চলে গেলেন ফুটবল সম্রাট পেলে
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শফিক কলিম
বিশ্ব ফুটবলের প্রথম মহাতারকা পেলের জীবনাবসান। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিন বারের বিশ্বকাপ জয়ী বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো পেলে প্রয়াত হলেন বিশ্বকাপের পরেই। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। ২০২১ সাল থেকে অন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্ত পেলে। কাতার বিশ্বকাপের সময় শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৯ নভেম্বর সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ২২ ডিসেম্বর ক্যানসারের প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যায়। ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে বাড়ি ফেরা হয়নি। বড়দিনে এ বছর হাসপাতালে কাটিয়েছেন পেলে। বিছানায় অসুস্থ বাবাকে জড়িয়ে ধরে ছবি গণমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন তার কন্যা কেলি। গত শনিবার হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন তার ছেলে এডিসনও। গত কয়েকদিন ধরে পরিবারের লোকেরা হাসপাতালে তার পাশেই ছিলেন। শেষ রক্ষা হলো না। ডাক্তাররা সুস্থ করে তুলতে পারলেন না ফুটবল সম্রাটকে। চিরনিদ্রার দেশে চলে গেলেন পেলে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পেলের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে কোলন ক্যান্সারসহ আগের সমস্যাগুলোর ফলস্বরূপ অনেকগুলো প্রত্যঙ্গ অকার্যকর হয়ে পড়া’কেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। পেলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে ফুটবল ও ফুটবলের বাইরের অসংখ্য ব্যক্তিত্ব। ‘ফিফা’ ম্যাগাজিনের পাঠক ও জুরি বোর্ডের বিচারে তিনি বিংশ শতাব্দীর ‘শ্রেষ্ঠ’ ফুটবলার। তবে ইন্টারনেটে সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের ভোট গিয়েছিল ডিয়াগো ম্যারাডোনার পক্ষে। ফিফা শেষ পর্যন্ত যুগ্ম ভাবে শতাব্দীসেরা ঘোষণা করে দু’জনকেই। ম্যারাডোনা ২০২০ সালে ৬০ বছর বয়সে প্রয়াত হন আচমকাই। দুই বছর একমাস তিন দিন পর পেলেকেও হারাল বিশ্ব।
ফুটবল ‘সম্রাট’ পেলের জন্ম ব্রাজিলের ত্রেস কোরাকোয়েসে, ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর। খেলোয়াড়ি জীবনে বলতে গেলে শুধু একটি ক্লাবের হয়েই খেলেছেন। সান্তোসের এক হাজারের বেশি গোল করেছেন এই কিংবদন্তি, জিতেছেন অসংখ্য শিরোপা। তার সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন অবশ্য জাতীয় দল নিয়ে। ১৯৫৭ থেকে ১৯৭১, এই ১৪ বছরের ব্রাজিল ক্যারিয়ারে তিনি দেশকে জিতিয়েছেন তিন তিনটি বিশ্বকাপ, যা যেকোনো ফুটবলারের জন্যই সর্বোচ্চ।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন পেলে সুইডেনের ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ে ব্রাজিল দলের হয়ে দারুণ ভূমিকার জন্য। তার ২১ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে ১৩৬৩ ম্যাচ খেলে রেকর্ড ১২৮১ গোল করেন পেলে। এর মধ্যে ব্রাজিলের হয়ে ৯২ ম্যাচে ৭৭টি আন্তর্জাতিক গোলও রয়েছে তার। মূলত তিন তিনবার বিশ্বকাপ জয় করার জন্য পেলে বিখ্যাত হয়েছেন। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড়- নারী কিম্বা পুরুষ- যিনি এতবার বিশ্বকাপ জয় করেছেন। ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপ জয় করেছেন এবং ২০০০ সালে ফিফা তাকে শতাব্দী সেরা খেলোয়াড় ঘোষণা করে। পেলের সুস্থতা কামনা করেছিলো দর্শকরা কাতার বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিল দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে খেলার সময়। তার কন্যা কেলি নাসিমেন্তো হাসপাতাল থেকে তার পিতার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ খবর ভক্তদের জানাচ্ছিলেন প্রতিনিয়ত সামাজিক মাধ্যমে। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকেই লিখেছেন, ‘আমাদের সব কিছুর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমরা তোমাকে সীমাহীন ভালোবাসি। শান্তিতে ঘুমাও’।
পেলের টুইটার অ্যাকাউন্টে বলা হয়েছে, ‘কিং পেলের যাত্রাপথে ছিলো প্রেরণা আর ভালোবাসাই, যিনি আজ শান্তিতে বিদায় নিলেন। ভালোবাসা, ভালোবাসা এবং চিরন্তন ভালোবাসা’। ব্রাজিলের ফুটবল ফেডারেশন বলেছেন সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের চেয়েও বেশি কিছু ছিলেন পেলে, ‘রাজা আমাদের নতুন ব্রাজিল উপহার দিয়েছিলেন এবং আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ, পেলে’। পেলের সাবেক ক্লাব সান্তোষ তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানের বিস্তারিত ঘোষণা করেছে। সোমবার সকালে তার মরদেহ হাসপাতাল থেকে ক্লাবের এস্তাদিও উরবানো কালদেইরা’য় আনা হবে, যেখানে মাঠের মাঝখানে কফিন রাখা হবে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। সাও পাওলোতে ছেলেকে দেখার জন্য পেলের মা সেলেস্টিকে অপেক্ষা করতে হবে সোমবার পর্যন্ত। তার পরেও ছেলেকে দেখতে পারবেন কি না বলা সম্ভব নয়। পেলের মা সেলেস্টি শয্যাশায়ী। তার পক্ষে উঠে কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। সে কারণে সোমবার পেলের মরদেহ তাঁর মায়ের বাড়ির সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সেলেস্টির মানসিক সমস্যাও রয়েছে, বোধ শক্তি হারিয়েছেন, পেলের মৃত্যুর খবর পেলেও বুঝতে পারবেন কি না স্পষ্ট নয়। মঙ্গলবার শোভাযাত্রা সহকারে পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে।