শেষ হলো বিটিভির শিল্পী ও সুরকার তালিকাভুক্তির কার্যক্রম
মুসলিমদের মধ্যে সংগীতের চর্চা কী উঠে যাচ্ছে?
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বিনোদন প্রতিবেদক
সঙ্গীত শিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক তালিকাভুক্তির কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্প্রতি শেষ হলো বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সব শিল্পীদের শিল্পী মনের ইচ্ছা পূরণের আর এক ধাপ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৫ জানুয়ারি ২০২৪ শেষ হয়। প্রাথমিকভাবে এবারে ৬৬৯৭ জন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে আধুনিকে-১৭৯৯ জন, রবীন্দ্র সঙ্গীতে-১১১১ জন, নজরুল সঙ্গীতে-১১৩৫ জন, পল্লীগীতিতে-২০৮৮ জন, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে-১৪৯ জন, দলীয় সঙ্গীতে-১৯১টি দল, সুরকার সঙ্গীত পরিচালকে-২২৮ জন। প্রাথমিক অডিশনে ২৬৫১ জন নির্বাচিত হন এবং চূড়ান্তভাবে সব বিষয় মিলিয়ে মোট ১৯৫০ জন শিল্পী ও সুরকার তালিকাভুক্ত হন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম দক্ষ বিচারক মণ্ডলীর দ্বারা এ বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা জানান। এ বিষয়ে আলোকিত বাংলাদেশের কাছে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শিল্পী নেয়ার প্রক্রিয়াটা আমরা তৈরি করি আর শিল্পী নেয়া হয় বিশেষজ্ঞ শিল্পীদের মাধ্যমে দুটো ভাগে ভাগ করে। বিচারক হিসাবে তারা জেনে বা বুঝে যেসব শিল্পী নির্বাচন করেন সেই শিল্পীদেরই নেয়া হয়। তবে এবারের অডিশন খুব সুন্দরভাবে দক্ষতার সাথে পরিচালিত হয়েছে। এখানে বিচারকগণ যে রায় দিয়েছিলেন সেটাই গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
২০২৩ইং বর্ষের অডিশন বোর্ডের সদস্য সচিব ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোল্লা আবু তৌহিদ জানান, বাংলাদেশ টেলিভিশন হবে সবার সাথে বন্ধুত্বের মতো মিশে এ শিল্পকে আরো বেগবান করার একটি স্থান। আমি সেই কাজটিই করি। শিল্পী তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়াটি সাধারণত বিচারকম-লীরা করে থাকেন। সুন্দর সুচারুভাবে সব গুণীজনদের মাধ্যমে এই অডিশনটি সমাপ্ত হয়েছে। বিচারকম-লীদের মধ্যে আধুনিক গানে ছিলেন সুজেয় শ্যাম, শেখ সাদী খান ও আনিসুর রহমান তনু; নজরুল সঙ্গীতে ইয়াকুব আলী খান ও ইয়াসমিন মুশতারী; রবীন্দ্র সংগীতে সাজেদ আকবর, লিলি ইসলাম, গোলাম সারোয়ার ও বুলবুল ইসলাম; লোক/পল্লী/দলীয় সংগীতে ফরিদা পারভীন, কিরণ চন্দ্র রায়, আজগর আলীম, আবু বকর সিদ্দিকসহ গুণী আরো অনেকে।
