ঢাকা ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিএনপি-জামায়াতের গণমিছিল

সতর্ক পাহারায় ছিল আ.লীগ

সতর্ক পাহারায় ছিল আ.লীগ

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকায় গতকাল গণমিছিল করেছে বিএনপি-জামায়াত। বিএনপি-জামায়াতের গণমিছিলের দিন রাজধানীর ৯টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সতর্ক পাহারায় ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সহয়োগী সংগঠেনের নেতাকর্মীরা। বিএনপি-জামায়াতের যে কোনো ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলা রাজপথে প্রতিরোধ করার ঘোষণাও দিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। নেতারা বলেছেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাজপথে অবস্থান নিবে। আক্রমণ করলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য প্রতিবাদে রাজধানীর নয়টি স্থানে শান্তির সমাবেশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে বিভক্ত হয়ে টিমভিত্তিক প্রতিটি স্থানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

জানা গেছে, উত্তরায় অবস্থান নেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। মহাখালীতে অবস্থান নেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক, সুজিত রায় নন্দী, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান।

শ্যামলীতে অবস্থান নেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্মেদ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা।

কৃষিমন্ত্রী ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ফার্মগেটে অবস্থান নেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এসএম কামাল হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, প্রচার সম্পাদক ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

মিরপুর-গাবতলীতে অবস্থান নেন সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল আওয়াল শামীম।

মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর। রামপুরা, বাড্ডা ইউলুপে অবস্থান নেন শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেগম সামসুন্নাহার চাঁপা, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামেন অবস্থান নেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, তথ্যমন্ত্রী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

এদিকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে অবস্থান নেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, শিক্ষামন্ত্রী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী।

শ্যামলী স্কয়ার শপিং মলের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার আদর্শকে হত্যা করেছে। বিএনপি নষ্ট রাজনীতি করে। তারা রাষ্ট্রকে মেরামত নয়, ধ্বংস করতে পারে। সারা ঢাকায় আওয়ামী লীগ প্রস্তুত আছে। বিএনপির নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আমরা প্রস্তুত। ওদের রুখতে হবে, জঙ্গিবাদ রুখতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধীদের রুখতে হবে। তিনি বলেন, আজ বিএনপি বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি চায়, ভালো। ফখরুল ইসলাম তাদের বন্ধু। তাদের শুভাকাক্সক্ষী। তিনি অসুস্থ আমরা জানি না। বুদ্ধিজীবীরা বিবৃতি দিয়ে বলছেন, ফখরুল ইসলাম নাকি অসুস্থ। এ বাংলাদেশের যখন ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন কী আপনারা বিবৃতি দিয়েছিলেন? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় আপনাদের মুখের ভাষা কোথায় ছিল? আমি জানতে চাই কোথায় ছিল প্রতিবাদ, জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হলো, কোথায় ছিল আপনাদের প্রতিবাদ? আহসানউল্লাহ মাস্টারকে যখন প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় তখন কী প্রতিবাদ করেছিলেন?

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সার্বক্ষণিক লড়াই করে যাচ্ছে। এই লড়াই সংগ্রাম আমাদের চলবে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা সব সময় লড়াই করে আসছি। প্রতিনিয়ত, প্রতিক্ষণ আমরা লড়াই করছি। এদের মূল উপড়ে ফেলতে হবে। আন্দোলন-সংগ্রামের নামে বিএনপি-জামায়াত যদি মানুষের জান-মালের ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

এ সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, বিএনপির কর্মসূচি আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করি না। এটা বিএনপির ফাঁকা আওয়াজ। ১০ ডিসেম্বর শেষ পর্যন্ত গরুর হাটে গিয়ে সভা করতে হয়েছে। ঢাকার মানুষ তাদের পক্ষে নেই। হুংকার দিয়ে মাঠে থাকতে পারবে না। আমরা রাজপথে আছি। জনগণের জান-মাল রক্ষা করার পবিত্র দায়িত্বে আমরা রয়েছি।

যাত্রাবাড়ীর মোড়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচি থেকে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আওয়ামী লীগের শেকড় অনেক অনেক গভীরে। যারা আন্দোলন করে আমাদের উন্নয়নের গতি থামাতে পারছে না, শেখ হাসিনার সরকারের আগ্রযাত্রাকে আটকাতে পারছে না। মানুষের আর্থিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। মানুষ শেখ হাসিনার হাত ধরে এদেশকে আরও উপরে নিয়ে যেতে চায়।

উত্তরায় আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এ সময় তিনি বলেন, সরকারের যে অর্জনগুলো রয়েছে সে অর্জনগুলো আরো ব্যাপকভাবে মানুষের সামনে সামনে তুলে ধরতে হবে। দেশের জন্য এই ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ প্রচুর কাজ করেছে। এই কাজগুলোর সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে এবং আরো অনেকগুলো প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে, চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য দেশের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় নিয়ে আসতে হবে। এই কারণে বিরোধীদল আন্দোলনের নামে কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে যাবে সেটা কোনোভাবেই আমরা হতে দেব না। আমরা সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে থাকব। বিরোধী দলের তথাকথিত হিংসাত্মক, ধ্বংসাত্মক বা জানমালের ক্ষতি হয় এ ধরনের কর্মসূচি আওয়ামী লীগ খুব শক্তভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলা করবে।

এদিকে বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘সতর্ক পাহারায়’ ছিল ছাত্রলীগও। এ সময় সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান নিয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত