বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনির ঘটনায় তারকাদের নিন্দার ঝড়
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রেজাই রাব্বী
সম্প্রতি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামে এক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে মারা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা শামীমও গণপিটুনিতে আহত হয়ে মারা গেছেন। যদিও বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ডই কাম্য নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে দেশের সাধারণ মানুষ, হচ্ছে প্রতিবাদ। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে দুইজনকে হত্যার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি ‘অমানবিক’ ও ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিনোদন জগতের তারকারাও।
দেশের স্বনামধন্য এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া এ ন্যক্কারজনক ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুঃখ ও ঘৃণা প্রকাশ করে ঘটনার বিচার দাবি করেন তারকারা:
জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী লিখেছেন- ‘গণপিটুনিকে নরমালাইজ করা হচ্ছে কেন?’ এরপর তোফাজ্জলের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন তিনি। মেহজাবীনের শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, হাস্যোজ্জ্বল তফাজ্জলের জীবনের নানা মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও। সারল্যমাখা সুন্দর হাসির মানুষটিকে হত্যার ঘটনা নাড়া দিয়েছে সবাইকে। দল-মত নির্বিশেষে সবাই এ হত্যার বিচার চাইছেন।
পরীমনি নিজের ফেসবুকে নিহত তোফাজ্জলকে নিয়ে বানানো একটি ছবি শেয়ার দিয়েছেন। সেখানে লেখা, ‘বাবা, মা, ভাই কেউ তো নাই! বিচার চাইবো কেডা?’ এমন পোস্টারের ক্যাপশনে পরী লিখেছেন, ‘কেউ নাই আমাদের আর। আল্লাহ তোমার বিচার তুমি করো।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠা বিতর্কের ঝড়ে সরব হয়েছেন তমা মির্জাও - তিনি নিজের ফেসবুকে নিহত তোফাজ্জলকে নিয়ে বানানো একটি ছবি শেয়ার দিয়েছেন। সেখানে লেখা, ‘বাবা, মা, ভাই কেউ তো নাই! বিচার চাইবো কেডা?’
শামীম হাসান সরকার ফেসবুকে লিখেছেন- ‘কারো কোনো ক্ষতি না করেও রাতে ঘুম আসে না। চিন্তা হয় কত কিছু নিয়ে, নিজেকে নিয়ে, পরিবারকে নিয়ে, ভবিষ্যত নিয়ে, দেশকে নিয়ে! আপনারা খুন করে রাতে ঘুমান কীভাবে? ভাত খান কীভাবে? কষ্ট হয় না?’ এ অভিনেতা আরো লেখেন, ‘মানসিক ভারসাম্যটা তোফাজ্জলেরই ছিল, আপনাদের ছিল না? ভিডিওগুলো যতবার সামনে আসছে, বুকটা ফাঁকাই লাগছে। কীভাবে সম্ভব? তবে বিচার হতেই হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের ছাত্র-ছাত্রীদের দায়িত্ব এ খুনীদের বিচার করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষার্থে হলেও করতেই হবে।
নির্মাতা আশফাক নিপুন লিখেছেন- ‘আমি শুধু তাদের মায়েদের কথা ভাবি। এই যে তফাজ্জল নামের এক মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ যুবক কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র পিটিয়ে মেরে ফেলল, আমি ভাবি তফাজ্জলের মা সেটা দেখতে পেলে কি করতেন? জানলাম উনি মারা গেছেন আগেই। কিন্তু এমনও তো হতে পারে তফাজ্জলের কাছ থেকে ৩ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন উনি, ছেলেকে বাঁচাতে পারছিলেন না দেখে চূড়ান্ত অসহায় বোধ করছিলেন?’ তিনি আরো বলেন, ‘হয়ত ছেলেকে ভাত খেতে দেখে আশান্বিত হচ্ছিলেন যে ছেলের কিছু হবে না আর, এই যাত্রা বেঁচে যাবে? হয়ত এরপরও নির্যাতনের মাত্রা দেখে আল্লাহর কাছেই ফরিয়াদ করছিলেন ছেলেটার যেন মৃত্যু হয়, ছেলেটা যেন আর কষ্টের ভেতর দিয়ে না যায়?’ নির্মাতার ভাষ্য, ‘আমি শুধু সেইসব মায়েদের কথা ভাবি। যারা ৯ মাস গর্ভে ধারণ করা থেকে সন্তান জন্ম দিয়ে তার পুরোটা জীবন সেই সন্তানকে লালন পালন করে, বড় করে একদিন জানতে পারেন তার ছেলেকে বা মেয়েকে কেউ মেরে ফেলেছে। কি যায় তাদের ভেতর দিয়ে সেটা ভাবি। তল পাই না। অন্ধকার লাগে সব। আমি আমার মায়ের কথা ভাবি। ভাবি আমাকেও যদি কেউ এভাবে দলবেঁধে মেরে ফেলে তাহলে আমার মায়ের কেমন লাগবে? কেমন অসহায় বোধ করবে সে? আপনারাও ভাবেন কি?’
অভিনেত্রী সুষমা সরকার লিখেছেন- ‘হায় মানবিকতা।’ গায়ক পারভেজ লেখেন, ‘যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ? দিনশেষে অত্যাচারী আর অত্যাচারিত এই দুই দলেই বিভক্ত থেকে গেলাম আমরা?’
গায়ক এফএ সুমন লিখেছেন- ‘হায় রে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যার কেউ নাই তার আল্লাহ আছে। আল্লাহ এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করো। বর্তমান সরকারের প্রতি সঠিক তদন্ত করে এর দ্রুত বিচারের আহ্বান জানাচ্ছি। তোফাজ্জল ভাইকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। আমিন।’
মৌসুমী হামিদ লিখেছেন- আমি তোফাজ্জল হত্যার বিচার চাই। এই হাতের ওপর লাঠি রেখে যারা ওর হাত পাড়াচ্ছে? পা দুইটা থেঁতলায় ফেলছে মারতে মারতে? এদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। এর আগে আরো এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে মৌসুমী হামিদ লিখেন, মুগ্ধ, আবু সাইদসহ যত ভাই শহীদ হয়েছেন কারো রক্ত এখনো রাজপথ থেকে শুকায় নাই। শত শত ভাই এখনো হাসপাতালে। পা নাই চোখ নাই। কতজন নিখোঁজ এখনো! আর আপনারাও আর একটা ভাতের হোটেল খুলে বসছেন? যেখানে পেট চুক্তি ভাত খাওয়াইয়া মানুষ পিটিয়ে মারেন?
ছাত্রদের ওপর যে নির্যাতন দেখে গোটা দেশের মানুষ রাস্তায় নামছিল, রিকশাওয়ালা মামারা তাদের সারাদিনের উপার্জিত অর্থ দিয়ে আপনাদের পানি বিস্কুট কিনে খাওয়াইছিল? কীভাবে ক্ষমা করবেন নিজেকে? এত নির্দয়? তিনি আরো বলেন, যারা পাগল লোকটার হাতের ওপর লাঠি দিয়ে ওই লাঠি পাড়া দিয়ে ধরছেন আপনারা ভাত খাবেন না ভাই? আপনাগো বাপ, মা, ভাই, বোইন ভাত খায় না? নিজের সামনে ভাতের থাল দেখলেই ওনার চেহারাটা মনে পড়বে না?