনি খাটছে কিন্তু কর্তৃপক্ষ বেতন বেশি দিচ্ছে না, যারা পোশাক শিল্পে ছোট কারখানায় চাকরি করেন কাজ বেশি বেতন কম, ছুটি নেই ওভারটাইম নেই।

ফিক্সড বেতন, মালিকের গালাগালি এমনকি হাতাহাতিও হচ্ছে। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে এরকম হাজার হাজার রাসেদ আছে বাসায় বউদের যন্ত্রণা অফিসে মালিকের গালাগালি হজম করতে হচ্ছে নিত্য। এবার ঈদের ছুটিতে আমার নিজের গ্রাম ঘুরে ফিরে দেখলাম অনেকে দালান বাসাবাড়ি বানিয়ে ঝকঝকে তকতকে দাঁত কেলিয়ে হাসছে।

গ্রামের মুরব্বিরা বলাবলি করে অমুক এতো কিছু করল তুমি তো কিছুই করতে পারলে না জীবনে, গ্রামের কিছু দুষ্ট প্রকৃতির মহিলা আছে সংসারে কীভাবে অশান্তিকে লাগিয়ে দেয়া যায়, এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে ঘুরে কে কত ধনী হলো এসব কিছু নিয়ে মহা পন্ডিতি করে। বিবাহিত পুরুষ প্রতি দিন নির্যাতিত হচ্ছে। পুরুষ নির্যাতন সংবাদ মিডিয়াগুলো হাইলাইটস প্রকাশিত হয় না, একধরনের চাপা কষ্ট নিয়ে বাঁচতে শতকরা ৮০ ভাগ পুরুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে যারা বেকার অবস্থায় নিজে নিজে বিয়ে করে অভিভাবককে তোয়াক্কা করে না। আর প্রেমের বিয়ে হলে কথাই নেই আজকাল মনে হয় পুতুল খেলা বিয়ে সকাল বিকাল ডিভোর্স হচ্ছে। অর্থই আজকাল ভালোবাসা। একটা সংসারে শুধুই অর্থ প্রয়োজন নাকি সেখানে ভালোবাসার মূল্যহীন?

ঢাকায় বসবাসরত মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো চলছে জীবনের চালচিত্র। বিবাহিত নারী পুরুষ স্বামী-স্ত্রী দুজনই যখন চাকরি করে তখনই বৈষম্য বা বিরোধ সৃষ্টি হয় এতে করে ঝগড়া, বিবাদ হাতাহাতি এমনকি বিচ্ছেদ ঘটে। যা ওই পরিবারের শিশু সন্তানের উপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে এমনকি সন্তান মানসিকভাবে চাপ পড়ে, ভবিষ্যতে সে সন্তান মা-বাবার সঙ্গে বৈরী আচার-আচরণ করে। বহু গবেষণা, বাস্তবেও দেখেছি সন্তান বিবেক, বুদ্ধিমান, প্রাপ্ত বয়স হলে মা-বাবার পরিচয় দিতে দ্বিধা করে।

পরিবারে সংসারে প্রেম ভালোবাসা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে, পরামর্শ করতে হবে কীভাবে সংসারে শান্তিতে থাকা যায়। মস্ত এ রঙিন দুনিয়ায় অন্যের কথায় কান না দিয়ে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করুন ধীরে ধীরে শ্বাস নিন, যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। একটু সময় সুযোগ বের করে ভ্রমণে বেরিয়ে যান কোলাহল শহর থেকে একটু দূরে গিয়ে ঘুরে আসুন দেখবেন প্রকৃতির রূপ আপনাকে অনেক পরিবর্তন করে দিয়েছে, শুধু চাকরি আর সংসার জীবনের জন্য চাপ পড়ে। যেখানে চাকরি করছেন বস আপনার মূল্য মর্যাদা দিচ্ছে না সম্মান পাচ্ছেন না, রিজাইন দিয়ে জায়গা পরিবর্তন করতে পারেন। পরিবার, সংসার মমতায় জড়িয়ে রাখুন। কাজের ভেতর থাকুন।

কবি, প্রাবন্ধিক, গীতিকার, ও কলাম লেখক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত