বায়ুদূষণে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
করোনাভাইরাসের দাপটে এমনিতেই সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত, এর মধ্যে মারাত্মক বায়ুদূষণের শিকার হয়েও দেশে প্রায় প্রতিদিন নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। উদ্বেগের বিষয়, বায়ুদূষণের প্রভাবে শ্বাসযন্ত্রের রোগসহ দেশে প্রায় ২ লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশ, গত ১১ মাসের বায়ুমান সূচকে বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক দূষণের মাত্রায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় এবং ঢাকা নগরী চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডোর এক গবেষণা তথ্য অনুযায়ী এ চিত্র উঠে এসেছে।
গবেষণায় জানা যায়, বাহ্যিক বায়ুদূষণের কারণ হলো নির্মাণ কার্যক্রম (৩৮ শতাংশ), প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো (২২ শতাংশ), শিল্প প্রক্রিয়াজাতকরণ (১৭ শতাংশ), ইটভাটা (১০ শতাংশ), জীবাশ্ম জ্বালানি দহন, সড়ক পরিবহন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮ শতাংশ। এছাড়া অভ্যন্তরীণ কারণগুলো হলো রান্নার চুলা থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া ৪১ শতাংশ, সিগারেট থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া ২৫ শতাংশ, নর্দমা নিষ্কাশন ১৫ শতাংশ, রেডন গ্যাস ও অন্য দূষণকারী পদার্থ ১০ শতাংশ। গবেষণায় আরও জানা যায়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার, বিকলাঙ্গতা, শ্বাসযন্ত্রের দুর্বলতাজনিত কারণে মৃত্যু, স্ট্রোক, ফুসফুস ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ নিউমোনিয়ার মতো ছোঁয়াচে রোগের কারণ বায়ুদূষণ। গত ৫ বছরে (২০১৫ থেকে ২০১৯) সার্বিকভাবে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা প্রায় ২৪ গুণ বেড়ে ৩ হাজার ৩২৬ জন (২০১৫) থেকে ৭৮ হাজার ৮০৬ জনে (২০১৯) দাঁড়িয়েছে, যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ গুণ বেড়ে ৫৬ জন থেকে ৫৮৮ জনে উপনীত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণ শুধু স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নয়, এটি অর্থনৈতিক এবং ইকোসিস্টেমের ঝুঁকিরও কারণ। বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব। ইটভাটা থেকে সৃষ্ট দূষণ বন্ধে মালিকদের জ্বালানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধ্য করতে হবে, শুষ্ক মৌসুমে ধুলার দূষণ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনকে সঠিকভাবে রাস্তা পরিষ্কার এবং যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ধুলা ছড়িয়ে পড়া বন্ধে নিয়মিত রাস্তায় পানি ছিটাতে হবে, রাস্তাঘাট ও ভবন নির্মাণের ফলে সৃষ্ট ধুলাবালু নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্মাণকারীরা যাতে নির্মাণের এলাকা ঢেকে রাখেন এবং পানি ছিটানোর পাশাপাশি দূষণসংক্রান্ত নিয়মাবলি মেনে চলেন তা নিশ্চিত করতে হবে। যত্রতত্র সিটি করপোরেশনের সংগৃহীত বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করতে হবে, শিল্পকারখানর বায়ুদূষণ কমাতে ইটিপি ব্যবহারে বাধ্য করতে হবে, যানবাহন ও নৌযান থেকে দূষণ এবং কালো ধোঁয়া নিগর্মন রোধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর খোঁড়াখুঁড়ি কাজের সমন্বয় সাধন করা ও বায়ুদূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করতে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণ ও এর বিস্তার কমাতেও বায়ুদূষণ রোধ একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। সংগত কারণেই বায়ুদূষণ হ্রাসে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরও বেশি সচেতন হবে ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এমনটাই প্রত্যাশা।