আধুনিক গানের আরেকজন বিচারক শেখ সাদী খান বলেন, ঢাকার শিল্পীর থেকে বাইরের শিল্পী বেশি এসেছে এবার বিশেষ করে চট্টগ্রামের শিল্পী বেশি পাওয়া গেছে। বেশ কয়েক বছর পর অডিশন হলো এতে করে খুব বেশি শিল্পী অডিশন দিয়েছে ও ভালো শিল্পী পেয়েছে বিটিভি। এতদিন ধরে যে অডিশন হয়েছে কিন্তু এবার ভালোভাবে মেইনটেইন হয়েছে। এতবড় একটা ইভেন্ট ম্যানেজ করা খুব কঠিন কিন্তু পিএম আবু তৌহিদ খুব ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। লোক/পল্লী/দলীয় সংগীতের বিচারক ফরিদা পারভীন বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনে এবার অডিশনে আমি খুব বেশি দিন বিচারক ছিলাম না। শিল্পী নিয়োগে আমি কারো তদারকি করতে দেখিনি। ভালো না গাইলে আমি নম্বর দেইনি। আর একটি কথা হলো, আমি শিল্পী হয়ে শিল্পীদের সাথে প্রতারণা করিনি। রবীন্দ্র সংগীতের বিচারক বুলবুল ইসলাম বলেন, এবারের অডিশন অনেক বড়। অনেক অডিশন দেখেছি কিন্তু এবারের অডিশনে প্রচুর প্রার্থী, এটা উৎসাহব্যঞ্জক। পুরুষ শিল্পী প্রায় বিলীনের পথে। সেই সাথে মুসলিমদের ভেতর থেকে সঙ্গীত চর্চা উঠে যাচ্ছে কি না? কারণ মুসলিমদের মধ্যে থেকে ১০০ জনে ৪-৫ জন পেয়েছি। দেশের এত শিল্পী তাদের সন্তানরা কেন সংগীত চর্চায় আসছে না? এর কারণ জানা দরকার। বাংলাদেশ টেলিভিশন এত বড় একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে তাদের চর্চা আরো দরকার। তবে এবার ভালো শিল্পী এসেছে। আমার মতে টেস্টটা স্ক্রিনে হওয়া উচিত ছিল। যা হোক সব মিলিয়ে এবারের অডিশন ভালো হয়েছে। রবীন্দ্র সংগীতের বিচারক লিলি ইসলাম বলেন, বিটিভির এবারের অডিশনটা দীর্ঘদিন পর হলো। মূল কথা হলো যে প্রস্তুতি নিয়ে টিভিতে অডিশন দিতে আসার কথা সে প্রস্তুতি অনেকের মধ্যে দেখিনি। সঠিক ও শুদ্ধভাবে গানের চর্চাটা হচ্ছে না। আমরা নিজেরা যখন অডিশন দিয়েছি তখন আমাদের চর্চাটাই ছিল আলাদা। তবে ভালো শিল্পী যে পাইনি তা নয়। ২৫টি গানের লিস্ট দিয়েছে অথচ তারা ২৫টি গান ঠিকমতো জানে না। সামগ্রিকভাবে বলা যায় ভালো যারা করেছে তারা এসেছে।
নজরুল সংগীতের বিচারক ইয়াসমিন মুশতারী বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের এতবড় অডিশন আয়োজন।
এই আয়োজনে শিল্পীদের আরো চর্চা নিয়ে আসা দরকার ছিল বিশেষ করে নজরুল সংগীতে। তবে সবাই তো ভালো গাইবে না এর মধ্যেই যারা ভালো করবে বা করেছে তারা পাস করেছে। কিছু শিল্পী বলতে হয় খুবই ভালো কণ্ঠ। এত বড় বিটিভির প্লাটফর্ম বাংলাদেশ টেলিভিশন করে দিলো সেখানে সকল শিল্পীদের উচিত বিটিভির মাধ্যমে স্রোতা দর্শকদের বা দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে বাংলাদেশের সম্মানটা সাংস্কৃতিকে তারা যেন ভালো গেয়ে পৌঁছে দিন এই চাওয়া আমাদের। সর্বোপরি বৃহৎ এ অডিশনটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকলো বিটিভির জন্য। নজরুল ও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের বিচারক এয়াকুব আলী খান বলেন, বিচারক হিসেবে এটুকু প্রথমেই মনে করেছি এবার যেসব শিল্পী এসেছে তারা আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। অতএব এই প্রজন্ম আমাদেরই তৈরি করে রেখে যেতে হবে। সেইদিক বিবেচনা করেই আমরা নজরুল ও উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী নিয়েছি। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে ঢাকার বাইরের শিল্পীদের চর্চা বেড়েছে এবং ভালো শিল্পীও পেয়েছি সেই তুলনায় ঢাকার শিল্পী ওভাবে পাইনি।