নভেরা আহমেদ ও হামিদুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ১৯৫৭ সালে বাংলাদেশের ‘শহিদ মিনারর চূড়ান্ত নকশা তৈরি করে শুরু করা হয় শহিদ মিনার নির্মাণের কাজ। এরপর ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহিদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম ‘শহিদ মিনারটি’ উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে ভাষা শহিদদের স্মৃতির প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে ‘শহিদ মিনার’-এ যান সবাই। স্থপতি হামিদুর রহমান মারা গেছেন ১৯৮৮ সালে। প্যারিসে অবস্থান কালে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে পঁয়তাল্লিশ বৎসর বয়সে তিনি গ্রেগরি দ্য বুনসকে বিয়ে করেন। রহস্যময় কারণে তিনি আর কখনো বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেননি। কিন্তু ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে স্ট্রোকের ফলে হুইল চেয়ারে বসেই তার শেষ জীবন কাটে। ২০১৪ থেকে নভেরা আহমেদ শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে তার অবস্থার অবনতি ঘটে।
সে বছরের ৫ মে ৭৬ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। কিছুদিন আগে চ্যানেল আইয়ের জেনারেল ম্যানেজার ও দীর্ঘদিন চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান প্রয়োজক হিসেবে কাজ করা অনন্যা রুমা প্যারিসে গিয়েছিলেন শিল্পী মনিরুল ইসলামের দুটি প্রামাণ্যচিত্রের কাজে। তখনই তার প্রবল আগ্রহ হয় নভেরা সম্পর্কে জানতে। সেই আগ্রহ থেকেই তিনি একটা সময় নভেরা আহমেদের স্বামীর সঙ্গে দেখা করেন। ঘুরে দেখেন নভেরার জাদুঘর। বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং ভিডিও করে রুমা নভেরাকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। যার নাম দিয়েছেন তিনি ‘নভেরা : স্মৃতির অভিযাত্রা’। এই তথচিত্রে ফুটে উঠেছে নভেরার ব্যক্তি জীবন ও শিল্পকর্মের কিছু কথা। অনন্যা রুমা জানান, প্যারিসের ফিল্ম মেকার ভিভিয়ান ভাগকে দেয়া মৃত্যুর পাঁচ মাস আগে শেষ সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ আছে এই তথ্যচিত্রে যেখানে নভেরা আহমেদ শহিদ মিনার প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। এদিকে নভেরার উপর পূর্ণ একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের লক্ষ্যে তিনি আগামী জুলাই মাসে আবারো প্যারিসে যাবেন রুমা। এদিকে নভেরা সম্পর্কে আপাতত বিস্তারিত কিছু জানান দিতে গত বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ‘আঁলিয়স ফ্রঁসেজ’এ ‘নভেরা স্মৃতির অভিযাত্রার বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এই বিশেষ প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসতিয়াগো, চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম, অভিনেতা নির্মাতা গাজী রাকায়েত, সঙ্গীতশিল্পী ফাহমিদা নবী, সিঁথি সাহা, রেইনবো ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালের চেয়ারম্যান আহমেদ মুজতবা জামাল শোভনসহ আরো অনেকে।
অনন্যা রুমা বলেন, ‘ষাট দশকের শেষ শ্রদ্ধেয় স্থপতি নভেরা আহমেদ বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিলেন। আর দেশে ফিরে আসনেনি। তবে বাংলাদেশ তাকে ১৯৯৭ সালে একুশে পদকে ভুষিত করেছিল। আমি যখন কলেজে পড়ি তখন থেকেই নভেরা আহমেদ সম্পর্কে জানার প্রবল আগ্রহ ছিল। কিছুদিন আগে যখন প্যারিসে যাই মনির ভাইয়ের দুটি তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য তখন আমাদের শ্রদ্ধেয় চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন স্যারের স্ত্রীর নভেরাকে নিয়ে লেখা নভেরা বিভূইয়ে স্বভূমে বই চোখে পড়ে। সেই বইটিই মূলত আমাকে শিল্পী নভেরা সম্পর্কে আরো জানতে অনুপ্রেরণা যোগায়। এভাবেই এক সময় আনা ভাবীর সহযোগিতায় শিল্পী নভেরার স্বামীর সঙ্গে দেখা করি। এভাবেই আসলে নভেরা : স্মৃতির অভিযাত্রার নির্মাণ। এখনো নভেরা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। নভেরাকে একুট দেখতে চান। তাদের জন্যই এই তথ্যচিত্র নির্মাণ। যারা আহ্বানে এই আয়োজনে এসেছিলেন তাদের কাছ থেকে যে অনুপ্রেরণা পেয়েছি, সেই অনুপ্রেরণার কারণেই নভেরাকে নিয়ে একটি পূর্ণ তথ্যচিত্র নির্মাণ করবো আগামী জুলাইতে।’ অনন্যা রুমা জানান, এই তথ্যচিত্র ইউটিউবে পাওয়া যাবেনা। চলতি বছর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এটি প্রদর্শিত হবে। আর বাংলা, ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ ভাষায় দর্শকরা এটি উপভোগ করতে পারবেন।