গত কয়েক বছর ধরে বদলে গেছে বিনোদনের মাধ্যম। সিনেমার বাইরে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ছিল দর্শকের অন্যতম বিনোদনের উৎস। নতুন প্রজন্মের কাছে টেলিভিশন হয়ে গেছে সেকেলে। সে জায়গা নিয়েছে ওটিটি বা ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশের দর্শকের কাছে পশ্চিমের ‘নেটফ্লিক্স’ ছিল দুনির্বার আকর্ষণ। তবে এখন শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষার ওটিটি নয়; হাতের কাছে রয়েছে দেশের একাধিক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। যেখানে বছরজুড়ে প্রচার হচ্ছে হরেক জনরার ওয়েব সিরিজ ও ওয়েব ফিল্ম। বাংলা ভাষার কনটেন্টে ওয়েব জগত সয়লাব। যে ধারাবাহিকতা ছিল শেষ হতে যাওয়া ২০২৪ সালেও। দেশীয় প্ল্যাটফর্ম বঙ্গ, বিঞ্জ, দীপ্ত প্লে প্রভৃতির মতো আলোচনায় থাকছে ওপার বাংলার হইচই। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুন কনটেন্টের পাশাপাশি দর্শক দেখেছে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া সিনেমা। পুরনো সিরিজ ও ওয়েব ফিল্ম তো থাকছেই। আলোচিত কয়েকটি সিরিজ ও ওয়েব ফিল্ম নিয়েই আজকের আয়োজন।
বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল হইচই। পুরনো এ বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চলতি বছর এসেছে দর্শকপ্রিয় কয়েকটি অরিজিনাল সিরিজ। যার অন্যতম স্পিন অফ সিরিজ ‘গোলাম মামুন’। নন্দিত নির্মাতা শিহাব শাহীন নির্মাণ করেন ‘বুকের মধ্যে আগুন’ সিরিজের স্পিন অফ। যার কেন্দ্রীয় চরিত্রে রূপদান করেন তারকা অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। গেল জুনে মুক্তি পাওয়া এ সিরিজ দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। বছরের শেষ ভাগে আরেকটি চমক দেখায় হইচই। অনম বিশ্বাস ওয়েব প্ল্যাটফর্মে হাজির করান লাস্যময়ী চিত্রনায়িকা পরীমণিকে। ওয়েব সিরিজের নাম ‘রঙিলা কিতাব’। এ সিরিজে রূপালী পর্দার পরীর অভিনয় প্রতিভা তুলে ধরেছেন নির্মাতা। কিঙ্কর আহসানের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এ সিরিজ দারুণভাবে আলোচনায় এসে যায় গল্প, অভিনয় ও নির্মাণের মুন্সিয়ানায়। হইচই চলতি বছর আরেকটি ওয়েব সিরিজ মুক্তি দেয়। ভিকি জাহেদ পরিচালিত ‘রুমি’-তে অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী। তিনি এর আগে ‘তাকদীর’ ও ‘কারাগার’ ওয়েব সিরিজ দিয়ে ওটিটিতে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেন। তাকে নিয়ে ভিকির ‘রুমি’ যত গর্জেছিল তত বর্ষেনি। দর্শক ভিকির ‘টুইস্ট’র মাঝে ব্যতিক্রম লক্ষ্য না করায় এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। কাজল আরেফিন অমি দর্শকপ্রিয় নির্মাতা। তার কাজ মানেই নিখাদ বিনোদন। আরো একবার নিজের বৈশিষ্ট্য কাজের মাধ্যমে তুলে ধরলেন তিনি। ‘বঙ্গ’ প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় তার দুটো ফিকশন ‘অসময়’ ও ‘ফিমেল ৪’। যার মধ্যে ‘ফিমেল ৪’ দিয়েছে নতুন মাত্রার বিনোদন। অন্যদিকে, ‘অসময়’ দর্শককে ভাবিয়েছে। অমি তার ঘরের অভিনয় শিল্পীদের নিয়ে একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়ে গেছেন এ বছর। কিছু দর্শক সমালোচনায় মুখর হলেও ভিউ’র দৌড়ে বরাবরই এগিয়ে থাকেন অমি। এর বাইরে ‘বঙ্গ’ প্রচার করে ‘সেকশন ৩০২’ ও নিজস্ব সিরিজ ‘মেসমেট’। বছরের শেষ ভাগে মুক্তি পেয়ে আফজাল হোসেন অভিনীত সিরিজটি আলোচনায় এসেছে এরই মধ্যে। সিরিজটি পরিচালনা করেছেন জন মিল্টন।
দীপ্ত প্লে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত তিনটি কাজকে এগিয়ে রাখা যায়। যেগুলো হলোবিভাবরী, ত্রিভুজ ও পয়জন। ফিকশনগুলো পরিচালনা করেন পর্যায়ক্রমে টিটো রহমান, আলোক হাসান ও সঞ্জয় সমাদ্দর। তিনটি কাজ দর্শক মহলে আলোচনার জন্ম দেয়। দেশীয় ওটিটি বাজারে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে দীপ্ত প্লে। দেশের আরেকটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘বিঞ্জ’। চলতি বছর তাদের দুটো কাজ আলোচনায় এসেছে। যার অন্যতম, ‘একটি খোলা জানালা’ এবং ‘ফ্রেঞ্জি’। সিরিজগুলো পরিচালনা করেছেন যথাক্রমে ভিকি জাহেদ ও জাহিদ প্রীতম। ‘একটি খোলা জানালা’ ছিল হরর ঘরানার। এবং ফ্রেঞ্জি বলছে বন্ধুত্বের গল্প। দুই ঘরানার দুটো কাজ নিয়ে আলোচনায় এসেছে দুই নির্মাতা। আলোচিত ওয়েব সিরিজের বাইরেও আরো ওয়েব সিরিজ ও ওয়েব ফিল্ম রয়েছে। দর্শকের হাতে স্বাধীনতা পছন্দের কনটেন্ট দেখার। তুলনামূলক কম ওয়েব সিরিজ মুক্তি পেয়েছে এবার। নতুন বছরে কনটেন্ট সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দর্শক বিশ্বাস করেন গুণগত মান বজায় রেখে ফিকশন প্রচার করা প্রয়োজন সংশ্লিষ্টদের।