আসাদুজ্জামান নূর। দেশবরেণ্য এমন একজন অভিনেতা, ভক্ত-দর্শক প্রতিনিয়ত যার অভিনয় দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি একজন আবৃত্তিকারও। তার কণ্ঠে বহু কবিতা শ্রোতাদের মন ভরিয়েছে। অনেক তথ্যচিত্র, সিনেমা-নাটকে তার ভয়েস মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবেও সবার প্রিয় তিনি। তবে নিজের অভিনয় সত্তাটাকেই বেশি উপভোগ করেন তিনি। আসাদুজ্জামান নূরের ভাষ্যমতে, ভালো স্ক্রিপ্ট না পেলে, চরিত্র মনেরমতো না হলে তিনি অভিনয় করেন না।
গল্প ও চরিত্র পছন্দ হয়েছে বলেই হাসান আজিজুল হকের প্রবন্ধ অবলম্বনে ‘একাত্তর : করতলে ছিন্নমাথা’ সিনেমায় অভিনয় করছেন। আজ থেকে ৫০ বছরের বেশি সময় আগে অর্থাৎ ১৯৭২ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের হয়ে মঞ্চে অভিনয় শুরু তার ‘ তৈলসংকট’ নাটক দিয়ে। এ বছরে মঞ্চনাটকে তার পথচলার ৫০ বছর পূর্ণ হলো। সুবর্ণ জয়ন্তীর এ যাত্রায় বহু নাটকে তিনি অভিনয়ের সুবাস ছড়িয়েছেন। মঞ্চনাটক নির্দেশনা দিয়েছেন মাত্র দুটি। একটি ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ ও অন্যটি ‘মোহনগরী’। দেওয়ান গাজীর কিসসা ৩ শতাধিকবার মঞ্চায়িত হয়েছে বলে জানান নূর। কিছুদিন আগেও তিনি ‘রিমান্ড’ নামে একটি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। এটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন শুভাশীষ সিনহা। এতে একজন গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে আসাদুজ্জামান নূরকে। নাটকটি প্রযোজনা করেছে ‘হৃৎমঞ্চ’।
থিয়েটারে ৫০ পেরিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, অভিনয় করতে তো ভালো লাগে। তবে নিয়মিত করা একটু কঠিনই বটে।
একটা সময় ছিল যখন প্রবল ইচ্ছা ছিল সিনেমায় অভিনয় করার। কিন্তু আমার মতো যারা ছিলেন তাদের আসলে সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ ছিল না। ফরীদি কমার্শিয়াল সিনেমায় যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু তার মতো করে দাঁড়াতে পারেনি। এখন কমার্শিয়াল সিনেমায় পরিচ্ছন্নতা রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। নানামুখী পরিচয়ে তিনি সমৃদ্ধ। এ প্রসঙ্গে নূর বলেন, জীবনের এই পর্যায়ে এসে আমি নিজেই কিন্তু মাঝে মাঝে ভাবি যে আমি আসলে কী! আমি কি শিল্পী, নাকি রাজনীতিবিদ, নাকি সমাজসেবক।
নাকি ব্যবসায়ী! তবে হ্যাঁ, অভিনয় করে কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা এমন একটা সময় পেয়েছি যখন একসঙ্গে একঝাঁক প্রতিভাবান মানুষ ছিল। একটা টিভিতে সীমাবদ্ধতা ছিল, দর্শকের আগ্রহ ছিল প্রবল। তারা মনপ্রাণ দিয়ে নাটক উপভোগ করত। সে সময়টাকে খুব মিস করি। নূর অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভিনাটক হলো ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’। উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘দহন’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ইত্যাদি। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর জানান, একটি সিনেমার কাজ করছেন তিনি। এর কাজ দ্রুতই শেষ হবে। আগামী নির্বাচনের আগে আর নতুন কোনো কাজে তাকে দেখা যাবে না।