নিষেধাজ্ঞার পরও অনাচারে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন

* নিষিদ্ধ ফানুসে রাজধানীর ৪ স্থানে অগ্নিকাণ্ড * মেট্রোরেল চলাচল বিঘ্নিত

প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচএম ফারুক

নানা নিষেধাজ্ঞার পরও রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে জমকালো আয়োজনে ফানুস, আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয়েছে থার্টিফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নতুন বছর-২০২৩। পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাল সাধারণ মানুষ। শনিবার ৩১ ডিসেম্বর বছরের শেষ দিনের সন্ধ্যার পর পরই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘড়ির কাঁটায় ১২টা বাজার আগেই শুরু হয় ভয়ঙ্কর শব্দে বর্ণিল আতশবাজি ও ফানুসসহ নানা আয়োজন। আর ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে দেখা যায় আতশবাজির বর্ণিল আলোকচ্ছটা ও লেজার শো। মধ্যরাতে ফানুসে পুরিপূর্ণ হয়ে উঠে রাজধানীর আকাশ। বহুতল ভবনের ছাদে ছাদে নেয়া হয় থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি। কিন্তু আনন্দের মাত্রা বাড়াতে যোগ হওয়া ফানুস ও আতশবাজিতে বিপত্তি ঘটে প্রতি বছরই। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আতশবাজি ফুটানো ও ফানুস     ওড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কর্তৃপক্ষ। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। ফানুসের আগুনে রাজধানীর ৪ স্থানে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে ফানুস পরে মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। অপরদিকে সন্ধ্যার পর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত আতশবাজি ও পটকার বিকট শব্দে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও বাসা বাড়িতে থাকা অসুস্থ রোগীরা অস্বস্থিতে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রোগীদের দৃষ্টিতে অনাচারে পালিত হয় এ উদযাপন।
এমনকি রাজধানী জুড়ে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন ও ইংরেজি নববর্ষ বরণে পুলিশ নানা বিধিনিষেধ আরোপ করলেও তা উপেক্ষিত হতে দেখা গেছে। রাজধানীতে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ফানুস ওড়ানোর ফলে চার স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। তবে বৈদ্যুতিক তারে ফানুস পড়ে আগুন লাগায় আদাবর এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পুরো এলাকা ব্ল্যাকআউট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাত ১২টার পর রাজধানীতে এসব ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফানুস ওড়ানোকে কেন্দ্র করে চার স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি পুরান ঢাকার লালবাগ, তেজগাঁও ও অপরটি দুটি সদরঘাট ও মোহাম্মদপুর এলাকায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ছুটে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা জানান, পুরান ঢাকার সদরঘাটের হকার্স মার্কেটের ছাদে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে পাশের ভবন থেকে ওড়ানো একটি ফানুস পড়ে আগুন ধরে যায়। পরে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থল যায়। তবে এর আগেই আগুন নিভে গেছে। অন্যদিকে লালবাগের একটি বাসার ছাদে আগুন লাগলেও তা কিছুক্ষণের মধ্যে নিভে যায়। অন্যদিকে মিরপুরে একটি ছোট আগুনের খবর তারা পেয়েছিলেন। তবে সেটি ফানুস থেকে আগুন লেগেছিল কি না তা জানাতে পারেননি। এছাড়া মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বহুতল ভবনে ফানুস থেকে আগুনের খবর পাওয়া গেছে। একই ঘটনা ঘটেছে তেজগাঁও এলাকার একটি ভবনেও।
তিনি জানান, মোহাম্মদপুরে আগুনটা বড় ছিল। কিন্তু দ্রুত ফায়ারের কর্মীরা সেখানে ছুটে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনায় দ্রুত নিভে যায়। এছাড়াও প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন অনেকে। এদিকে রাজধানীর আদাবর এলাকায় বৈদ্যুতিক তারে ফানুস পড়ায় আগুন লেগে যায়। এই ঘটনায় ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে  পড়ে। ফলে অন্ধকার হয়ে পড়ে পুরো এলাকা।
গত বছরও থার্টি ফার্স্ট নাইটে এই ফানুস ওড়ানোয় প্রায় ১০টি স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটে। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে এবার ডিএমপি ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। তবে নগরবাসী সেই নিষেধাজ্ঞার খুব একটা তোয়াক্কা করেনি। পুলিশকেও এ ব্যাপারে তৎপর দেখা যায়নি। পুলিশের সামনেই ফানুস ওড়াতে দেখা গেছে। এদিকে নববর্ষের প্রথম প্রহরে ওড়ানো ফাসুন মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক লাইনে আটকে যাওয়ায় গতকাল রোববার নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়নি মেট্রোরেলের যাত্রী পরিষেবা। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পরে লাইন চালু হলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হয় বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈদ্যুতিক লাইনে আটকে যাওয়া ফানুস অপসারণের পর মেট্রোরেলের স্বাভাবিক চলাচল শুরু হয়। গতকাল সকাল ১০টা ০৫ মিনিটে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে ডাউন লাইনে আগারগাঁও স্টেশনে এসে পৌঁছায় প্রথম ট্রেন। এরপর আগারগাঁও স্টেশন থেকে আপ লাইনে পুনরায় ১০টা ২০ মিনিটে উত্তরা উত্তর স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় মেট্রোরেল। ফানুস অপসারণ করার পর সকাল দশটায় অপেক্ষমাণ যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এরপর ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে কনকোর্সের আনপেইড এরিয়া থেকে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে যাত্রীরা।