ঢাকা ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীতে কাঁপছে দেশ

* কনকনে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত * ঘন কুয়াশায় মহাসড়কে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট * সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়
শীতে কাঁপছে দেশ

দেশে শীতের প্রকোপ বেড়েছে। ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে কনকনে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। উত্তরাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় কুয়াশা পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো। ঘন কুয়াশায় দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। কুয়াশার কারণে মহাসড়কে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। নৌ চলাচলও বিঘ্ন ঘটেছে। কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি ভুগছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। সারা দেশে স্বল্প আয়ের মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোতে বেড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের ভিড়। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় ঠান্ডার কারণে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। মাঠে কাজ করা তো দূরের কথা, দুপুরেও কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে রাস্তাঘাট। চরাঞ্চলের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শীতবস্ত্র না থাকায় তাদের কষ্ট বেড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলেও কনকনে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার আগেই মানুষ ঘরে ফেরার তাড়া শুরু করে। বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়েছে শীতকালীন রোগ। এসব রোগে বেশির ভাগই আক্রান্তদের হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা।

ডিসেম্বরের শেষে জেঁকে বসে শীত। উত্তরাঞ্চলের জেলা দিনাজপুর, নীলফামারিসহ অন্তত ৬ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে সড়কের পাশাপাশি নৌপথে যানবাহন চলাচলে বেগ পেতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর নদী-তীরবর্তী এলাকায় কুয়াশা এত ঘন হয়ে থাকছে, যে দৃষ্টিসীমার ৫০০ মিটার দূরের কিছু দেখা যাচ্ছে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে শীত ও কুয়াশার এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের শেষে শীতের দাপট আরও বাড়তে পারে। কয়েকটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ আরও শক্তিশালী হবে। কুয়াশা আরও ঘন হয়ে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে জীবনযাত্রায়। শীতের প্রকোপ বাড়ায় ছিন্নমূল মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ কিছুটা কমেছে। তাদের দৈনন্দিন জীবনে আয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে। শীতের প্রকোপে শীতজনিত রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বেশকিছু জেলায় শীতল আবহাওয়া এবং শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাত ও সকালে শীতের মাত্রা বাড়লেও দিনের বেলায় তাপমাত্র বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে পারে আরও কয়েক দিন । তবে চলতি মাসের শেষের দিকে শীত বাড়তে পারে। গতকাল রোববার দেশের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ও শ্রীমঙ্গল ১০ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজার ও টেকনাফ ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নিকলি, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণার তাপমাত্রাও ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ছিল। তেঁতুলিয়া গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সেখানে গত ১৫ দিন থেকে তাপমাত্রা ১০ এবং ১২ এর মধ্যেই উঠানামা করছে। ধীরে ধীরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমছে।

রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বৃহস্পতিবার ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ছিল। আর গতকাল রাজধানীতে তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সন্ধ্যার পর শীতের তীব্রতা বাড়ায় রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় কাগজ ও প্লাস্টিক জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় অনেককে।

পঞ্চগড়ে কয়েক দিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ এর মধ্যে উঠানামা করছে। দিনের তাপমাত্রাও কমেছে, বাড়ছে শীতের প্রকোপ। দুইদিন ধরে ঘনকুয়াশায় ঢেকে আছে এলাকা। কনকনে শীতে দুর্ভোগে খেটে খাওয়া মানুষ। বিশেষ করে ভোর থেকে মাঠে কাজ করা শ্রমিকদের বেশি দুর্ভোগে পরতে হয়। প্রতিদিন বিকেলের পর থেকে শুরু হয় কুয়াশা। রাতভর বৃষ্টির মত কুয়াশা ঝড়ে। পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘনকুয়াশায় ঢেকে থাকে পুরো এলাকা। একই অবস্থা লালমনিরহাট এলাকায়। এই জেলায় কয়েক দিনের টানা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর ঘুন কুয়াশায় লালমনিহাটের ৫ উপজেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের তীব্রতা হু হু করে বাড়ছে। এই হাড় কাঁপানো শীতে তিস্তা তীরবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সাধুর বাজার, নিজ গড্ডিমারী, তালেবমোড়, দোয়ানী, ছয়আনী এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ কাজকর্ম না পেয়ে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে বাস-ট্রাকগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে।

রাজধানীর মতিঝিল এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত দুদিন ধরে রাতে বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। সারা দিন কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা হতে না হতেই শীতে প্রকোপ বাড়ছে। সন্ধ্যা হলেই গরম কাপড় ছাড়া বেরই হওয়া যাচ্ছে না। রাতে কুয়াশায় চারদিক ঢেকে যাচ্ছে।

মাতুইয়াইল মাতৃসদন হাসপাতালের চিকিৎসক লায়লা খাতুন বলেন, কয়েক দিন ধরে দিনে রোদ আর রাতে শীতের কারণে বিভিন্ন এলাকায় শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত সর্দি-কাশি এবং জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই আবার হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। তবে এমন সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। তিনি বলেন, হঠাৎ নেমে আসা এমন শীতে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে একটু বেশি সতর্ক হতে হবে। কোনোভাবে যেন ঠান্ডা না লাগে, সে জন্য সজাগ থাকতে হবে।ররাজশাহীতে ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১২টা। সূর্যের দেখা নেই। বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। গতকাল সারা দিন রাজশাহীর বাতাস এ রকমই শিশিরভেজা ছিল। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে দিনের অর্ধেক সময়জুড়ে ছিল প্রচণ্ড কুয়াশা। ওই সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাতি জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করেছে। ঘন কুয়াশায় মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত