অভিনয় জগতে সালমান শাহ্ এখনো অনুসরণীয় ?
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নূরনাহার নিপা
ন ব্বই দশকের সাড়া জাগানো ক্ষণজন্মা নক্ষত্রের নাম, বাংলাদেশের বিপুল জনপ্রিয় একনাম, অকালে চলে যাওয়া আমাদের প্রিয় নায়ক সালমান শাহ্ ওরফে ইমন। সালমান শাহর মৃত্যুর আজ অবধি সিনেমা প্রেমীদের অন্তরে দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে উচ্চারিত হয়, নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর পর বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালী সূর্যটা চিরদিনের জন্য ডুবে গেছে, তার মৃত্যুর পর ঢালিউডের প্রাণচাঞ্চল্য আর কোনো নায়কই ফিরিয়ে আনতে পারেনি, ক্যারিয়ারের খুব অল্প সময় হাতে গোনা কয়েকটি ছবিতে তিনি দর্শকদের সবটুকু ভালোবাসা জয় করে নিয়েছিলেন, ১৯৯৬ সালে ৬ সেপ্টন্বর তার রহস্যঘেরা মৃত্যু হয়, নব্বই দশকের শুরুর দিকে থেকে ১৯৯৬ সাল।
সে সময় ২৫ বছর বয়সী উচ্ছল এই তরুণের একক আবিপত্য ছিল চলচ্চিচিত্র এ মহলে, একাত্ব রাজত্ব। উপহার পারদ এতোটাই ঊর্ধ্বগমী ছিল যে আজ অবধি কোনো নায়ক সে উচ্চতা ডিঙাতে পারেননি। ধুমকেতুর মতো তার আগমন। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, এতোটা অল্প সময়ে তার আগে এই বাংলার আর কেউ পায়নি।
?তাকে নিয়ে আলোচনার শেষ হবার নয়, মিউজিক ভিডিও জনপ্রিয়তা পেলেও নিয়মিত টিভিতে আসার কারণে দর্শক আস্তে আস্তে ইমনকে ভুলে যায়।
?তার কয়েক বছর পর
আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় পাথর সময় নাটকে একটি ছোট চরিত্রে কাজ করছিলেন। নায়ক সালমানের আত্মাপ্রকাশ ১৯৯৩ সালে ২৫ মার্চ। হিন্দিতে তুমুল জনপ্রিয় পাওয়া কেয়ামত থেকে কেয়ামত এক ছবির কপিরাইট বৈধভাবে কিনে আনন্দমেলা লিমিটেড পরিচালক সোহানোর রহমান সোহানকে দিয়ে তৈরি করে কেয়ামত থেকে কেয়ামত, সে সময়কার জনপ্রিয় মডেল আনন্দবিচিত্রা সুন্দরী মৌসুমীর সঙ্গে অভিনয় করেন। অপেক্ষাকৃত স্বল্প পরিচিত ইমন। আর ও ছবির মাধ্যমেই ইমন হয়ে উঠলেন পুরো বাংলার প্রিয় নায়ক সালমান শাহ্।
তার অভিনীত ছবির তালিকা.... কেয়ামত থেকে কেয়ামত, তুমি আমার, অন্তরে অন্তরে, সুজনসখী, বিক্ষোভ, স্নেহ, প্রেমশক্তি, কন্যাদান, দেনমোহর, স্বপ্নের ঠিকানা, আঞ্জমান, মহামিলন, আশা ভালোবাসা, বিচার হেেব, এই ঘর এই সংসার, প্রিয়জন, তোমাকে চাই, স্বপ্নের পৃথিবী, জীবন সংসার, মায়ের অধিকার, চাওয়া থেকে পাওয়া, প্রেম পিয়সী, স্বপ্নের নায়ক, শুধু তুমি, আনন্দ অশ্রু, সত্যের মৃত্যু নেই, বুকের ভেতর আগুন।
জীবনের সবকিছুকে পিছনে ফেলে সালমান দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চললেন তার গন্তব্যে। কখনো মৌসুমী, কখনো শাবনূর, কখনো শাবনাজ, কখনো শাহনাজ, কখনো শিল্পী, কখনো লিমাকে এইভাবে উপহার দিতে থাকলেন দর্শকপ্রিয় ব্যবসা সফল ছবি। তোমাকে চাই ছবিতে পাগল প্রেমিক, মায়ের অধিকার ছবিতে মায়ের জন্য ব্যাকুল সন্তান, বিক্ষোভ ছবিতে সালমান দর্শকের সামনে এলেন নিজেকে ভেঙেচুরে নতুন রুপে এ্যাকশন হিরো হিসাবে।
এভাবেই বৈচিত্র্যময় চরিত্র নিয়ে নিত্য নতুন স্টাইল আর ফ্যাশনের শীর্ষে থাকাবস্থায় ছোট পর্দাতে ও কাজ করেছিলেন সাফল্য ও বরপুত্র। তিনি বিটিভির নিজস্ব প্রডাকশন মামুনের রশীদের ধারাবাহিক ইতিকথা এবং কিছু প্যাকেজ নাটকে অভিনয় করেন।
জনপ্রিয়তা থাকা অবস্থায় তিনি আত্মহত্যা করেন। পারিবারিক কলহ, প্রেম, দামপত্য জীবন, অভিমান ও অভিনয় জীবনের নানা দ্বন্দ্বে আবেগপ্রবণ হয়ে সালমান শাহ্ আত্মহত্যা করেছেন। জানা যায় সালমান শাহ্ যেদিন আত্মহত্যা করেন সেদিন রাতে তার সঙ্গে সামিরার সঙ্গে প্রচুর ঝগড়া হয়েছিল। ঝগড়ার এক পর্যায়ে রাত ১২টার দিকে সালমানের ফোন আসে, শাবনূর ফোন করে, এ সসময় রাগে সিটিসেল মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলেন। সামিরা বাসা থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে সালমান দারোয়ানকে আটকাতে বলে। তার ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হোসেনসহ তাকে বুঝিয়ে আবার গেট থেকে ফেরত নিয়ে আসেন। এ সময় শাবনূরের দেয়া উপহার ফ্যান আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেন। সালমান খুব অভিমানি ছিলেন তারপর কান্না করতে থাকেন। মাঝরাতে তাদের আরো ঝগড়া হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে গৃহপরিচারিকার কাছ থেকে পানি পান করেন। তারপর, আবার বাথরুমে যান। এরপর আবার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করেন। অনেকক্ষণ পর বাসার গৃহপরিচারিকা জামা নেবার জন্য দরজা নক করে, দরজা যখন খোলছে না তখন সবাই মিলে দরজা খুলে দ্যাখেন সালমান ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছেন। সামিরার চিৎকারে তখন সালমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হোসেনসহ অনেকে ছুটে আসে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেন্বর রাজধানী নিউ ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় নিজ বাসায় সালমান আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে সালমান একটি সুইসাইড নোট লিখে রাখেন। পরে সি আইডির হস্ত বিশাররা চিঠিটা পরীক্ষা করেন এবং এরপর সেই সময় এ সুইসাইড নোট প্রকাশ্যে এলে বিষয়টি অস্বীকার করেন। সালমানের মা নীলা চৌধুরী। তিনি বলেন, যারা আমার ছেলেকে খুন করেছে তারাই এই চিঠি লিখেছে।
?এখনো এই খুনের রহস্য তিনি খুঁজে মামলা করেন বিভিন্ন সংগঠনে সমাবেশ করেন। কিন্তু এতো বছরে ও এই খুনের রহস্যর আড়ালে। জনপ্রিয় নায়কের মৃত্য এখনো ভক্তরা হতাশ জানতে চাই প্রিয় নায়কের মৃত্যুর রহস্য। ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (২৫ মার্চ, ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নায়িকা মৌসুমীর বিপরীতে প্রেক্ষাগৃহের রুপালি পর্দায় অভিষেক হওয়া সালমান শাহ্ শুরুতেই বিশাল সাফল্য দিয়ে প্রাণসঞ্চার করেছিলেন মৃতপ্রায় চলচ্চিত্রে। তারপর তো শুধুই ইতিহাস। সালমান শাহ্ মানে দর্শকের ভালবাসা আর চলচ্চিত্রের জন্য আশীর্বাদ। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ ?শুধুই সাফল্যের পথ হেঁটে যাওয়া। চলচ্চিত্রের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের বিচরণ। তার অভিষেকে ঢালিউডের আকাশে সাত রং এঁকে দেয় রংধনু। রাতের আকাশ আলোকিত হয় সালমানের দক্ষ অভিনয়চ্ছটায়। আগের সব অভিনয় শিল্পীকে ম্লান করে দিয়ে ধূমকেতুর মতো চলচ্চিত্রের আকাশে জ্বল জ্বল করছিলেন তিনি।
?মাত্র ৪ বছরের অভিনয় জীবনে ‘অন্তরে অন্তরে’ (১০ জুন ‘বিক্ষোভ’ (৯ সেপ্টে, ৯৪), ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ (১১ মে, ৯৫), ‘এই ঘর এই সংসার’ (৫ এপ্রিল, ৯৬), ‘তোমাকে চাই’ (২১ জুন, ৯৬), ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ (৪ অক্টো, ৯৬), ‘জীবন সংসার’ (১৮ অক্টো, ৯৬) মোট ২৭টি (১৪টি শাবনূর ও ৪টি মৌসুমীর বিপরীতেসহ) ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রই উপহার দেননি সালমান শাহ্, দুটি চলচ্চিত্রে শুতিমধুর গানও গেয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। আকস্মিকভাবে এই ধূমকেতুর বিচ্যুতির অনাকাঙ্ক্ষিত একটি কালো দিন। এই দিনে রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে তার। কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে অকালে পরপারে যাত্রা মহাকালের মহানায়কের। মৃত্যুর মাত্র কদিন আগে সালমান শাহ্ বলেছিলেন, ‘এখনই এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত নই।
?শুধু আমার নয়, কারো ভাগ্যে যেন বিধাতা অকাল মৃত্যু না লিখেন। বেঁচে থাকার জন্য যার আকুতি ছিল এমন। তিনি কি করে আত্ম অভিমানে নিজেকে সংহার করলেন। এ প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধের বছর সিলেটে জন্ম নেয়া এই মহানায়কের মৃত্যুর রহস্যের জট একদিন খুলবেই।
এ প্রত্যাশায় পুরো জাতি প্রতিক্ষায় রয়েছে এখনো।
হযরত শাহজালাল (রহ.) এর পুণ্যভূমি সিলেটে জমিনে চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে আছে আমাদের প্রিয় সালমান। সবাই জানেন সালমানের মৃত্যু নেই। আমি তার এমন ভক্ত সালমান শাহ্ মৃত্যুর পর। এতো বছরে এখনো সিনেমা হলে যাইনি। তার কবর জিয়ারত করতে মাঝে মাঝে পবিত্র সিলেট শাহজালাল মাজারে যায়। সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে বিমোহীত করে, আমার কৈশোরিকা তারণ্য জীবনে তার কথার ঢং আমার হৃদয় নাড়ে অভিনয় দক্ষতা, তার পোশাক, স্টাইল, সংলাপ, সবকিছু মিলে বারবার প্রেমে পড়েছি এবং তার প্রতি মুগ্ধতা অনুভব করেছি। তার মৃত্যুতে গভীরভাবে আহত হলাম।
বর্তমান সময়ের সিনেমাগুলো আমার কাছে এক ধরনের অনীহা। তার প্রস্থানের ২৯তম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাভরে আমরা স্মরণ করছি চিরকালের এই মহানায়ককে। সাফল্যের বরপুত্র সালমান শাহ্ তুমি দুঃখ কর না, কোটি ভক্তের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবে তুমি। বাংলার মাটিতে প্রিয় সালমানের বিচার দাবি জানাই।