গ্রেপ্তার ছয়জন ৫ দিনের রিমান্ডে
সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনা ছিল আলকায়দা মতাদর্শীদের
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জিহাদি সংগঠন আলকায়দার মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে সশস্ত্র জিহাদ করার পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেপ্তার ছয়জনের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন সৌদি প্রবাসী দলনেতা আব্দুর রব, সাকিব, শামীম হোসেন, নাদিম শেখ, আবছার ও সাইদ উদ্দিন। গতকাল সোমবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ (সিটিটিসি)। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রশিদুল আলম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত রোববার রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম ও টেকনাফ থেকে এই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়।
তদন্ত সংস্থা সিটিটিসির প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান গতকাল দুপুরে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গ্রেপ্তার আব্দুর রব সমন্বয়ক হিসেবে সবাইকে অনলাইনে একত্রিত করে শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন ও জিহাদ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। পরে অনলাইনে বিদেশে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি সহযোগীর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয় এবং অডিও-ভিডিও কলের মাধ্যমে তারা ভার্চুয়ালি যোগাযোগ স্থাপন করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয় বলেন- গ্রেপ্তাররা জানিয়েছেন তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইনভিত্তিক অ্যাপসে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দল গঠন করে। পরে স্থানীয় সহযোগীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে জঙ্গিবাদের জন্য টেকনাফে হিজরত করে অবস্থান করছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে অবস্থানরত ওই ব্যক্তি সবাইকে হিজরত করে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর সেই সদস্য লিবিয়ায় অবস্থানরত আরও এক বাংলাদেশি এবং টেকনাফের স্থানীয় একজনের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেন। সম্মিলিত আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় আব্দুর রব, শামীম, সাকিব, নাদিম, সাইদসহ অন্য যারা হিজরতে রাজি তারা প্রথমে টেকনাফ গিয়ে তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে ট্রেনিং নেবেন। পরে তারা বাংলাদেশে ইসলামী শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করবেন।
অনলাইন মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেন আব্দুর রব। পরে বিমানবন্দর থেকে বাড়ি না গিয়ে চলে যান জঙ্গি ক্যাম্পে। যে গ্রুপটি জিহাদি সংগঠন আল-কায়দার মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে সশস্ত্র জিহাদ করার পরিকল্পনা নিয়ে সংঘটিত হচ্ছিল সিটিটিসি এমটিই দাবি করেছে।
আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সবাইকে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সে অনুসারে গত ১৬ নভেম্বর সাকিব ও নাদিম টেকনাফ যায় এবং স্থানীয় সহযোগী ও গ্রেপ্তার আবছার তাদের টেকনাফে ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন।
গ্রেপ্তার আব্দুর রব ছুটি না পাওয়ায় যথাসময়ে দেশে আসতে ব্যর্থ হলে তারা টেকনাফের বাসায় অবস্থান করে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। গত ২২ নভেম্বর আব্দুর রব দেশে এলে তার সহযোগী শামীম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে রিসিভ করে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের অন্য সহযোগীর ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থানকালে তাদের মধ্যে বিভিন্ন শলাপরামর্শ হয়। দুই দিন পর তারা দুইজন গ্রেপ্তার সাকিবদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
আল-কায়দার সঙ্গে গ্রেপ্তার জঙ্গিদের কোনো যোগাযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, আল-কায়দার সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। গ্রেপ্তার জঙ্গিরা আল-কায়দার মতাদর্শ অনুসরণ করে। অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট দেখে তারা মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
কে এই আব্দুর রব?
জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টতায় গ্রেপ্তার আব্দুর রব একজন কোরআনের হাফেজ এবং কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। ২০১৯ সালের জুনে সৌদি-আরব যান। সেখানে একটি মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি হেফজ শিক্ষা দিতেন। সৌদিতে অবস্থানকালে তিনি অনলাইনে বিভিন্ন জিহাদি পোস্ট ও ভিডিও দেখে জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত হন। অনলাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের একটি ভিডিও কমেন্টের সূত্র ধরে সাঈদের সঙ্গে তার পরিচয়। একইভাবে শামীম, সাকিব, নাদিমসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়।