ঢাকা ২২ আগস্ট ২০২৪, ৭ ভাদ্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘সরকারের হিসাব অবাস্তব, মূল্যস্ফীতি ১২% হতে পারে’

‘সরকারের হিসাব অবাস্তব, মূল্যস্ফীতি ১২% হতে পারে’

সরকার ৬ দশমিক ২২ শতাংশের যে মূল্যস্ফীতির কথা বলছে, বাস্তবতার সঙ্গে তার আদৌ মিল নেই। এমনকি এ তথ্য বিজ্ঞানসম্মতও নয়। ধারণা করা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। আগামী দিনে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। গতকাল সোমবার বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, জাতীয় বাজেট ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রত্যাশা শীর্ষক একটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত এই ব্রিফিংয়ে তিনি মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন। কোর গ্রুপ সদস্য ও সিপিডির অপর বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানী এতে সভাপতিত্ব করেন।

অনুষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিকভাবে আলোচনায় অংশ নেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ পরিবেশ ও জলবায়ু ও সবুজ অর্থনীতি কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুমানা হকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ এতে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, সরকার মূল্যস্ফীতির কথা ৬ শতাংশের ওপরে বলে থাকে, যেটি প্রকৃত বাস্তবতার সঙ্গে আদৌ মিলে না। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। যেমন- ভোজ্যতেল ও পাম ওয়েলের দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশের ওপরে। আটা-ময়দার মতো পণ্যের দামও ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে মোটা চালের দাম বাড়েনি। কিন্তু মাঝারি বা সুগন্ধি চালের দাম অনেক বেড়েছে।

সার্বিকভাবে তেল, ডাল, ডিম, মুরগি ও মাছসহ ইত্যাদি পণ্যের দাম বাড়ার যে হার দিচ্ছে টিসিবি, তা বিবিএসের দেওয়া তালিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গেও মিলে না। বিবিএস যে মুদ্রাস্ফীতির তথ্য দিচ্ছেন তা বাস্তবসম্মত নয়, এমনকি বিজ্ঞানসম্মতও নয়।

আমাদের ধারণা মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আগামী দিনে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববাজারে যে পণ্যের দাম বেড়েছে, সেই পণ্য এখনও দেশের বাজারে আসেনি। সেগুলো যখন আসবে, তখন নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে।

অর্থনীতির তিনটি বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় তার প্রতিবেদনে বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, অন্যদিকে টাকার মূল্যমান কমে যাচ্ছে। যে কোনো অর্থনীতির ভেতরে সুদের হার, বিনিময় হার ও মূল্যস্ফীতির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। একদিকে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, আবার অন্যদিকে টাকার মান অবনমন হচ্ছে। যে প্রত্যাশায় সুদের হার কম রাখা হচ্ছে, সেই বিনিয়োগ কত বছরে বেড়েছে এমন কোনো তথ্য নেই। সুদের হার কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে- এমন সূত্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য নয়।

তিনি বলেন, এখন টাকার আমানতে গড় সুদের হার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা রাখলে প্রতি বছর প্রকৃত মূল্য দুই শতাংশ করে কমে যাবে। এটা বড় ধরনের সঞ্চয়বিরোধী। আগামীতে টাকার মান অবশ্যই নিম্নমুখী হবে। অবশ্যই সুদের হার বাড়াতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতিকে ধরে রাখতে হলে, মূল্যস্ফীতিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, তাদের আয় পণ্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে না।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ভেতরে বড় ধরনের টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। বিগত বছরে আমাদের আর্থিক যে আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে, তা সব সময়ই দুর্বল ছিল। দুর্বলতার লক্ষণ হচ্ছে আমাদের কর জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের ওপরে উঠেনি। একই সঙ্গে উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে পরিচালন ব্যয় বা অপারেটিং ব্যয় অনেক বেশি। দেশে কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা হলো- একদিকে অর্থের অভাব, অন্যদিকে সম্পদ থাকলেও তা যথোপযুক্তভাবে খরচ করতে না পারা।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকেই কমার ধারা শুরু হয়েছে। আমাদের বর্তমানে যে মজুত আছে, তা দিয়ে ৪ থেকে ৫ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত