করোনায় ধুঁকছে মধ্যবিত্ত

সরকারি সহায়তা প্রয়োজন

প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

করোনাকালে মনে হয় মধ্যবিত্ত শ্রেণির পাশে কেউ নেই। তাদের জন্য সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই, আবার তারাও হাত পেতে কোনো সহায়তা পাওয়ার আবেদন করতে পারছে না। এ অবস্থায় করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে চাকরির ওপর নির্ভরশীল মধ্যবিত্তদের বড় অংশই দিশেহারা। একটি অংশ চাকরি হারিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। যাদের চাকরি আছে, বেতন যেন ‘সোনার হরিণ’। কারও বেতন কমে গেছে, অনেকে মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। কিংবা ৩ থেকে ৪ মাস পর এক মাসের বেতন দেওয়া হচ্ছে। এদিকে সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেকে কর্মী ছাঁটাই করেছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ের লকডাউনের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় প্রবাহের ধারাবাহিক লকডাউন। নতুন করে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনে ঘরে না থাকলে জেলে যাওয়ার ঝুঁকিও আছে। এমন গভীর সংকটে মধ্যবিত্তদের পাশে কেউ আছে বলে মনে হয় না। সরকার গরিবের জন্য খাদ্য ও অর্থ সহায়তার পদক্ষেপ নিয়েছে। উচ্চবিত্তের জন্য আছে শিল্পের প্রণোদনা। কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে কিছুই নেই মধ্যবিত্তের জন্য।

উল্লেখ্য, ব্র্যাক, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ ও নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির যৌথ গবেষণার তথ্য বলছে, করোনা মহামারিতে গত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবরে ৭৭ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক আয় কমেছে এবং ৩৪ শতাংশ। পরিবারের কেউ না কেউ চাকরি অথবা আয়ের সক্ষমতা হারিয়েছেন। এ সময়ে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে পরিবারগুলো সঞ্চয় ও ধারদেনার ওপর নির্ভরশীল ছিল। ফলে পরিবারগুলোর গড় মাসিক সঞ্চয় ৬২ শতাংশ কমে গেছে, ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩১ শতাংশ। করোনা পরিস্থিতির কারণে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে বলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপে উঠে এসেছে। পাশাপাশি পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) আরেকটি জরিপ অনুসারে, মহামারির প্রভাবে দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে। স্পষ্টতই মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি বড় অংশ এর মধ্যে পড়েছে। মহামারির প্রভাবে মধ্যবিত্ত নতুন করে দরিদ্র হচ্ছে। আর এদের বড় অংশই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী। সঙ্গত কারণেই সঞ্চয় ভেঙে খেতে খেতে নিঃশেষ এই শ্রেণিকে রক্ষায় বেসরকারি খাতে সরকারের জোরালো তদারকি চান সংশ্লিষ্টরা।

একটি জাতির জন্য মধ্যবিত্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এরা নতুন চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা জাগ্রত করার দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো টানাপড়েন এবং করোনার অভিঘাতে এই শ্রেণি এখন ক্ষয়িষ্ণুপ্রবণ। টিসিবির লাইনেও এখন মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, নিম্ন আয়ের মানুষের পর এখন সরকারের করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত শ্রেণির পাশেও দাঁড়াতে হবে। তাদের ‘নগদ সহায়তা’ এবং পোশাক খাতের আদলে ‘বেতন সহায়তা’ দেওয়া গেলে ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্তদের কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব। অধিকন্তু, উন্নত দেশের আদলে আমাদের জীবনচক্রভিত্তিক নিরাপত্তা মডেল চালু করতে হবে। বেকার ভাতা থেকে শুরু করে আয়কর সহায়তা ভাতা, বৃদ্ধ ও প্রবীণ ভাতা এসব ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এটাই প্রত্যাশা।