জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার মানেই বিনোদন অঙ্গনে সাজ সাজ রব। পুরস্কারজয়ীদের পাশাপাশি অন্য শিল্পীরাও বেশ আয়োজন করে অংশ নেন রাষ্ট্রীয় এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে। ব্যতিক্রম শুধু আবিদা সুলতানা। অনুষ্ঠানটিতে দেখা যায় না স্বনামধন্য এই কণ্ঠশিল্পীকে। এ নিয়ে অনেকেরই রয়েছে কৌতূহল। বরাবরের মতো গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানেও অনুপস্থিত ছিলেন নন্দিত এই গায়িকা। ফলে প্রশ্নটি ফের সামনে এসেছে। আবিদা সুলতানা কেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যান না- জানতে চেয়েছেন অনেকে।
এবার বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে খোলাসা করলেন তিনি। খুলে বললেন ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে বুকের ভেতর পেলেপুষে রাখা আক্ষেপের কথা। নিজের ফেসবুকে আবিদা সুলতানা লিখেছেন, ‘অনুগ্রহ করে আমাকে আর কেউ জিজ্ঞাসা করবেন না, আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে যাইনি কেন বা যাই না কেন? ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আমাকে টেনে নামানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছে একটি গ্রুপ। যে কারণে অসংখ্য ভালো ক্ল্যাসিক গান থাকতেও এই পুরস্কার আমার পাওয়া হয়নি।’ এরপর তিনি লেখেন- ‘আমি তখন ম্যাট্রিক পাস করেছি মাত্র। শ্রদ্ধেয় খান আতাউর রহমান আমাকে ‘ঝড়ের পাখি’ ও ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিতে দুটি গান গাওয়ালেন। ঠিক তারপরের সপ্তাহে ‘সিনেমা’ পত্রিকায় ওনার সঙ্গে আমার বিয়ের খবর ছাপিয়ে দিল। এটা কে করেছে- আতা ভাই-ই পরে আমার পরিবারকে বলেছিলেন। এরপর এক অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার গল্প শোনান গায়িকা। তিনি লিখেন, ‘একজন নৃত্য পরিচালক আমার একটা খুব বিখ্যাত গান নিয়ে ছবির পরিচালককে বলেছিলেন, এটা কোন আর্টিস্ট দিয়ে গান করিয়েছেন? এটা কোনো গান হলো? পরে পরিচালক নিজেই আমাকে কথাটি বলেছিলেন। কতখানি ড্যামেজিং কথা!’ সোশ্যাল হ্যান্ডেলে দেওয়া ওই পোস্টে আরো এক ঘটনা তুলে ধরেন তিনি। লিখেন- ‘আলমগীর ভাইয়ের পরিচালনায় একটা ছবিতে দুই বা তিনটি গান করেছিলাম। ঠিক পরের সপ্তাহে আলমগীর ভাইকে আর আমাকে নিয়ে জঘন্যভাবে লেখা হলো পত্রিকায়। এটাও কে করেছেন ছবির পরিচালক-ই আমাকে বলেছিলেন।’ অনেক বেদনার কাব্য যেন বর্ষীয়ান এ গায়িকার স্ট্যাটাসটি। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘একটা দোলনা যদি কাছে পেতাম গানটি সিলেকশন হওয়ার পর বাদ দেওয়া হয়েছিল। ‘বিমূর্ত’ গানটির জন্য বিখ্যাত চিত্রালীর সাংবাদিক পারভেজ ভাই আর পূর্বানী পত্রিকা থেকে মাসুদুল হক ভাই বাসায় এসে অভিনন্দন জানিয়ে বড় ইন্টারভিউ নিয়ে গেলেন। পরের দিন সকালে পত্রিকায় দেখলাম অন্য নাম।’ এসব কারণেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ওপর থেকে মন উঠে গেছে আবিদা সুলতানার। এমনটা উল্লেখ করতে তিনি লিখেছেন, ‘তাই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শুনলে না আমার অসহ্য লাগে! কান্না পায়। তাই প্লিজ কেউ আর জানতে চাইবেন না যে আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে যাইনি কেন আর যাব না কেন?’
আবিদা সুলতানার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এমন আরও অপ্রত্যাশিত ঘটনা আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে এই লেখা গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ীদের কারো সঙ্গে সম্পর্কিত না। কাউকে কষ্ট দিতেও স্ট্যাটাসটি লেখেননি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘এখানে আমি আমার ৪০ বছর আগেকার পুঞ্জিভূত কিছু কষ্টের কথা লিখেছি। অ্যাওয়ার্ড পাওয়া বা পূর্বের অ্যাওয়ার্ড পাওয়া কারও সঙ্গেই এই লেখার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ এখানে সবাই আমার আপন। আমি শুধু আমার কষ্টের কথা লিখেছি। আর লিখেছি এই কারণে যে অনেকেই আমাকে ফোন করেছেন আমি কেন যাইনি। কারো অ্যাওয়ার্ড পাওয়া নিয়ে আমার কোনো কথা নেই। এখানে আমি পুরস্কার বিজয়ীদের নিয়ে কিছু বলিনি। কেউ যদি কিছু মনে করে থাকেন সেটা তার সমস্যা। আমি সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা করা হয় গুণী এই গায়িকার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ক্ষেত্রে অনেক সময় জুরি বোর্ডের কান পর্যন্ত ভালো গানের কথা পৌঁছায় না। অনেক ভালো ভালো গান করা হয়েছে ফিল্মের জন্য। কিন্তু ফিল্ম হিট না করায় সেগুলো নজরে আসেনি। এভাবে অনেক গান চাপা পড়ে গেছে। এছাড়া কিছু সমস্যা তো আছেই। আমার সঙ্গে যা কিছু ঘটেছে আমি সেটা বলতে চেয়েছি। জাতীয় পুরস্কার পাইনি বলে নয়, আমার ক্যারিয়ারের সঙ্গে আমার সঙ্গে যা হয়েছে তাই বলতে চেয়েছি। আমি তখন ছোট। মাধ্যমিক পাশ করে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি। এতদিন ধরে, ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে ব্যাপারটি নিজের ভেতরে রেখেছি। এখন মনে হলো বিষয়টি সবাইকে জানাই। সেকারণেই কথাগুলো লিখেছি।’ আবিদা সুলতানা দেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পীদের একজন। তার কণ্ঠ সমৃদ্ধ করেছে সংগীতাঙ্গনকে। একটা দোলনা যদি, বিমূর্ত এই রাত্রি আমার, হৃদয়ের অচেনা দুটি নদী, হারজিৎ চিরদিন থাকবেই, হাতে থাক দুটি হাতসহ গুণী এই গায়িকার রয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় গান। যার মধ্যে কয়েকটি কালোত্তীর্ণ।