বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ সেশনের নির্বাচন বাতিল চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেছেন পরাজিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নাসরিন আক্তার নিপুণ। গত বুধবার সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন করেন নিপুণ। রিটে মিশা-ডিপজলের নেতৃত্বাধীন কমিটির দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন নিপুণ। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত এ অভিনেত্রী হোয়াটসঅ্যাপে বলেন, ‘আরও আগেই করা উচিত ছিল। ভোট হয়েছে শুক্রবার। ভোটের ফলাফল এসেছে শনিবার সকালে। রোববারই রিটটি করা দরকার ছিল। কিন্তু আমি অসুস্থ হয়ে পড়ায় এবং জরুরি কাজে যুক্তরাজ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। আমি আসার সময় সবকিছু প্রসেস করে রেখে এসেছিলাম। গত মঙ্গলবার আমার আইনজীবীর মাধ্যমে রিটটি করেছি।’ আরও বলেন, ‘ভোট শেষ হওয়ার পর তখন সন্ধ্যা সাতটা। তখন থেকেই নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান ও আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের কথাবার্তা আমার কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান খসরু ভাই বারবার আমাকে বলছিলেন, ‘এখানে বসে থেকে আর লাভ নেই। বাসায় চলে যান। মিশা-ডিপজল পুরো প্যানেল জয়লাভ করবে।’ আমি বারবার বলেছি, ‘হারজিত যা হোক, ফলাফল না নিয়ে এখান থেকে যাব না।’ তখনো পোর্টফোলিও ভোটের বাক্সই খোলেনি, কীভাবে চেয়ারম্যান এসব বলতে পারেন?’ নিপুণের প্যানেলের প্রার্থীকে হুমকিধমকি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘ভোটের দিন সন্ধ্যায় ভোটগ্রহণ শেষ হলে আমি বাসায় গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে আবার এফডিসিতে আসি। তখন রাত হয়তো ১০টা বাজে। তার আগেই আমার প্যানেল থেকে নির্বাহী পরিষদের সদস্য পদপ্রার্থী সাদিয়া মির্জা আমাকে ফোন করে জানান, মিশা ডিপজল প্যানেল থেকে কেউ কেউ হুমকি দিচ্ছেন তাকে। কারণ, আগের দিন সাদিয়া ডিপজলের বিরুদ্ধে ভোট কেনার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। আমি এফডিসিতে ফেরার পর পরিবেশ ঘোলাটে দেখতে পাই। নিপুণ বলেন, যতই রাত বাড়ছিল, ততই ভোটকেন্দ্র ও বাইরের পরিবেশ আমার কাছে হুমকিস্বরূপ মনে হচ্ছিল। সেদিনের এমন পরিবেশ আমি আগে কখনও দেখিনি এফডিসিতে। পুরো আঙিনা তারা দখলে নিয়েছিল। ভোটের গণনা শেষ হতে তখনো অনেক সময় বাকি ছিল, কিন্তু তাদের হাবভাবে মনে হচ্ছিল, তখনই তারা পুরো প্যানেল জিতে গেছে। আমি নিজেও নিরাপদ মনে করিনি ভোট গণনার পুরো রাত। তাই আমিসহ আমার প্যানেলের কয়েকজন এক নম্বর স্টুডিওর মেকআপ রুমে তালা মেরে ভেতরে বসে ছিলাম ভোটের ফলাফল পর্যন্ত।’ হাতে প্রমাণ আছে দাবি করে অভিনেত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বাতিল ভোটের সংখ্যা সঠিক দেননি। আমার জানামতে, ৮১টি ভোট বাতিল হয়েছে। কিন্তু তারা ৪০টি ভোট বাতিল দেখিয়েছে। এ নিয়ে স্পষ্ট করে কোনো কিছুই আমাদের প্যানেলকে জানায়নি নির্বাচন কমিশন।’ তার কথায়, ‘যেহেতু আমি ভোটের ফলাফল পর্যন্ত ছিলাম। তাছাড়া ওই সময় সেটি করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। মিশা-ডিপজল প্যানেলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন, আপিল বোর্ডের যোগসাজশে ভেতরে-ভেতরে এত বড় অনিয়ম চলে আসছিল, সেটি ফলাফল প্রকাশের অনেক সময় পর স্পষ্ট হয়েছে।’ নিপুণ আরও বলেন, ‘আদালত তো আমাদের আস্থার জায়গা। যেসব ডকুমেন্টের ভিত্তিতে রিট করা হয়েছে, আমি বিশ্বাস করি, নবনির্বাচিত কমিটি স্থগিত হবে। আমাদের পক্ষে রায় আসবে।’ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন হয়। উৎসবমুখর পরিবেশে ৫৭০ জনের মধ্যে ৪৭৫ জন শিল্পী ভোট দেন। ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠনের এই নির্বাচনে ছয়জন স্বতন্ত্রসহ দুটি প্যানেল থেকে ৪৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।