ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীতে বিদ্যুতে স্বস্তি

শীতে বিদ্যুতে স্বস্তি

বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়ায় গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং দিতে হয়েছে। তবে শীতের মৌসুমে লোডশেডিংয়ের চিত্র পাল্টে গেছে। তাপমাত্রা নামতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসি ও ফ্যানের ব্যবহার কমেছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা কমায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। যেখানে গরমের মৌসুমে দৈনিক সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে সেখানে শীতে এসে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য মতে, দেশে বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট। তবে শীতের মৌসুমে দৈনিক ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। এ বিপুল পরিমাণ উৎপাদন সক্ষমতার বিপরীতে চাহিদা অনেক কম। কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এসেছে। গত ১৫ ডিসেম্বর পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত ১৩ হাজার ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, পিডিবি এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছে।

২০১০ সালে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের উদ্যোগে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিমিটেডের মধ্যে ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শীত পুরোদমে পড়া শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াম। এই শীতে বিদ্যুৎ বিভাগে স্বস্তি ফিরেছে। লোডশেডিং নিয়ে সাধারণ মানুষের যে ক্ষোভ-কষ্ট, তা কেটে গেছে।

গত অক্টোবর মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, গ্যাস আমদানি করতে না পারায় আগামী নভেম্বর মাসের আগে বর্তমান লোডশেডিং পরিস্থিতির কোনো উন্নতির আশা নেই। পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ না থাকায় সরকারকে কিছু পাওয়ার প্ল্যান্ট বিকল্পভিত্তিতে ব্যবহার করতে হয়েছিল। ফলে ঢাকা ও এর আশপাশে দিনে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হতো। প্রতিমন্ত্রীর সেই আশ্বাসে নভেম্বরের পর দেশে লোডশেডিং নেই বললেই চলে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, শীতে বিদ্যুতের উৎপাদনের সক্ষমতার চেয়ে চাহিদা অর্ধেকে নেমেছে। গতকাল মঙ্গলবার ১২ হাজার ২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, সেখানে চাহিদা ছিল ৯ হাজারের কাছাকাছি। গরমের মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সেজন্য শীতের মৌসুমে কিছু কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় সরকারকে।

বরিশালের বরগুনায় ৩০৭ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজও শেষ। চট্টগ্রামের কয়লাভিত্তিক এস আলমের ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটে মোট ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। এটির ৬৬০ মেগাওয়াট ইউনিটটি এ বছরেই উৎপাদনে আনতে চায় এস আলম। তবে পিডিবি আগামী গ্রীষ্ম থেকে এটি উৎপাদনে আনার কথা ভাবছে।

জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশে নতুন যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলো যোগ হলে পরিস্থিতি আরো উন্নতি হবে। চলতি বছরে বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে। আমদানি করা কয়লা ও এলএনজির মাধ্যমে বিপিডিবি বিদ্যুৎ পাবে। এ সময়ে ছোট ছোট মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে যাবে।

শীত শুরু হওয়ার পর সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমছে। দেশে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের দরকার পড়ে শুধু এসি যন্ত্রের পেছনে। এই এসি চালু করার দরকার না হলে এ পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। সরকারের নীতিনির্ধারকরা দাবি করেছিলেন, নভেম্বর থেকে সারা দেশে লোডশেডিং থাকবে না। তবে নভেম্বর মাসে কিছুটা লোডশেডিং থাকলেও ডিসেম্বর মাসে শীতের কারণে লোডশেডিং দেয়ার প্রয়োজন হয়নি বিদ্যুৎ বিভাগের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত