বিশ্বজুড়ে গতকাল পালিত হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’। সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন। প্রতি বছরই দিবসটিকে ঘিরে নানা আয়োজন দেখা যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি নারীদের সংবর্ধনা জানানো হচ্ছে। দেশের অন্যান্য সেক্টরের মতো শোবিজেও নারীরা সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। এবার দিবসটি উপলক্ষ্যে কথা বলেছেন তারকারা। জনপ্রিয় শোবিজ তারকারা জানিয়েছেন নারী দিবস নিয়ে তাদের ভাবনা।
মেহজাবীন চৌধুরী- সমাজের চোখে সেরা হবার জন্য আমরা নারীরা প্রায়ই ভুলে যাই, আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো দিক দিয়ে আলাদা। আর তাই অন্যের কাছে সেরা হবার চেষ্টা না করে আমাদের উচিত নিজেদের স্বতন্ত্র সত্তা আবিষ্কার করা। এই সত্তাই আমাদের জীবনের দৌড়ে সামনের সারিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে। নারীরা কোনো রকম বাধা ছাড়া সামনের দিকে এগিয়ে যাক। তাদের যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে সামনে চলুক। নারী তার যথাযথ সম্মানটা পাক। পরিবার থেকে, সমাজ থেকে যেন কোনো নারী বাধা না পায়। নারীদের জীবন চলার পথটা সুন্দর হোক। নারীদের পাশে যারা আছেন, থাকবেন, সেসব পুরুষ বন্ধুদের এবং অবশ্যই নারী বন্ধুদের আজকের এই দিনে জানাই বিশেষ শুভেচ্ছা।
সাবিলা নূর- সত্যি বলতে আমার কাছে মনে হয়, নারী দিবস পালন করতে কোনো উপলক্ষ বা বিশেষ দিনের প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের মায়েরা কিন্তু কোনো বিশেষ উপলক্ষ্যে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকে না। আমাদের বোনেরা কিন্তু তাদের ছোট ভাই-বোনকে একটা গিফট কিনে দেওয়ার জন্য শুধু কোনো বিশেষ দিনেই পাবলিক বাসে চড়ে টিউশনি করতে যায় না। তাই আমার কাছে মনে হয় প্রতিটা দিনই নারী দিবস। এর জন্য আলাদা কোনো দিবসের প্রয়োজন নেই। আর একটা বিশেষ ধন্যবাদ সেইসব পুরুষদের, যারা তাদের জীবনসঙ্গীকে প্রতিদিন ভালো কিছু করতে উৎসাহ দেয়।
তমা মির্জা- প্রতিদিনই আমার কাছে নারী দিবস। প্রতিটি ঘর থেকে যেন নারীরা সম্মান পায়। ঘরে সম্মান পেলেই সমাজের পাশাপাশি দেশজুড়েও মূল্যায়ন পাবে। একটি ঘরের জন্য পুরুষের যেমন দরকার আছে, নারীদেরও দরকার আছে। কেউ কারও প্রতিযোগী নয়, বরং সহযোগী। সহযোগিতা ও ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিলেই নারীরা আরও সুন্দরভাবে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। নারী দিবসে একটাই ভাবনা ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল নারী।
পরীমণি- প্রতিটি পুরুষ যেমন সুন্দর জীবন প্রত্যাশা করে, প্রতিটি নারীর জীবনও সুন্দর হোক। প্রতিটি পরিবারে একজন পুত্রসন্তানের পাশাপাশি সমান গুরুত্ব, সুযোগ-সুবিধা যেন একজন নারীও পায়। নারী ও পুরুষকে আলাদা চোখে না দেখে মানুষ হিসেবে তাদের সবাইকে গণ্য করতে হবে। পুরুষ হলেই পরিবারে বেশি সুবিধা পাবে এই চিন্তাভাবনা থেকে সরে আসতে হবে আমাদের। এখন আর ঘরবন্দি নেই নারীরা। তারা জেগে উঠেছে। সমাজের সবখানেই তারা আলো ছড়াচ্ছে। সমাজকে আলোকিত করছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক। সব নারীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাই। নারী-পুরুষ মিলেই সমাজটাকে এগিয়ে নিতে হবে। একজন আরেকজনের প্রতি সম্মানটা দেখাতে হবে।
বিদ্যা সিনহা মিমণ্ড নারী ও পুরুষ উভয়েই মানুষ। নারীকে প্রথমত মানুষ হিসেবে সম্মান করতে হবে। প্রাপ্য সম্মান এবং সুযোগ পেলে দারুণভাবে এগিয়ে যাবে নারীরা। আজকে সমাজের যেকোনো পেশাতেই নারীরা সফলতার প্রমাণ দিয়ে কাজ করছেন। শিক্ষায়ও নারীরা পিছিয়ে নেই। তারা যোগ্যতা, চেষ্টা আর মেধা দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। এজন্য তাদের প্রতি ভালোবাসাটা অনেক বেশি কাজ করে। এভাবেই নারীরা সামনে এগিয়ে যাক।
ডলি জহুর- বর্তমান যুগের মেয়েরা কিন্তু অনেক দূর এগিয়েছে। মেয়েরা সংসারের পাশাপাশি অফিস করছে, মা হচ্ছে, বিজনেস করছে। এক হাতে অনেককিছু সামাল দিচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা একজন মেয়ে প্রথমে মা। তারপর অন্যকিছু। একটা সময় ছিল মেয়েরা ঘরের বাইরে যেত না, পড়ালেখাও কম করত। সেইসময় তারা পিছিয়েই ছিল। কিন্তু এখন সেই অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। মেয়েরা আরও এগিয়ে যাক, এই দিনে এটাই আমার চাওয়া।
জয়া আহসান- যার জন্য আমি আজ এখানে আছি, সেই বিশেষ মানুষটি আমার মা। তার দ্বারা প্রদর্শিত পথই আজ আমার স্বপ্নপূরণে সাহায্য করেছে। আমার নারী জন্ম আলোকিত করে দিয়েছে। এই বিশেষ দিনে, আমার জীবনে মায়ের অবদানের কথা বর্ণনা করতে আমার কাছে যথেষ্ট শব্দ নেই। সবকিছুর জন্য তোমায় ধন্যবাদ মা।
নুসরাত ফারিয়া- নারীর অধিকার নিয়ে কি এই একটি দিনই চিন্তা করব? বছরের এই একটি দিন শুধু নারীদের সম্মান জানানো হবে আর বাকি দিনগুলোতে তারা অবহেলিত থাকবেন; এমন হলে এই দিবসের কোনো প্রয়োজন নেই। অনেক ক্ষেত্রেই নারী অধিকার এখন ইতিবাচক হয়ে এসেছে। এসব ভাবনা অনেকটা এগিয়ে গেলেও এখনো আমাদের সমাজে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি।
শবনম বুবলী- শুধু এক দিন নারীদের মর্যাদা না দেখিয়ে সারা বছর দেখানো উচিত। তাহলে সেটা হবে নারীর প্রতি আসল অধিকার প্রদর্শন। আমাদের দেশের নারীরা আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। আর যারা অবহেলার শিকার হচ্ছেন তারা প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে আছেন বলেই মনে করি। তাই সব নারীর এই ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত।
শান্তা ইসলামণ্ড নারীকে ঘরের বাইরে যেতে এখন আর বাধা দেখছি না। প্রতিটি পরিবার চায় তার মেয়ে ভালো কিছু করুক, পড়ালেখা করুক এবং উপার্জন করুক। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারার জন্য চেষ্টা করুক। ২০ বছর আগে নারীর জন্য যেরকম সমাজ ছিল, এখন তা নেই। অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। নারীরা ঘর থেকে বের হয়েছে। তারা সব পেশায় নিয়োজিত আছে। তারা মেধায় কম নয় কারও চেয়ে। কিছু কিছু জায়গায় অসম্ভব মেধাবী তারা। এইসব নারীদের স্যালুট জানাই।