প্রতিদিন সড়কে ঝরছে প্রাণ। প্রতিদিনই খবরের কাগজে ভেসে উঠছে বীভৎস সব লাশের ছবি। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার খবর যেন আমাদের গা-সহা হয়ে গেছে। দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষত সড়ক পথেও উন্নয়ন দেশের সার্বিক চিত্রকে বদলে দিয়েছে। গহিন গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে পিচঢালা সড়ক। গ্রামের উঠোনে উটের গ্রীবার মতো গলা বাড়িয়ে দিয়েছে। শহর এখন দরজা খুললেই। সড়ক নির্মাণ হয়েছে।
আর দেখভালের সংকটে সড়ক হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী। প্রায় প্রতিদিনই পথে পথে মৃত্যুর মিছিল। গাড়িচাপা, মুখোমুখি সংঘর্ষ, এক গাড়িকে আরেক গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ ঝরছে হরহামেশা। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশে সারা বছরই কম-বেশি ঘটে। কিন্তু সড়কের স্বাভাবিক নিরাপত্তায় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকলেও কাজের কাজ যে খুব হয়, তা কিন্তু নয়। ফলে কোনোভাবেই থামছে না মৃত্যুর মিছিল।
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, এই অপ্রতিরোধ্য ও প্রতিকারহীন সড়ক দুর্ঘটনা, এই অসহায় মৃত্যু ও আহতদের জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে থাকার দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী কে বা কারা? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের গাড়ি চালকদের বেশিরভাগ অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত, অনেকের লাইসেন্স নেই, অনেকের লাইসেন্স ভুয়া। এদের হাতে গাড়ি ছেড়ে দেয়া বিপজ্জনক। অথচ মালিকদের একাংশ সেটাই করছে। সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। সেখানেও রয়েছে দুঃখজনক গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতা। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণার তথ্যমতে, প্রতিবছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এর কয়েকগুণ বেশি। এসব দুর্ঘটনার প্রভাবে আর্থিক ক্ষতি হয় বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ১.৬ শতাংশ জিডিপি হারায় দেশ। এর পরও সড়ক দুর্ঘটনা থামছে না।
এসব সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। নতুবা এই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বন্ধ হবে না। উৎসব যেভাবে কান্নায় পরিণত হয় সেটা আমাদের বারবার দেখতে হচ্ছে। এ চিত্র বদলানো একান্ত জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনা কেবল প্রশাসনিক সমস্যাই নয়; এটি আমাদের সামগ্রিক সামাজিক ব্যবস্থার একটি বড় ঘাটতি। প্রতিকার নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসন, জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পক্ষের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। যথাযথ পরিকল্পনা, কঠোর আইন প্রয়োগের সঙ্গে সরকার, চালক, মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে- নিরাপদ সড়ক কেবল উন্নয়নের প্রতীক নয়, এটি একটি সভ্য ও মানবিক জাতির পরিচায়ক এবং সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।