ঢাকা ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জন্মনিবন্ধনে ভোগান্তি

সমাধান জরুরি
জন্মনিবন্ধনে ভোগান্তি

প্রত্যেক নাগরিকের জন্য জন্মনিবন্ধন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের বেশ কিছু সুবিধা আদায় জন্মসনদ ব্যতিরেকে সম্ভব নয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিবন্ধন নিয়ে নানা অনিয়মের খবর গোচরীভূত হচ্ছে। এই নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। প্রকাশ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার করণে নতুন জন্মনিবন্ধন অথবা সংশোধন সব বিষয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন নাগরিকরা। অন্যদিকে একই ব্যক্তির নামে একাধিক জন্মনিবন্ধন করার সুযোগ থাকায় এটি নিয়ে অনিয়ম বেড়েছে। সূত্রমতে, অনেক নাগরিক জানেন না আগের জন্মনিবন্ধন অনলাইন করা আছে কি-না। ফলে তারা দুটি করে জন্মসনদ করছেন। আবার অপরাধ করার জন্য অনেকে একাধিক জন্মনিবন্ধন করছেন। এসব করার সুযোগ হয়েছে সারাদেশে কয়েক কোটি নাগরিকের হাতে পূরণ করা আগের জন্মনিবন্ধন অটোমেটিক অনলাইন না হওয়া। ফলে অনিয়ম হচ্ছে জন্মনিবন্ধনে, অসাধু কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ। অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে এ ধরনের যথেচ্ছাচার সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত।

বিস্ময়কর তথ্য হলো, দেশে বর্তমানে যে জনসংখ্যা রয়েছে, তার চেয়ে কয়েক কোটি বেশি জন্মনিবন্ধন রয়েছে। এটার কারণ একই ব্যক্তির একাধিক জন্মনিবন্ধন নেওয়া। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় এখনও তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় এবং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যলয়ে জন্মসনদ নিয়ে দুর্নীতি বাড়ছে বলে অভিযোগ। তথ্য অনুযায়ী, জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত এমন সমস্যা এখন প্রতিটি পর্যায়ে। ফলে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন এখন অনেকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা জটিলতার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে ঘুরেও সমাধান মিলছে না অনেকের। এর সঙ্গে কর্তাদের গাফিলতি নিয়মিত ঘটনা। ভুক্তভোগীরা বলেন, জন্মনিবন্ধনের মতো প্রয়োজনীয় একটি বিষয়ে এত জটিলতা রাখা বাস্তবসম্মত নয়। সাধারণ মানুষের জন্য সহজ পদ্ধতি হলে এ ধরনের ভোগান্তি হতো না বলে মনে করছেন তারা। উল্লেখ্য, ২০০১ সালের পর যাদের জন্ম, তাদের জন্মনিবন্ধনের জন্য বাবা-মায়ের জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করায় সন্তানের জন্মসনদ নিতে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অভিভাবকদের। একই সঙ্গে কারও মৃত্যুসনদ নিতে হলেও প্রয়োজন হচ্ছে ডিজিটাল জন্মসনদের। সব মিলিয়ে চরম জটিলতায় পড়ছেন সেবাগ্রহীতারা।

জন্মনিবন্ধন মানুষের যাপিত জীবনের অনিবার্য অনুষঙ্গে পরিণত করেছে। এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে সরকারের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়াটি ছিল একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। কিন্তু বাস্তবায়নে বিবিধ জটিলতার কারণে এখন ভোগান্তির নামই হয়ে পড়েছে জন্মনিবন্ধন। এই অবস্থার অবসান জরুরি। স্মর্তব্য, নাগরিকদের ১৮টি সেবা পেতে জন্মনিবন্ধন সনদ এবং চারটি সেবা পেতে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। ২০০৭ সালে ভোটার তালিকা তৈরির কার্যক্রম শুরু হলেও ২০০১-২০০৬ সালে ২৮টি জেলায় ও চারটি সিটি করপোরেশনে জন্মনিবন্ধনের কাজ শুরু হয়। দুই দশক পেরিয়ে কেন স্বচ্ছ জন্মনিবন্ধন সম্ভব হলো না তা প্রশ্ন বটে। তবে দায়িত্বশীলদের মতে, সনদ দেওয়ার জন্য অফিস ও জনবল সংকটে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। নতুন করে কিছু অঞ্চল যুক্ত হওয়ায় এক অঞ্চলের অফিসেই তিন অঞ্চলের সেবাগ্রহীতাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে, যা খুবই কষ্টসাধ্য। তাই সত্বর প্রয়োজনীয় লোকবল নিশ্চিত করা আবশ্যক। পাশাপাশি নিবন্ধনের প্রক্রিয়া যথাসম্ভব সহজ করা দরকার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত