আপনার মিউজিক একাডেমির নতুন কি কি কাজ চলছে?
সামনে অনেকগুলো অনুষ্ঠান আছে। ভাষা দিবস উপলক্ষ্যে একটি বড় অনুষ্ঠান করছি, ভাষা-ভালোবাসা। তাতে বাংলাদেশের শিল্পীরা আছে, এছাড়া পিকনিক আছে, বসন্ত উৎসব আছে, সরস্বতী পূজা আছে। আমার নিজের ব্যক্তিগত উৎসব তো আছেই। আবার বিদেশে যাওয়া আছে, আমার আমেরিকা যাওয়া আছে। সব মিলে হৈ হৈ করা ব্যাপার আছে।
আপনি বাইজিনাচ নামে একটি উৎসব করেছেন? এই ভাবনাটা কোথা থেকে এলো?
বাইজি সংগীত অনুষ্ঠানটি বহুদিন ধরেই আমাদের ভাবনায় চলছে এবং টিকিট কাটা শ্রোতা তো কলকাতাতে এখন কম। ফুল হাউজ দর্শক এখানে কিন্তু সেটা আমরা এক সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে সেরকম দর্শক যারা সবাই উচ্চ মূল্যের টিকিট কেটে এনেছেন, সেটা খুব ভালো লেগেছে। কারণ বেশিরভাগ অনুষ্ঠানই হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত অনুষ্ঠান, ক্লাসিক্যাল অনুষ্ঠান ও অন্য কিছু হয়। কিন্তু তার বাইরে গিয়ে একেবারেই অন্য ধরনের একদম বাইজি সংগীত এই বিষয়টা নিয়ে এই প্রথম কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষে এরকম একটি বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠান হলো। বাংলাদেশে এই অনুষ্ঠান করার খুবই আগ্রহ আছে।
আপনি কোন ঘরানার গান করতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
আমার কাব্যগীতি গাইতে খুব ভালো লাগে। রবিন্দ্রনাথের গান তো ভালো লাগেই, এছাড়া ধীরেন্দ্রনাথ, অতল প্রসাদ, রজনী কান্তসেন এদের গান গাইতে খুব ভালো লাগে। কারণ আমার সারা পৃথিবীর বাংলা গানের দর্শক স্রোতারা আমার গান যেভাবে ভালোবেসেছেন এবং বিশেষ করে তিন কবির গান অর্থাৎ ধীরেন্দ্রনাথ, অতল প্রসাদ, রজনীকান্ত তাদের গান। পুরাতনি বাংলা গান ভালোবেসেছেন। কারণ আমার কবি যারা ছিলেন। শ্রীমতী কৃষ্ণা চট্টপাধ্যায়, শ্রীমতী মঞ্জুগুপ্ত, শ্রী শুসিল চট্টপাধ্যায়, এতিম কবির গানে তাদের পরে একটা বিশাল খরা এসেছে এসব বিষয়ে। সেই গানগুলোকে নতুন করে তুলে ধরেছি স্রোতাদের মাঝে, এটাই আমার সব থেকে বড় পাওনা।
সিনেমায় গান নিয়ে সামনে আরো কি পরিকল্পনা?
সিনেমার গান নিয়ে পরিকল্পনা সব সময় যারা গুণি শিল্পী তাদের থেকে আমি সম্প্রতি একটা গান গাইলাম দওা সিনেমাতে শরৎ চন্দ্র চট্টপাধ্যায় দত্তাতে। পরিচালক ছিল নির্মল চক্রবর্তী এবং দত্তার রূপে অভিনয় করেছেন ঋতু পর্ণা সেনগুপ্ত সেখানে আমি রজনী কান্ত সেনের একটি গান গেয়েছি, তুমি নির্মল ও কারা মঙ্গলও করো সে গানটি খুবই প্রসংশীত হয়েছে এবং পুরস্কারও পেয়েছি। কিন্তু যেটা খুবই ভাবনার বিষয় যে, আমাদের পশ্চিমবঙ্গে, যে কোনো জিনিসে একটা লবিং কাজ করে তাই যে গান যাকে দিয়ে গাওয়ানো উচিত সেই জিনিসটা হয় না। এখানে গতানুগাতিক দুইজন তিনজন শিল্পীর বাইরে প্রডিউসাররা কেউ ভাবেন না। যেহেতু তারা সেই লবিতে বিলম্ব করেন। তারাই হয়তো রবীন্দ্র সংগীতের মতো করেই, অতল প্রসাদ গাইছেন মায়নাস স্টোরি, চলনটা বাদ দিয়ে আবার আধুনিক গান রবীন্দ্র সংগীতের মতো করে গাওয়া হচ্ছে।
আপনি আবৃত্তি ও উপস্থাপনা করেন?
কবিতা উপস্থাপনা আমি করতেই পারি। কারণ যত কবিতা পারি বা আমার শব্দ চয়ন বাচনভঙ্গী উপস্থাপনার একেবারেই আদর্শ এবং সব মিলিয়ে আমি উপস্থাপক হতেই পারি পেশা পরিবর্তন করে। আর যেহেতু আমার পড়াশোনার একটা বড়দিক আছে আমি উচ্চমাধ্যমিকে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছিলাম আমাদের রাজ্যে তারপর আমার অনার্স সেমিতে ডাবল ফাস্টক্লাস আছে আমার শব্দ চয়ন বা পড়াশোনার পরিধি আমি কখনো বন্ধ করে দেইনি। আমি নিজেকে প্রতিদিন আপডেট করি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই ফোকাস একজন মানুষ এবং কমপ্রিয়েড একজন পার্সন। সেইখানে আমার মনে হয় চারিদিকেং আমি যদি নিজেকে ছড়াই তাহলে যে লক্ষ্য নিয়ে আমি চাকরি ছেড়ে আমার কাজের মধ্যে অধ্যায়ন করেছিলাম।
সামনে বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা আছে কি না?
বাংলাদেশে আমার খুব শিগগিরই আসার পরিকল্পনা আছে। মার্চ মাসে ঢাকা এবং ঢাকাকেন্দ্রিক আশপাশে কাজও আছে ঘোরাও আছে। আর জানেন কি না জানি না আমার দাদার বাড়ি ফরিদপুর তালং এবং নানা বাড়ি রংপুর। যার জন্য আমার বাংলাদেশে আসতে থাকতে সব সময় খুব ইচ্ছা করে। আমার মনে হয় যে, পূর্ব পুরুষের গায়ের গন্ধ পাই এই ভালোবাসা। এই উন্মাদনা বাংলার সংস্কৃতির প্রতি পৃথিবীর আর কোথাও আমি পাই না। তাই সব সময় যেতে ইচ্ছা করে।
নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা ভাইরালের পেছনে ছুটছে এটি নিয়ে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি না তাদের প্রতি?
এখন অনলাইনের যুগ, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কেউ সামান্য বাহবা দিলে নিজেকে বিশাল বড় গাইকা, বিশাল বড় কবি, অসাধারণ সুন্দরী, বিশাল বড় নৃত্যপটিয়সী এগুলো মনে করে। এগুলো তারা মূর্খের সর্গে বাস করে। আমার এগুলো নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করার মতো সময় নেই। আমার ছাত্রছাত্রীদের আমি বুঝাই। তবে ২৪ সাল থেকে ঠিক করেছি সেই বোঝানোটাও ছেড়ে দিব। কারণ বুঝিয়ে সময় নষ্ট, কথা নষ্ট। যারা ভাইরালের পেছনে ছুটছে তারা ছুটবেই।